ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শয়তানের সাগর

মুজাহিদ বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৩, ৫ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৪:২০, ৫ জানুয়ারি ২০২৩
শয়তানের সাগর

পৃথিবীর জলে স্থলে অসংখ্য জায়গায় লুকিয়ে রয়েছে নানান রহস্য। বিজ্ঞান কিংবা যুক্তি দিয়ে এর ব্যাখ্যা হয় না। পৃথিবীর বুকে এমনই এক রহস্য ঘেরা জায়গার নাম ডেভিলস সি বা শয়তানের সাগর।

প্রশান্ত মহাসাগরে জাপানি উপসাগরে এর অবস্থান। ধারণা করা হয়, পৃথিবীর যে ১২টি স্থানের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড অত্যন্ত প্রখর সেই স্থানগুলোকে ভাইস ভর্টিসেস বলা হয়। শয়তানের সাগর ১২টি ভাইস ভর্টিসেনের একটি। স্থানটি ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেল বা শয়তানের ত্রিভুজ এবং ড্রাগন ট্রায়াঙ্গেল নামেও পরিচিত।

নাম যাই হোক না কেন এই স্থানের আয়তন নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কিছু নথিতে বলা হয় জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে, আবার কোথাও বলা হয় জাপান থেকে বারোশ কিলোমিটার দূরে আয়োজিমা দ্বীপের কাছে শয়তানের সাগর অবস্থিত। যেহেতু কোনো আনুষ্ঠানিক মানচিত্রে শয়তানের সাগর অঙ্কন করা হয় না তাই এর প্রকৃত আয়তন সম্পর্কে বলা যায় না। কিন্তু জাপানের বো নিন দ্বীপ থেকে ফিলিপাইন সাগরের সিংহভাগ অঞ্চল শয়তানের সাগর নামে পরিচিত।

শয়তানের সাগরকে কেন্দ্র করে চীনা পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। তারা মনে করে এই অঞ্চলের পানির নিচে ড্রাগন বাস করে। এরাই ক্ষুদ্র জাহাজগুলো গিলে খায়। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ বছর আগে থেকেই তাদের মধ্যে এই উপকথা চলে আসছে। ফলে বোঝা যায় অতি প্রাচীন কাল থেকেই শয়তানের সাগরকে নিয়ে নানা ধরনের অলৌকিক ঘটনা ঘটত। এবং সাগর ঘিরে নানান কুখ্যাতি রয়েছে। 

১৮০০ শতকে লোকমুখে প্রায়ই শোনা যেতো অনেকেই এই এলাকায় জাহাজে করে এক রহস্যময় নারীকে প্রদক্ষিণ করতে দেখেছেন। চেঙ্গিস খানের নাতি কুবলাই খান ১২৭৪ সালে এবং ১২৮১ সালে জাপান আক্রমণ করেন। কিন্তু দুবারই তিনি ব্যর্থ হন।  কারণ শয়তানের সাগর এলাকায় মারাত্মক টাইফুনের কবলে পড়ে তার বাহিনী। কুবলাই খানের বেশ কয়েকটি জাহাজ এবং প্রায় ৪০ হাজার সৈন্য শয়তানের সাগরে হারিয়ে যায়। ১৯৪০ এবং ১৯৫০ এর দশকে বহু মাছ ধরার নৌকা এবং পাঁচটি সামরিক জাহাজ শয়তানের সাগরে নিখোঁজ হয়। এ সবই ঘটেছে মিয়া কি এবং আয়োজিমা দ্বীপের মধ্যবর্তী অঞ্চলে।

হারিয়ে যাওয়া জাহাজ অনুসন্ধানে ১৯৫২ সালের কায়ু মারো নাম্বর-৫ নামে আরেকটি জাহাজ পাঠানো হয়। আশ্চর্যজনকভাবে সেই জাহাজটি ৩১জন নাবিকসহ হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এরপর জাপান সরকার সমুদ্র যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনের জন্য অঞ্চলটি বিপজ্জনক ঘোষণা করে। চীনা এবং জাপানি লোক কাহিনীর মাধ্যমে জনপ্রিয় হবার কারণে বহু বিজ্ঞানীও এই অতিপ্রাকৃত অঞ্চল নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। অনেকেই মনে করেন এমনিতেই অঞ্চলটি ভাইস ভর্টিসেসের অন্তর্গত, তার উপর হয়ত একইসঙ্গে উষ্ণ এবং শীতল সামুদ্রিক জলের প্রবাহের কারণে এখানে সমস্যা দেখা দেয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা এখানে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ডিস্টারবেন্সের কারণে জাহাজগুলো অদৃশ্য ফাঁদে আটকে যায়। 

আরেকটি অনুমান হলো এ অঞ্চলের জলের নিচে থাকা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের কারণে বিভিন্ন সময় জাহাজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতীতের এসব আগ্নেয়গিরিকেই হয়তো চীনারা ড্রাগন ভাবতো। আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াশীলতার কারণে এখানে ছোট ছোট দ্বীপগুলো হারিয়ে যায় এবং একই জায়গায় আবার নতুন দ্বীপের সৃষ্টি হয়।

একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বলা হয় আলোচিত অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ মিথেন হাইড্রেট মজুদ রয়েছে। এসব গ্যাস যখন বিস্ফোরিত হয় সেই বিস্ফোরণের ফলেও জাহাজ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগরের এই অঞ্চলের পৌরাণিক কাহিনী বা বৈজ্ঞানিক গবেষণা কোনটিই এই স্থানের রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। তবে এই রহস্য থেকে এটি নিশ্চিত যে প্রকৃতিতে এমন অনেক বিষয় আছে যা মানুষের বোধগম্যতার বাইরে।

শান্ত//

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়