ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২০ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ৭ ১৪৩১

কোকাকোলার গোপন রেসিপি

কাজী আশরাফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কোকাকোলার গোপন রেসিপি

কাজী আশরাফ : তাকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই। জনপ্রিয়তা এতটাই যে, ফেসবুক পেজে তার ৭০ মিলিয়নের বেশি ফ্যান আছে এবং এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শুধুমাত্র তার ব্র্যান্ডভ্যালুর কারণে ইংরেজি শব্দ ‘Kola’ পরিবর্তন হয়ে ‘Cola’ হয়ে গিয়েছে।

 

পাঠক বুঝতেই পারছেন কোন পানীয়র কথা বলা হচ্ছে। এই পানীয় বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় আট হাজার গ্লাস পান করা হয়। এখন পর্যন্ত উৎপাদিত এই পানীয় ঢেলে যদি একটি সুইমিংপুল বানানো হয় তাহলে সেই সুইমিংপুলের দৈর্ঘ্যে হবে প্রায় ৩০ কি.মি., প্রস্থে প্রায় ১৫ কি. মি.। আর গভীরতা হবে ২০০ মিটার। এই সুইমিংপুলে প্রায় হাফ বিলিয়ন মানুষ গোসল করতে পারবে।

 

স্বভাবতই এই পানীয় কীভাবে প্রস্তুত করা হয় তার রেসিপি জানতে মানুষ অনেক উদগ্রীব। এ কাজটি সহজ নয়।

 

পৃথিবীতে গোপন যত বিষয় আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো কোকাকোলার রেসিপি। এর রেসিপি তৈরি করেন পেমবার্টন। এই ভদ্রলোক আমাদের ভাষায় ‘হাতুড়ে ডাক্তার’ ছিলেন। তিনিই এর আবিষ্কারক। যদিও তার হাত ধরে কোকাকোলা আজকের এই জনপ্রিয়তা পায়নি।  ক্যান্ডেলারের কাছে তিনি রেসিপিসহ কোকাকোলার স্বত্ব বিক্রি করে দেন। এই ক্যান্ডেলারই কোকাকোলাকে পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলেন। সে অন্য এক গল্প।

 

যুগ যুগ ধরে অতি বিশ্বস্ত কোনো লোক ছাড়া কোকাকোলার রেসিপি সম্পর্কে কেউ জানতো না। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ৬ দশমিক ৬ ফুট মোটা ধাতব একটি ভল্ট বানানো হয়, যেখানে কোকাকোলার রেসিপি নিয়ে কাজ করা হয়। সেখানে সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্ত লোক ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারেন না।

 

মজার ব্যাপার শত চেষ্টা করলেও বাইরের কেউ ভোল্টের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। আর যারা ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পান তারাও ঠিকভাবে জানেন না রেসিপি। কারণ কোকাকোলা তৈরিতে যে উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো তারা চেনেন কিন্তু কোনটির কী নাম তারা তা জানেন না। কেননা যেসব বোতলে সেই উপাদানগুলো থাকে তার গায়ে কোনো লেবেল লাগানো থাকে না। তারা মূলত গন্ধ ও রং দেখে উপাদানগুলো ব্যবহার করেন।

 

আমেরিকার ট্রাস্ট কোম্পানি অব জর্জিয়া নামের ব্যাঙ্কের সেফ্ ডিপোজিট ভল্টে ‘7x’ চিহ্নিত কোকের ‘রিয়েল থিং’ সযত্নে রাখা হয়েছে। যে দশ জন অফিসারের হাতে ফর্মুলার চাবিকাঠি রয়েছে, তাদের একসঙ্গে বসবাস এবং চলাফেরাও নিষিদ্ধ। যদি তারা অপহৃত হন বা দুর্ঘটনার কবলে পড়েন সে কারণে এই সতর্কতা।

 

যুগ যুগ ধরে গবেষকরা চেষ্টা করছেন কোকাকোলার রেসিপি নিয়ে। কর্তৃপক্ষও তাদের রেসিপিটি গোপন রাখার জন্য সর্বোচ্চ গোপনীয়তা অবলম্বন করছেন। রেসিপির রহস্য উদঘাটনে বেশিরভাগই ব্যর্থ হলেও অনেকে আবার এই গোপন রেসিপির সন্ধান পেয়েছেন বলে দাবি করেন। আমেরিকার উইলিয়াম পাউণ্ড স্টোন ‘বিগ সিক্রেটস’ গ্রন্থে এর রহস্য উন্মোচনের কথা লিখেছেন। তিনি যে সম্ভাব্য উপাদানের কথা বলেছেন সেসব হলো, চিনি, ক্যাফেইন, ক্যারামেল, ফসফরিক অ্যাসিড, কোক-পাতার নির্যাস, কোলা-নাট, সাইট্রিক অ্যাসিড, কমলালেবু, লাইম-জুস, দারুচিনি, জায়ফলের তেল, গ্লিসারিন, ভ্যানিলা এবং সেভেন এক্স নামের এক ‘রিয়েল থিং’।

 

কিন্তু যখন সেভেন এক্স সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তখন তিনিও সঠিকভাবে এর পরিচয় দিতে পারেননি। পরে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে বিষয়টি। ১৯০৯ সালে আমেরিকার ফেডারেল সরকার কোকাকোলার গোপন রেসিপি জানার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হন। এই মামলাটি ৯ বছর ধরে চলে। অবশেষে আদালতের রায় কোকাকোলা কোম্পানির পক্ষেই যায়। তবে এতদিনে অনেকেই গোপন রেসিপি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়ে যান। প্রতিযোগী পানীয় কোম্পানিগুলো সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই নতুন পানীয় প্রস্তুত করে বাজারে ছাড়েন। কিন্তু কোকাকোলার সেই স্বাদ কেউই তৈরি করতে পারেন নি। এই রেসিপি আজও রহস্যময়ভাবে গোপনই রয়ে গেছে।  

 

তবে এর গল্প কিন্তু ফুরিয়ে যায়নি। প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো কিছুতেই কোকাকোলার গোপন রেসিপি সম্পর্কে জানতে না পেরে অবশেষে বাজারে গুজব ছড়িয়ে দেয়। ১৯৫৪ সালে মরক্কোর লোকেরা প্রচার করে যে, কোকাকোলাতে শুয়োরের রক্ত মেশনো হয়। আফ্রিকানরা বলেন, কোকাকোলাতে কড়া ডোজের কোকেন মেশানো হয়। ভারতীয়রা বলেন, কোকাকোলাতে মানুষের দেহের বর্জ্য পদার্থ মেশানো হয়। কোকাকোলায় কফির উপক্ষার, ফসফরিক অ্যাসিড ও চিনির ব্যবহারে দাঁতে ক্ষয় হয়- এসব তো রয়েছেই। শেষের গুজবটি কিছুটা সত্য হলেও কোকাকোলার জনপ্রিয়তার কাছে কোনোকিছুই শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেনি।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/তারা

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়