ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

তানাফুস রমজানের রহমত বাড়ায়

মুফতী মাহফূযুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ২২ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ২১:৫৭, ২২ এপ্রিল ২০২১
তানাফুস রমজানের রহমত বাড়ায়

‘তানাফুস’ বলা হয় অন্যের চেয়ে বেশি করার আগ্রহ নিয়ে কাজ করাকে। এককথায় তানাফুসের বাংলা প্রতিশব্দ বলতে পারি প্রতিযোগিতা করা। আমার বন্ধু দিনে ৭ ঘণ্টা কাজ করে, তো আমাকে অবশ্যই ৮ ঘণ্টা কাজ করে ওর চেয়ে এগিয়ে থাকতেই হবে- এ মানসিকতাকে তানাফুস বলে।

নেক আমলে, দীনি কাজে তানাফুস প্রশংসনীয় ও গ্রহণীয়। রমজান মাসে ইবাদতের তানাফুস আরো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং অফুরন্ত রহমত ও বরকতের কারণ।
উবাদা ইবনে সামিত বলেন, একদিন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান মাস এসেছে। তা বরকতের মাস। এ মাসে আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন। বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। গুনাহ মাফ করেন। দোয়া কবুল করেন। এ মাসে আল্লাহ তাআলা তোমাদের তানাফুস দেখেন এবং ফেরেশতাদের সঙ্গে তা নিয়ে গর্ব করেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে তোমাদের নেক আমল দেখাও। হতভাগা সে যে এ মাসেও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে।’ (তাবারানি)

রমজান মাসে বান্দাদের নেক আমল করার পরস্পরের প্রতিযোগিতা আল্লাহ তাআলা আগ্রহভরে দেখেন। আবার তা নিয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্বও করেন। তাই আমাদেরও বেশি করে প্রতিযোগিতামুখী হতে হবে। অন্যের চেয়ে ইবাদত বেশি করার জিদ, ইচ্ছা, আগ্রহ মনের ভেতরে থাকতে হবে। এ প্রতিযোগিতার মানসিকতা সাহাবাদের মধ্যেও ছিল। পরবর্তী যুগের নেককার লোকদের মধ্যেও ছিল।

এ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য নিজের আশপাশের ওপর নজর রাখতে হবে। প্রতিযোগিতা হবে ঘরের লোকদের সঙ্গে, বন্ধুদের সঙ্গে, মহল্লার প্রতিবেশীদের সঙ্গে। প্রতিযোগিতাটা শুরু করতে পারেন স্বামী-স্ত্রীদের থেকে।

রমজান মাসে আপনার আশপাশের সবার চেয়ে আপনার কোরআন পড়া বেশি হচ্ছে কিনা দেখুন। পড়ার পরিমাণ বাড়ান। আপনার চেনাজানা সকলের চেয়ে এ রমজানে আপনার কোরআন খতম বেশি হতে যাচ্ছে তো? নাকি লোকাল গাড়ির মতো পুরো মাসে মাত্র ১ খতম নিয়েই বসে আছেন; আর তা যথেষ্ট মনে করছেন?

এ মাসের নফল অন্য মাসের ফরজের সমান। তাই নফল নামাজ নিয়েও প্রতিযোগিতা করতে পারেন। আপনার পরিচিতজন কে কত রাকাআত নফল প্রতিদিন পড়ছে? আপনি প্রতিদিন কত রাকাআত পড়ছেন? নূন্যতম শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ ৮ রাকাআত, সকালে ঘুম থেকে উঠে ইশরাক ৪ রাকাআত, ১১টার দিকে চাশ্ত ৪ রাকাআত, মাগরিবের পরে আওয়াবিন ১২ রাকাআত, আসর ও ইশার আগে ৪ রাকাআত করে সুন্নতে জায়েদা- সব নফল নামাজগুলো না পড়ার প্রশ্নই রমজানে ওঠে না। এগুলো বাদ গেলে রমজানের আর থাকল কি? বাঁধা-ধরা এসব নফল নামাজ তো পড়বেনই, এর বাইরেও দুই দুই রাকাআত করে প্রতিদিন আরো কিছু অতিরিক্ত নফল রমজানে প্রতিদিন নিয়ম করে, রুটিন করে পড়তে থাকুন। তানাফুস যেন হয়। আপনার আশপাশের সকলের চেয়ে আপনার রাকাআত যেন বেশি হয়।

সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ ইত্যাদি বাক্যগুলোর জিকির নিয়েও তানাফুস থাকতে হবে। এ বাক্যগুলোর প্রতি ওয়াক্তের জিকির তো সারাবছরই চলে। তা দিয়ে তো আর রমজানের হক ও সম্মান রক্ষা হবে না। রমজানের সম্মানে এ সকল বাক্যের জিকিরের পরিমাণও সারা বছরের চেয়ে অনেক বাড়াতে হবে। তানাফুসের পরিবেশ এবাদত বাড়াতে বেশ সহায়ক হয়ে থাকে।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরুদ পাঠ করে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত বর্ষণ করেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করেন, তার মর্যাদা দশ স্তর বাড়িয়ে দেন। এ রমজান মাসে রহমতের মাসে, বরকতের মাসে আমরা রহমত লাভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল দরুদ শরিফের পাঠ বাড়াতে পারি, অনেক বেশি বাড়াতে পারি। প্রতিদিন শ’য়ের হিসাবে বা হাজারের হিসাবে দুরুদ পড়তে পারি।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের তানাফুস করতে বলেছেন, নেক আমলের প্রতিযোগিতা করতে বলেছেন, আল্লাহকে ইবাদত দেখাতে বলেছেন।
 

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়