জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও দূষণ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত অর্থায়নের আহ্বান বাংলাদেশের
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য ক্ষয় ও দূষণ এই ত্রি-মাত্রিক বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় দৃঢ়, সমন্বিত ও যথাযথ অর্থায়নসমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
পূর্বানুমানযোগ্য অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “পর্যাপ্ত সম্পদ ও প্রযুক্তি সহায়তা ছাড়া জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এ সংকটের মোকাবিলা করতে পারবে না।”
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সপ্তম অধিবেশন (UNEA-7)-এর প্লেনারিতে বাংলাদেশের ন্যাশনাল স্টেটমেন্ট উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়াউল হক বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে প্লেনারিতে উপস্থিত ছিলেন।
উন্নয়নশীল দেশের ওপর আর্থিক চাপের বিষয়টি তুলে ধরে পরিবেশ সচিব বলেন, “সহায়তার অভাবে সরকারগুলোকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত থেকে অর্থ সরিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যয় করতে হয়, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করে।”
তিনি UNEA-7–কে বিভিন্ন বহুপাক্ষিক পরিবেশ চুক্তির মাধ্যমে সমন্বিত ও সুষমভাবে সম্পদ আহরণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
বৈশ্বিক পরিবেশগত জরুরি পরিস্থিতির তীব্রতা উল্লেখ করে তিনি আন্তর্জাতিক সংহতি ও মানবিক বিবেচনার ভিত্তিতে যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিদিনের বাস্তবতা, উল্লেখ করে যে চরম তাপদাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও নদীভাঙনে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ প্ররিবেশ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
বিশ্বব্যাপী মোট নিঃসরণের ০.৫ শতাংশেরও কম অবদান রেখে বাংলাদেশ জলবায়ু নেতৃত্বের পরিচয় দিচ্ছে এ কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বৈশ্বিক সময়সীমার মধ্যে জমা দেওয়া বাংলাদেশের উন্নত NDC 3.0–এ ২০৩৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বর্তমান সক্ষমতার পাঁচ গুণ। পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (NAP 2023) বাস্তবায়ন এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন অভিযোজন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছে।”
জীববৈচিত্র্য হ্রাসের বিষয়ে তিনি বলেন, “১৮ কোটি মানুষের সীমিত ভূমির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।”
তিনি জাতীয় জীববৈচিত্র্য কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা (২০২৬–৩০), জাতীয় সংরক্ষণ কৌশল, রামসার কৌশলগত পরিকল্পনা (২০২৬–৩০), ভূমি অবক্ষয় নিরপেক্ষতা লক্ষ্য (LDN 2030) এবং পরিবেশ, বন ও জৈব-নিরাপত্তাবিষয়ক অন্যান্য নীতি বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরেন।
দূষণ মোকাবিলায় পাতলা পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধকারী বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকাও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “দৃঢ় নীতি ও জনসমর্থন থাকলে উচ্চাকাঙ্ক্ষা সফল হয়।”
তিনি জানান, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কঠিন বর্জ্য, ই-বর্জ্য, চিকিৎসা বর্জ্য, ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য ও জাহাজভাঙা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পৃথক বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বর্ধিত উৎপাদক দায়বদ্ধতা (EPR) নির্দেশিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং কিছু একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। রাসায়নিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা খসড়াও প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি UNEA-7–কে রাসায়নিক ও প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিরোধ, নিরাপদ বিকল্প এবং সার্কুলারিটি নিশ্চিত করে জীবনচক্রভিত্তিক সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণের আহ্বান জানান এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ঢাকা/এএএম/এসবি