ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফেতরা

মুফতী মাহফূযুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ২৯ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১০:৪০, ২৯ এপ্রিল ২০২২
ফেতরা

ফেতরা রমজান মাসের বিশেষ একটি আমল। সদিচ্ছা ও আন্তরিক চেষ্টা থাকার পরেও গুনাহমুক্ত থেকে পূর্ণ হক আদায় করে রোজা রাখা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। রোজার অনিচ্ছাকৃত এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার জন্য রাখা হয়েছে ফেতরার ব্যবস্থা। হাদীসে এ দানকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়েছে। যেমন: সদাকাতুল ফেতরা, যাকাতুল ফিত্র, যাকাতুস সউম ইত্যাদি।

ফেতরার বড় সামাজিক উপকার হলো এর উসিলায় সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সর্ববৃহৎ জাতীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের আনন্দে শরিক হওয়ার সুযোগ পায়। তাদের নতুন কাপড় আর ভালো খাবারের ব্যবস্থা হয়। অনেকের তো আরও  অগ্রসর হয়ে সংসারের টুকটাক প্রয়োজন পূরণেরও ব্যবস্থা হয়। ঈদুল ফিতরের উপলক্ষে ফেতরার নামে সমাজের উচ্চ বিত্ত, মধ্য বিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের থেকে বিশাল পরিমাণের অর্থ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে যায়। অল্প সময়ের ভিতর অর্থের এ বিশাল প্রবাহ দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখে। দারিদ্র্য দূরিকরণে সহায়তা করে।

আরো পড়ুন:

ঈদের দিন সুবহে সাদেকের সময় যার মালিকানায় সাড়ে বায়ান্ন ভরি (৬১২.৩৬ গ্রাম) রুপার সমমূল্যের মুদ্রা, সোনা-রুপা, ব্যবসার মাল, প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি, বাড়ি, তৈজসপত্র ইত্যাদি থাকবে তার উপর ফেতরা ওয়াজিব। সে নিজের এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের ফেতরা আদায় করবে।

বিত্তের পরিমাণে মানুষ বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে থাকে। তাই বিভিন্ন শ্রেণির বিত্তশীলদের জন্য শারিআত বিভিন্ন মূল্যমানের খাদ্যদ্রব্যকে ফেতরার পরিমাপক হিসেবে নির্ধারণ করেছে। শারিআতের এ সূক্ষ্ম রহস্যকে আদৌ গুরুত্ব না দিয়ে সুপার উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত পর্যন্ত সকল শ্রেণির সবাই গমের হিসেবে ফেতরা আদায় করার প্রচলিত পদ্ধতিটি শারিআতের দৃষ্টিতে সুন্দর না। প্রচলিত এ পদ্ধতি শারিআতের সৌন্দর্যকে ঢেকে রেখেছে। ফেতরা সম্পর্কিত হাদীসগুলোতে পাঁচ প্রকার খাদ্যদ্রব্যের নাম ও পরিমাণ পাওয়া যায়। যথা: যব, খেজুর, পনির, কিচমিচ মাথাপিছু এক সা (৩ কেজি ২৭০ গ্রাম) এবং গম মাথাপিছু অর্ধ সা (১ কেজি ৬৩৫ গ্রাম)।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসূল (স.) গোলাম-স্বাধীন, নর-নারী, ছোট-বড় প্রত্যেকের উপর এক সা খেজুর বা যব অথবা আধা সা গম ফেতরা অপরিহার্য করেছেন। (আবু দাউদঃ ১৬২৪) উল্লেখিত খাদ্যদ্রব্যসমূহ থেকে যে কোন খাদ্যদ্রব্য বা তার বাজারমূল্য দ্বারা মাথাপিছু ফেতরা আদায় করা যাবে। হজরত মুআজ রা. ইয়ামানবাসীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তোমরা ফেতরাতে খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে বস্ত্র দেও। তোমাদের দিতে সহজ হবে এবং মদিনার গরিবদের বেশি উপকারে আসবে। (বুখারি) হজরত উমর রা. তার শাসনামলে ফেতরাতে মুদ্রা গ্রহণ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা) উপরোক্ত পাঁচ প্রকার খাদ্যদ্রব্য থেকে যে প্রকারটা নিজের আর্থসামাজিক মানের সাথে অধিক সঙ্গতিপূর্ণ তার হিসাবে ফিতরা আদায় করাই শ্রেয়, যুক্তিযুক্ত ও সুন্দর। কেননা, নবীজীকে (স.) সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, যার মূল্য বেশি এবং দাতার কাছে পছন্দনীয় তা দান করাই সর্বোত্তম দান। (বুখারীঃ২৫১৮)

/সাইফ/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়