ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ডিজিটাল মার্কেটিং: ঝুঁকি ও সম্ভাবনা

মাইনুল ইসলাম তুহিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০  
ডিজিটাল মার্কেটিং: ঝুঁকি ও সম্ভাবনা

পণ্য বা সেবাগুলোকে বিজ্ঞাপনসহ বাজার গবেষণার মাধ্যমে বিক্রি করার প্রক্রিয়াকেই মার্কেটিং বলে। আর ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে ডিজিটাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে অনলাইন/ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার বিক্রয় কাজ পরিচালনা করা।

বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ব্যাপক ব্যবহার হলেও আমাদের দেশে এখনও চাহিদা কম। ডিজিটাল মার্কেটিং প্রয়োগের মাধ্যমে নতুন ভোক্তা তৈরি করা এবং প্রতিযোগীদের সঙ্গে সহজেই প্রতিযোগিতা করা যায়, এমনকি জেনারেল মার্কেটিংয়ের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কাজ করা সম্ভব।

সম্প্রতি ডিজিটাল মার্কেটিং খাতের অবস্থান কোন দিকে যাচ্ছে তার সম্ভাবনা ও ঝুঁকি নিয়ে লিখেছেন- রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলাম তুহিন।

এখন তথ্যপ্রযুক্তির সময়। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, পড়াশোনা সবকিছু এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির সঙ্গে। সময়ের পরিবর্তনে সবকিছুই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। আর এ তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আমরা যে কোনো কাজ খুব সহজেই করতে পারছি।

আর সেই সঙ্গে আমরাও সময়ের নিজেদের মিলিয়ে নিতে পারছি। যেমন- আগে আমাদের কোনো পণ্য ক্রয় করতে হলে বাজারে-মার্কেটে যেতে হতো। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কল্যাণে এখন আমরা ঘরে বসেই নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারি খুব সহজেই। এর জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। 

ডিজিটাল মার্কেটিং করার জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে। বিশেষ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে অপরিহার্য-

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন: সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা SEO মূলত গুগল, ইয়াহু বিং বা অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিন অনুসন্ধান ফলাফলগুলো পর্যালোচনা করে থাকে। আজকের প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্যের মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে এসইও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

এসইওর মাধ্যমে আপনার পণ্যকে গুগল সার্চের সবচেয়ে ওপরে নিয়ে আসবে, তাহলে আপনার পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধি পাবে। কারণ বর্তমানে মানুষ কোনো পণ্য কেনার আগে গুগল থেকে সার্চ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। গুগল তার তথ্যগুলো নিয়মিত আপডেট করে।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং: আমরা অনেক ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি, যেমন- Facebook, Twitter, Instagram। এই সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমরা একজন অন্যজনের সঙ্গে বা একজন অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার্থে এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে থাকি।

এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কাজে লাগিয়ে মার্কেটিং করা বা যে পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা প্রচারণা করি তাকেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলে। সোশ্যাল মিডিয়া মারকেটিং দুই প্রকার। Paid Marketing (টাকা দিয়ে পেজ অথবা গ্রুপকে প্রমোট করে)। Free Marketing (পাবলিক গ্রুপ ও পাবলিক পেজ এ পোস্ট অথবা কমেন্ট এর মাধ্যমে)।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের এমন একটি পদ্ধতি বা সিস্টেম যেখানে আমাদের নিজেদের কোনো প্রোডাক্ট নেই, আপনি সেখানে অন্য কোনো ব্যক্তি বা তাদের ওয়েবসাইট থেকে প্রোডাক্ট নিয়ে নিজের ওয়েবসাইট বা পেজ এনে প্রমোট করবেন এবং কেউ যদি আপনার প্রমোট করা লিংক বা ব্যানার থেকে ক্লিক করে ওই প্রোডাক্টটি ক্রয় করে তাহলে আপনি সেখান থেকে কিছু টাকা কমিশন হিসেবে পাবেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে রাতারাতি অনেক আয় করা সম্ভব নয়। ধৈর্যসহকারে কাজ করে যেতে পারলে সফলতা আসবে।

কন্টেন্ট মার্কেটিং: কন্টেন্ট বলতে আমরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ব্লগ পোস্ট, ভিডিও, ই-বুক ইত্যাদিকে বুঝে থাকি। আমরা যখন অনলাইনে কোনো Content নিয়ে মার্কেটিং করি তখন তাকে Content মার্কেটিং বলে।

অনলাইনে মার্কেটিংয়ের জন্য কনটেন্ট তৈরি: Web Page Blog Post Podcast Slide PDF, E-Book, Book Image Video ইত্যাদি। Content এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য অবশ্যই Content তৈরি করতে হবে। এমনকি Search engine optimization, Social Media marketing সব জায়গাতেই Content প্রয়োজন। Content ছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং অসম্ভব।

ভাইরাল মার্কেটিং: বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ, এ যুগকে ভাইরাল যুগ বলেও হাস্যরস করতে শোনা যায় প্রায়ই। আপনি যেই সেক্টরেই থাকুন না কেন, আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে ভাইরাল মার্কেটিং ও কনটেন্টের গুরুত্ব অপরিসীম। এ ভাইরাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ছবি বা লেখাকে প্রোমোট করতে তেমন খাটনি করার প্রয়োজন হবে না। মানুষই ভাইরাসের মতো কনটেন্টটি ছড়িয়ে দেবে।

এ ধরনের কনটেন্ট তৈরি ও প্রকাশ করার পর তার দিকে নজর রাখতে হয়, যেমন ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি প্রায় সব সোশ্যাল মিডিয়াতেই ইনসাইট বা অ্যানালিটিকস রয়েছে, যা দিয়ে আপনি একটি কনটেন্ট কতটা ভালো পারফর্ম করছে বা না করলে কী সমস্যার কারণে করছে না ইত্যাদি জানতে পারেন। ক্যাপশন, পোস্ট করার সময়, প্রিভিউ ইমেজ ইত্যাদির ওপরও অনেকাংশে ভাইরালিটি নির্ভর করে।

ইমেইল মার্কেটিং: ইমেইল মার্কেটিং হচ্ছে একটি অনলাইন মার্কেটিং পদ্ধতি, যার মাধ্যমে আপনি আপনার পণ্যের এবং সেবার প্রচার করতে পারবেন এবং আপনার সাইটের প্রচার করতে পারবেন। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছোট বড় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান এ পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের আয় বৃদ্ধি করছে। ইমেইল মার্কেটিং হলো ক্রেতাদের কাছে পণ্যের তথ্য পৌঁছানোর সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি।

ই-মেইল মার্কেটিংয়ের জন্য অবশ্যই বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বয়সের কিংবা বিভিন্ন ক্যাটাগরির মানুষের মেইল এড্রেস জোগাড় করতে হবে, যে পণ্যের মার্কেটিং করতে চান, সেটি নিয়ে ভালোভাবে গবেষণা করতে হবে, অন্য কোম্পানির একই পণ্যকে নিয়ে ও তাদের মার্কেটিং কৌশল নিয়ে গবেষণা করতে হবে। সবচেয়ে সহজভাবে আপনার পণ্যের গুণ বর্ণনা করুন আপনার মেইলে।

কোনদিকে যাচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং: বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ দুই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গুগল আর ফেসবুককে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিভিন্ন স্থানে নানা অভিযোগ আর কড়াকড়ির মধ্য দিয়ে পাড়ি দিতে হচ্ছে। দুই জায়ান্ট ভোক্তাপণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল এবং ইউনিলিভার ইতিমধ্যে অনলাইন বিজ্ঞাপন নিয়ে জালিয়াতির বড় অভিযোগ পেয়েছে। অনুপযুক্ত অনলাইন কন্টেন্টের সামনে বিজ্ঞাপন দেখানো হলে ব্র্যান্ডের সুনাম ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।

এ বিষয়টি বিপণনকারীদের হতাশও করে দিয়েছে, আর গ্রাহকদের লক্ষ করার ক্ষেত্রে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ আনতে তাদের উৎসাহ জোগাচ্ছে। অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান এ বাজারে নিরাপত্তা নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দরকারও তৈরি হচ্ছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক মাধ্যম, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা অ্যামাজনের অ্যালেক্সার মতো ভয়েস অ্যাকটিভেটেড অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে সরাসরি ভোক্তাদের লক্ষ করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ দিচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং বা ‘মারটেক’।

ফলে এ খাতের চাহিদাও বাড়ছে। ‘প্ল্যাটফর্ম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিপণনকারীদের জন্য ‘ওয়ান-স্টপ’ শপিং ব্যবস্থা আনছে, যা দেখার মতো আরেকটি ‘ট্রেন্ড’ হতে যাচ্ছে এমনটাই গবেষক ডেমিয়েন রায়ানের গবেষণায় উঠে এসেছে।

মূলত ব্র্যান্ডগুলো সংস্থাগুলোকে ডেটা দিয়ে বিশ্বাস করতে পছন্দ করে না। স্পষ্ট যে রীতি দেখা যাচ্ছে, তা হচ্ছে ব্র্যান্ডগুলো বিপণন প্রযুক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছে।

লেখক: তরুণ উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ। 

ঢাকা/রুহুল/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়