‘আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে প্রশ্ন উঠবে’
শাহরিয়ার নাজিম জয়
আলোচিত অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়। তার এই পরিচয় এখন খানিকটা আড়ালেই পড়ে গেছে। কারণ বিতর্কিত সঞ্চালক হিসেবে লাইমলাইটে থাকেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভীষণ সরব জয়। এই মাধ্যমে সমকালীন নানা বিষয় নিয়ে নিজের মত প্রকাশ করতে দেখা যায় তাকে। বুধবার (২০ আগস্ট) দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী একটি পোস্ট দিয়েছেন জয়; যা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
জয় তার লেখার শুরুতে বলেন, “বিদেশের মাটিতে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে দেখলাম ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যারকে ভদ্রলোকরা দুর্দান্ত পছন্দ করছেন। বিএনপিকে আগামীতে ক্ষমতায় দেখতে চাচ্ছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগকে বাদ রেখে ইলেকশন চাচ্ছেন না। তাদের বক্তব্য, আওয়ামী লীগের যতই দোষ থাকুক একটা বিশাল শ্রেণির জনগণ আওয়ামী লীগের সাপোর্টার তাদেরকে বাদ রেখে ইলেকশন করলে সেই ইলেকশনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আসবে এবং ভবিষ্যতে বিভক্তি আরো বেশি তৈরি হবে। এনসিপি, জামাত এবং অন্যান্য দলসহ অন্তত ১০০ আসনে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে দেখতে চাচ্ছেন।”
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন জয়। তার ভাষায়, “পাশাপাশি প্রবাসীরা দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের ভাষায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ইউনুস সরকারের হলেও একটি উল্লেখযোগ্য জনগণ ইউনুস সরকারকে সাপোর্ট করছেন না যে, কারণে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এ ক্ষেত্রে তারা ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে আরো সময় দিতে চাচ্ছেন। সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তারা কিছুটা কনফিউজড এবং এনসিপির প্রতি মানুষের অনেক বেশি মমতা কারণ এত বড় একটি ঘটনা ফ্রন্টলাইনে থেকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের দল এনসিপি। তাদের সঠিক মূল্যায়ন হোক এটা অনেকেই চাচ্ছে। আবার অনেকেই এর ঘোর বিরোধী। তাদের কার্যকলাপ এবং কথা বলার ধরণের কারণে অনেকে বিরক্ত।”
রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনা করে জয় বলেন, “শুধু আওয়ামী লীগ বিরোধী ক্যাম্পেইন করে সংসদ সদস্য হওয়া কঠিন—এ কথা অনেকে বলছে। অন্যদিকে জামাতের ভূমিকাকে অনেকেই প্রশংসা করছে, তাদের কথা এবং কার্যকলাপ প্রশংসিত হচ্ছে শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধের বিষয়ে তাদের ব্যাপারে একটা বিশাল কনফিউশন রয়ে গেছে, সেটার ফলাফল কি হয় সেটা বোঝা যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বক্তব্যে সকলে সন্তুষ্ট। কিন্তু বিএনপির কর্মীদের কার্যকলাপে অনেকে অতিষ্ঠ। এখানে একটি বড় গ্যাপ রয়ে গেছে। যেখানে তারেক রহমান সাহেব বলছেন, প্রতিশোধ নয় প্রতিরোধ নয়; সেখানে তাদের কর্মীরা প্রতিশোধ এবং প্রতিরোধের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে এটা হাই কমান্ডের নীতির বহির্ভূত। এই অতি উৎসাহী কর্মীদের থামানোর কোনো রাস্তাও কারো জানা নাই। ইলেকশনের পূর্বেই যদি হাই কমান্ডকে তারা ইগনোর করে ইলেকশনে জিতলে তাদের ভূমিকা কি হবে সেটা অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ।”
পুরো স্ট্যাটাসটি জয়ের নিজস্ব বিশ্লেষণ দাবি করে তিনি বলেন, “এই লেখাটা সামগ্রিকভাবে আমার বিশ্লেষণ। আমি একটা বোকা লোক এবং মূর্খ লোক আমার বিশ্লেষণকে সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নাই। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমার গণতান্ত্রিক অধিকার আমি এই লেখার মাধ্যমে প্রয়োগ করলাম। কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে আমি ক্ষমা চাই। তবে আমার লেখা থেকে হয়তো যারা বুদ্ধিমান তারা ভালো অংশটুকু গ্রহণ করে এটাকে কাজে লাগিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।”
জয়ের রাজনৈতিক মতামতের সঙ্গে নেটিজেনদের একাংশ একমত পোষণ করেছেন। অন্য অংশ দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। রাসেল আহমেদ নামে একজন লেখেন, “সবগুলো কথা যুক্তিসঙ্গত, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।” তুহিন লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।”
তবে তাদের বক্তব্য নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করে হৃদয় আহমেদ রানা লেখেন, “আওয়ামী লীগ যেভাবে দেশের অধিকাংশ দলকে ৪টা নির্বাচন দূরে রাখছে, আওয়ামী লীগকে ৪ বার দূরে রাখতে হবে, প্রয়োজন হলে আইনের মাধ্যমে করা দরকার, তখন শিক্ষা হবে। আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের মানুষকে গুম-খুন, নির্যাতন আর লুটপাট করে অবশেষে গণহত্যা চালিয়ে পলায়ন করেছে।”
জয়কে উদ্দেশ্য করে ইসমাইল নামে একজন লেখেন, “এটা একদম ক্লিয়ার, আপনি আওয়ামী লীগের কথা বলতেই এত কিছু ঘুরিয়ে পেচিয়ে লিখছেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া যা বলার বলেন সমস্যা নাই। আওয়ামী লীগ একটা সন্ত্রাসী সংগঠন এরা সুযোগ পাইলে দেশ আর দেশ রাখবে না।” দেলোয়ার লেখেন, “এরাই ভিতরে ডুকে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চাচ্ছে!” জয়ের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে লাবিব লেখেন, “তাহলে আওয়ামী লীগ কীভাবে বিএনপিকে ছাড়া দুবার নির্বাচন করেছিল?”
এমন অসংখ্য মন্তব্য কমেন্ট বক্সে ভেসে বেড়াচ্ছে। পাশাপাশি কেউ কেউ জয়কে কটাক্ষ করেও মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ তাকে ‘দালাল’ বলে মন্তব্য করেছেন। অনেকে আবার বলছেন—“তুমি ফ্ল্যাটের আশা এখনো ছাড়নি বুঝি?”
ঢাকা/শান্ত