ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

কখনো কি এমন অসভ্য মন্তব্য শুনেছেন?

শাহনাজ খুশি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৬, ৩০ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ১৭:৫১, ৩০ মার্চ ২০২৩
কখনো কি এমন অসভ্য মন্তব্য শুনেছেন?

একটা উপজেলা শহর থেকে যখন ঢাকায় এসেছি, ঢাকার নানান অঙ্গনের মানুষকে দেখেছি। তারা কোনো না কোনোভাবে আমার চেয়ে সমৃদ্ধ! একটা চায়ের কাপ ধরা, একটা সভাস্থলে নীরবতায় বসা, একটা কথা শুরু করার ম্যানারস সব শিখতে হয়। এগুলো পাঠ্য বইয়ের মতোই অতীব গুরুত্বপূর্ণ। 

থিয়েটারে যুক্ত হয়েছি, দেখেছি এ এক শিক্ষার সাগর। সেখানে শুধু নাটক শেখানো নয়, দেশ তথা দেশের বাইরের প্রখ্যাত গুণীজনের জীবনবৃত্তান্ত, সংগ্রাম, জীবনের সৌন্দর্য নিয়ে চলেছে বিস্তর আলাপ। দিন-রাতের কোনো হিসাব থাকে নাই…। প্রতি মুহুর্তে গ্রহণ করেছি সে বিদ্যালয় থেকে। এসব কিছু জানতাম না কেন, সে লজ্জায় নত থেকেছি। জানতে পারার গৌরবে বিনয়ী হয়েছি। জীবনের পরিমিতিবোধ শিখেছি, যে পরিমিতিবোধ সকল চরিত্র রূপায়নে বড় বোধের জোগান দিয়েছে। বিনীত করেছে সৃষ্টির পায়ে।

যা আমি জানি না, তা শেখার জন্য জানা মানুষের অপেক্ষা করেছি প্রেমের মতো করে। এখন কিছু জানার দরকার হয় না মামুন (মামুনুর রশীদ) ভাই। কিছু না জানা মানুষগুলো, জানা মানুষকে হিংসাত্মক প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলছে। সে প্রতিপক্ষের জিঘাংসা কত নোংরা হতে পারে, তা আজ দুইদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে, যা বাকরুদ্ধ করে দেয়! 

মামুন ভাই, আপনার হাতে তৈরি এ সাংস্কৃতিক অঙ্গন আলোকিত করা কত শিল্পী! কত না জানার জন্য, ভুলের জন্য আপনি সবাইকে বকেছেন, রাগ করেছেন! সে জন্য কেউ হয়তো থিয়েটারে আসেনি, অভিমান করেছে, দল ভেঙে নতুন দলও তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই কুৎসিত এবং উদ্ধত্যপূর্ণ বিমাতাসুলভ কথা কি কখনো শুনেছেন?

হলভর্তি মানুষের মুহুর্মুহু করতালি পেয়েছেন, শহিদ মিনারের পাদদেশে অসীম নীবরতায় আপনার বক্তব্য শুনেছে মানুষ, সকল অসামঞ্জস্য নিয়ে সরকারের প্রতিও কত তীক্ষ্ম বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কখনো কি এমন অসভ্য মন্তব্য শুনেছেন? শুধু রুচির নয়, বিবেকের বিকলাঙ্গতা কতটা, তা কি আর বলবার দরকার আছে?

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের তুখোড় আপনাকে টিকটকের ভাঁড়-জনকদের তুলনায় দাঁড় করিয়েছে যারা, তারাও তারই অনুসারী। শিল্প দিয়ে শিল্পীর প্রতিযোগিতা করা যায়, যাদের সে সঞ্চয় নাই, তারাই নীচতায় হরিলুট শুরু করে। সুন্দর কিছু শুরুর আগে কুৎসিত কিছু কালক্ষেপন হয়, এটা নিশ্চয় তেমন সময়। বাংলাদেশের এত সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ধারক-বাহক অথবা উদাহরণ নিশ্চয় এরা হতে পারে না।

যারা আপনার ব্যক্তিজীবন অতি কথ্য দিয়ে আপনাকে হেয় করতে চেয়েছে, সেটা তাদের দীনতা এবং ব্যর্থতার আক্রোশ। শিল্পী এবং শিল্পকে মোকাবেলা করতে শৈল্পিক কথা, যুক্তি বা আচরণই লাগবে, এটা তারা জানে না। তাদের এ দীনতাকে ক্ষমা করবেন আপনি। ভাগ্যিস আপনি কোনো সরকারি মন্ত্রণালয় কিংবা টিভি চ্যানেলে কোনো সরকারের আনুকুল্য প্রতিষ্ঠানে নাই এবং কোনোদিন ছিলেনও না। যদি সেটা থাকতেন, তাহলে কি বলতো এই মন্তব্যকারীরা?

সত্তর ঊর্ধ্ব, প্রায় আশির কাছাকাছি একজন নাট্যপ্রাণ মানুষ, যে তার একটা জনম বিলিয়ে দিয়েছে নাটক, শিল্পের জন্য। বিনিময়ে উল্লেখ করবার মতো কিছুই নেয়নি কখনো। এখনো এই বয়সে তাকে সংসারের জন্য অভিনয় করতে হয়, লিখতে হয়, এই শিল্প থেকে কিছুই সঞ্চয় করেনি বলেই তার অসুস্থতায় আমরা তার শিল্প সন্তানরা তার হাত ধরে পাশে দাঁড়িয়ে যাই। তার তুলনা এবং মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে এ কোনো অশৈল্পিক দুর্বৃত্ত অন্ধকার? আমাদের কবে কোনো মোহে এত বিবেক এবং রুচির বিকালাঙ্গতা হল! আপনার সন্তানদের আপনি বরাবরের মতো, নিজ গুণে ক্ষমা করবেন মামুন ভাই!

 

লেখক: অভিনয়শিল্পী

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়