ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘নিষিদ্ধ’ অ্যালবামের জন্য আমাকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে: মাকসুদ

রায়হান কবির   || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ১৮ মে ২০২১   আপডেট: ১৪:৪২, ১৮ মে ২০২১
‘নিষিদ্ধ’ অ্যালবামের জন্য আমাকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে: মাকসুদ

নব্বই দশকে জোয়ার আসে এ দেশের ব্যান্ড সংগীতে। তরুণদের মনে দারুণ রেখাপাত করে ব্যান্ডের গান। একে একে উঠে আসে অনেকগুলো ব্যান্ড দল। দেশের ব্যান্ডগুলো সোনালি সেই সময় হারিয়ে ফেলেছে। এর কারণ জানতে ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ ব্যা ন্ডের প্রতিষ্ঠাতা মাকসুদুল হকের মুখোমুখি হয়েছেন রায়হান কবির।

রাইজিংবিডি: দেশে ব্যান্ড সংগীতের বর্তমান অবস্থা কী বলে মনে হয়?

মাকসুদ: নব্বই দশকের সঙ্গে এখনকার তুলনা করা কঠিন। তখন আমাদের কিছু সুবিধাও ছিল, আবার অসুবিধাও ছিল। তখন কিন্তু ব্যান্ড সংগীত এতো সংগঠিত ছিল না। আমরা যা করেছি নিজের চেষ্টায় করেছি। এখন ব্যান্ডের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। হেভি রক, মেটাল থেকে শুরু করে জ্যাজ, ফিউশন যাবতীয় ব্যান্ড আসছে। তারপরও আমি বলবো, ব্যান্ড সংগীত যে এখন কোথায় আছে আমি নিজেও বলতে পারবো না। কারণ, এখন মানুষ গান কোথায় শুনছে? ডিভাইসে শুনছে, ফোনে শুনছে, হেডফোনে শুনছে- সুতরাং কে কী পছন্দ করছে তুলনা করা কঠিন। আগে বাজার ছিল, বাজার থেকে জানতে পারতাম মানুষ কোন গান শুনছে। সেখান থেকে এনালাইসিস করা যেত।

রাইজিংবিডি: এখন একটা মাপকাঠি হচ্ছে ইউটিউবের ভিউ।

মাকসুদ: এখন যেভাবে সংগীত হচ্ছে, এভাবে লাইক গুনে জনপ্রিয়তায় আমি বিশ্বাসী নই। এগুলো পয়সা দিয়ে কেনা যায়; অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাই হচ্ছে। কিছু ভিউ হলেই যে শিল্পী হওয়া যায় ব্যাপারটা তা নয়। নিম্ন মানের কিছু জিনিসও কিন্তু কোটি কোটি ভিউ পাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের মতো শিল্পীরা দূর থেকে দেখে দুঃখপ্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।

রাইজিংবিডি: ‘জলসা’ নামক বিটিভির একটি অনুষ্ঠানে প্রয়াত ঢাকার মেয়র আনিসুল হক আপনাকে প্রশ্ন করেছিলেন- অভিযোগ আছে ব্যান্ড সংগীত তরুণ প্রজন্মকে উশৃঙ্খল করছে। এ ধরনের নানা সামাজিক প্রতিকূলতার পরেও কিন্তু ব্যান্ড সংগীত একটা উচ্চতায় চলে গিয়েছিল। আপনাদের পরের প্রজন্ম কি তা ধরে রাখতে পেরেছে বলে মনে করেন?

মাকসুদ: আমাদের সময় যারা শ্রোতা, মাথায় রাখতে হবে তারা কিন্তু এখন চল্লিশের উপরে। আমি মনে করি, আমরা ওই ২-৩ প্রজন্মের জন্য গান করে এসেছি। আমাদের সেই সময়ের গানগুলো মানুষের মনে গেঁথে গেছে। কারণ তখন মানুষ গান শুনতো। এখন মানুষ গান দেখে। সংগীত অনেকটা রেডিও আর টেলিভিশনের পার্থক্যের মতো। মানুষ গান যখন শোনে তখন মস্তিষ্কে শত শত রকমের চিন্তা ভেসে আসে। আর ইউটিউব বা টেলিভিশনে মানুষকে যা দেখানো হয় সেটাই দেখতে হয়। মস্তিষ্ক তখন নিজের মতো করে চিন্তা করতে পারে না। বলা যায়, ইন্টেলেকচুয়াল ইস্টিমুলেশন বা বুদ্ধির যে চর্চা; সেটা থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে গান শোনার বা দেখার নতুন ধারার কারণে।

রাইজিংবিডি: আপনি জীবনমুখী বা প্রতিবাদী গান গেয়েছেন। এখনও সে ধরনের গান করার তাগিদ অনুভব করেন কিনা?

মাকসুদ: তাগিদ অনুভব করি না। কারণ অপ্রাপ্ত বয়স্কের নিষিদ্ধ অ্যালবামের পর ১৯৯৬ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত আমার ওপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে। এটা আমি পাবলিকলি কোথাও বলিনি। কাছের যারা জানে, তাদের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে! বলেছে, মাকসুদ ভাই কীভাবে বেঁচে আছেন! একটি মহল তখন অ্যালবামটি সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। সত্য মানুষ সহজভাবে গ্রহণ করতে চায় না। তাই এ ধরনের গানের জন্য আমাকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। এই অ্যালবামের জন্য আমার শো কমে গিয়েছিল। এটা যে শুধু বাইরের লোকেরা করেছে তা নয়, যারা আমাদের সঙ্গে গান করেছে তারাও বলেছে- মাকসুদকে নেয়া যাবে না। এভাবে আমাকে কোণঠাসা করা হয়েছে। উগ্রবাদ, মৌলবাদ এগুলোর উত্থান হয়েছে, আমার গানে এক সময় এগুলোর ইঙ্গিত দেয়া ছিল। এমনকি রাজনৈতিক চরিত্র যে পাল্টাচ্ছে সেই ইঙ্গিতও কিন্তু আমার গানে ছিল।

রাইজিংবিডি: আপনার কি মনে হয় বর্তমানে ভালো গীতিকারের অভাব রয়েছে?

মাকসুদ: আমি গীতিকার নির্ভর শিল্পী না। ব্যান্ড সংগীতের ধারা হচ্ছে অধিকাংশ ব্যান্ড নিজেদের গান নিজেরাই লেখে। ব্যান্ড সংগীত একটা সমন্বয়। একটা গান হচ্ছে কথা, সুর ও সংগীত। আজকাল মানুষ গান লিখেই বলে- আমি গান করেছি। আপনি বলতে পারেন- আপনি গীতিকার। আপনি একা গান করলেন কীভাবে?

রাইজিংবিডি: আপনি বাউল শিল্পীদের সঙ্গে থেকেছেন। এখনকার প্রজন্ম গানের জন্য এই সময়টা দিতে পারছে না কেন? 

মাকসুদ: বাউল গান হচ্ছে গান এবং জ্ঞান। আপনি যদি গানের অন্তর্নিহিত অর্থ ধরতে না পারেন তাহলে সে গান গেয়ে লাভ নেই। তাহলে তো আপনি চাইনিজ গানও গাইতে পারেন। আমি যখন এই কাজে নামলাম তখন দেখি এটা ব্যাপক জিনিস। তাদের লাইফ স্টাইল আত্মস্থ করে পরে তাদের গান গাওয়ার চেষ্টা করলাম। বাউলের কাছে গিয়েই যদি আপনি বলেন, আমাকে এই গানের অর্থটা বোঝান, সে বোঝাবে না। কারণ সে জানে আপনি অন্য কাজে এসেছেন, আপনি যদি তাকে শ্রদ্ধা না করেন, সে যদি আপনাকে বিশ্বাস না করতে পারে তাহলে আপনাকে সে কিছুই বলবে না। এখনকার শিল্পীরা অনেকেই হয়তো অর্থ না বুঝেই বাউল গান করে। গানের প্রতি যদি ভক্তি না থাকে তবে আপনার সে কাজ করা উচিত না। 

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়