ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শরীরের প্রতিটি অঙ্গের রোজা রয়েছে

মাওলানা মুনীরুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৪, ২৬ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৪:৪৫, ২৬ এপ্রিল ২০২১
শরীরের প্রতিটি অঙ্গের রোজা রয়েছে

স্রেফ না-খেয়ে থাকার নামই রোজা নয়। বরং রোজা এমন এক সার্বজনীন ইবাদত, যা রোজাদারকে ষড়রিপুর কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে। রোজা মানুষকে ধর্মীয় মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা, অন্তরের পবিত্রতা ও চিন্তাধারার বিশুদ্ধতা দান করে।

কেবল ভোর রাত থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত না খেয়ে থাকার নামই রোজা নয়। বরং মানুষের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেরই রোজা রয়েছে। পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি চোখ, কান, জিহ্বা, হাত, পা-কে গুনাহ থেকে মুক্ত রেখে অন্তর যাবতীয় কুচিন্তা ও বৈষয়িক লোভ-মোহ থেকে মুক্ত করে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতে পারলেই উচ্চস্তরের রোজার আশা করা যায়। এমন রোজাই ঢাল হয়ে শয়তানকে প্রতিহত করতে পারে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারি শরীফ)। তিনি আরো বলেছেন, অনেক রোজাদার ব্যক্তি এমন রয়েছে, যাদের রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ছাড়া আর কিছুই লাভ হয় না। আবার অনেক রাত জাগরণকারী এমন রয়েছে, যাদের রাত জাগার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই লাভ হয় না। (মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ)

অন্তরের রোজা হচ্ছে দেহের রোজার ভিত্তি। ঈমানের রসে পাপী অন্তর যদি সিক্ত না হয়, তাহলে পাপাচার ও কামাচারের মতো রিপুর নিয়ন্ত্রণ করা কখনও সম্ভব নয়। পেটের রোজা হচ্ছে পেটকে হারাম খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত রাখা। রোজার সময় দিনের বেলায় পেটকে হালাল খাদ্য থেকেও বিরত রাখা। সেহরি ও ইফতারে অতিরিক্ত আহার না করা। জিহ্বার রোজা হচ্ছে জিহ্বাকে অনর্থক কথা ও গোনাহের কাজ থেকে বিরত রাখা। অশ্লীল ও মিথ্যা বলার কারণে অনেকের রোজা নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য রোজাদারকে কম কথা বলে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ, দীনি দাওয়াত ও নেকের কাজে ব্যস্ত থাকা উচিত। চোখের রোজা হচ্ছে অশ্লীল ও হারাম কাজ থেকে দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখা এবং ভালো কাজের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া। চোখ হলো মনের আয়না। যে কোনো গুনাহের কাজ করার আগে চোখ প্রথমে তা দেখে এবং পরে মনকে প্রলুব্ধ করে। তাই চোখের হেফাজত করাই মনের হেফাজত করা। কানের রোজা হচ্ছে ভালো কথা ও হেদায়েতের কথা শোনা এবং মন্দ কথা, অশ্লীল গান-বাজনা যথাসম্ভব কানে প্রবেশ না করানোর চেষ্টা করা। হাতের রোজা হচ্ছে হাত দিয়ে কোনো পাপের কাজ বা মানুষের ক্ষতিকারক কোনো কাজ না করা। আল্লাহ হাত দিয়েছেন সৎকর্ম করার জন্য। তাই রোজা রেখে জিনিসপত্রে ভেজাল মেশালে, ওজনে কম দিলে, মারামারি-খুনোখুনি করলে, কলমের আঁচড়ে দুর্নীতি বা জুলুম করলে, মিথ্যা সংবাদ লিখে প্রচার করলে রোজা হবে না। পায়ের রোজা হচ্ছে পা-কে বিপথগামী না করা। পাপাচারের পথে, খারাপ পথে পা না বাড়িয়ে শান্তি ও কল্যাণের পথে পা বাড়ানো।

তাই সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত কষ্ট করে না খেয়ে থেকে আর শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে পাপকাজ চালু রেখে রোজার সওয়াবের আশা করা যায় না। রোজার পরিপূর্ণ সওয়াব লাভের জন্য উপোস থাকার পাশাপাশি শরীরের প্রতিটি অঙ্গের যথাযথ ব্যবহার করা প্রত্যেক রোজাদারের অবশ্য কর্তব্য।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম 
 

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়