জলবায়ু পরিবর্তন ও সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ে ওশির সংবাদ সম্মেলন

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবিলায় ট্রানজিশন উদ্যোগ গ্রহণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর ক্ষয়ক্ষতি প্রশমন ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করণীয় শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ ওশি ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
শনিবার (৫ নভেম্বর) সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোটার্স ইউনিউটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
এ সময় ওশির নির্বাহী পরিচালক আমিনুর রশিদ চৌধুরী জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবিলায় ট্রানজিশন উদ্যোগ গ্রহণ: ক্ষয়ক্ষতি প্রশমন ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করণীয় বিষয়ক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন।
আমিনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর এক মিটার বৃদ্ধি হলে দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল থেকে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ‘পরিবেশগত উদ্বাস্তু’ বাস্তুচ্যুত হবে এবং জনসংখ্যার একটি বড় অংশের কর্মক্ষেত্র, জীবিকা এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
তার ধারণাপত্রে তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা কার্যক্রমের একটি প্রধান অগ্রাধিকার ক্ষেত্র হিসেবে জাস্ট ট্রানজিশনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে নতুন কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা উন্নয়নকে অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে (এনএসডিএ) স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্লানে শ্রমিকদের দাবি বিবেচনা ও একীভূত করার জন্য ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সাথে সংলাপ শুরু করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ন্যায্য রূপান্তরের জন্য সামাজিক সংলাপ, দক্ষতা উন্নয়ন নীতি, পেশাগত স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং সামাজিক সুরক্ষা উদ্যোগ গ্রহণ ও নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
সংবাদ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যে হিসাবে বলা হয় আসন্ন আগামী ৬-১৮ নভেম্বর মিশরের শারম-আল-শেইখে অনুষ্ঠিতব্য ২৭তম জলবায়ু সম্মেলনের প্রাক্কালে জলবায়ু পরিবর্তন ও জাস্ট ট্রানশিজন বিষয়ে বিভিন্ন দাবি ও সুপারিশমালা পেশ করাসহ দেশের শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দক্ষতা ও পুনঃদক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে ওশি ফাউন্ডেশন ও এফইএস বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত কার্যক্রম সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরা।
ওশি তাদের ধারণাপত্রে ৭টি সুপারিশ তুলে ধরে। শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকায় জলবায়ুর প্রভাব প্রশমন ও জাস্ট ট্রানজিশন প্রতিষ্ঠায় ওশির সুপারিশসমূহ হচ্ছে- জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় স্থানীয় বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনসমূহের এ সংক্রান্ত নীতি, কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেওয়া; পরিবেশ বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও কর্মক্ষেত্রে এর প্রভাব এবং টেকসই কর্ম সম্পর্কে শ্রমিক ও ইউনিয়ন সদস্যদের সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা; জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য ব্যাপক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণে বিভিন্ন পর্যায়ে অ্যাডভোকেসি ও লবিং করা; ‘জাস্ট ট্র্যানজিশন’ ইস্যুতে সরকার ও মালিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতি-নির্ধারকদের সাথে সংলাপে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়া ও কর্মক্ষেত্র পর্যায়ে সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে একে বিস্তৃতিকরণ; মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে যৌথ দরকষাকষি প্রক্রিয়া ও চুক্তিতে গ্রীণ জব ও জাস্ট ট্রানজিশনের মতো বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা ; জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অভিযোজন প্রক্রিয়ায় নিজেদের সক্ষমতা ও সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাধ্যমে সীমিত কার্বন অর্থনীতির দিকে যাত্রার পথ প্রশস্ত করা; জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এবং কর্মসংস্থান হারানো শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান, দক্ষতা/পুনঃদক্ষতা উন্নয়ন এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
/সুকান্ত বিশ্বাস/সাইফ/
আরো পড়ুন