ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সার্টিফিকেট পোড়ানো কি অপরাধ?

মুজাহিদ বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪০, ৩১ মে ২০২৩   আপডেট: ১২:৫৯, ৩১ মে ২০২৩
সার্টিফিকেট পোড়ানো কি অপরাধ?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে লাইভে এসে ছাত্রজীবনে অর্জিত শিক্ষাগত সনদপত্র পুড়িয়ে মুক্তা সুলতানা বর্তমানে আলোচিত নাম। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদির এই তরুণী ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে ২০১৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুক্তাকে চাকরি দেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তাকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের অধীন ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব সিকিউরড ইমেইল ফর গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার’ প্রজেক্টে ‘কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল কমিউনিকেশন অফিসার’ পদে চাকরি দেয়া হয়। মুক্তার বেতন ধরা হয় ৩৫ হাজার টাকা।

সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ভাইরাল হয়ে চাকরি পাওয়ার এই ঘটনায় কেউ মুক্তা সুলতানার সাহসের, প্রতিবাদের প্রশংসা করছেন, অনেকেই আবার প্রশ্ন তুলেছেন- কাজটি সঠিক হয়েছে কিনা? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ আবার সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী সার্টিফিকেট পোড়ানো অপরাধ।

এ প্রসঙ্গে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী  আঞ্জুমান আরা লিমা। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি লিগেল কনসেপ্টে চিন্তা করেন সার্টিফিকেট একজন মানুষের জীবনের অন্যতম অর্জন। এটা আপনার নিজস্ব সম্পদ, যা আপনি অর্জন করেছেন। আপনি যদি মনে করেন এটি পুড়িয়ে ফেলবেন বা যে কোনোভাবে নষ্ট করবেন সেটি আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। যদি সার্টিফিকেট পোড়ানোর কারণে পাবলিকের ইমেজ বা আশপাশের কারো ক্ষতি হয় তবে সেটি অপরাধ হিসেবে ধরে নেয়া যায়। আপনার ব্যক্তিগত সম্পদ আপনি যা খুশি করতে পারেন- এতে আইনে বাধা নেই।’

*আরও পড়ুন: যোগ্যতায় সফল না হয়ে ফেসবুককে ঢাল বানানো হচ্ছে, কীসের ইঙ্গিত দিলেন পলকপত্নী

মুক্তা সুলতানার প্রতিবাদের ধরন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, ‘এ ঘটনার দুটো দিক রয়েছে। প্রথমত, মুক্তা মেয়েটা বিভিন্নভাবে, নানা সংগ্রাম করে নিজে পড়াশোনা করেছে। যেহেতু তার বাবা নেই, ভাই-বোনের দায়িত্ব নিতে গিয়ে বিভিন্ন কাজ করতে হয়েছে। এর পাশাপাশি সে পড়ালেখা করেছে। যখন সে চাকরির চেষ্টা করছে; চাকরি তার প্রয়োজন, তত দিনে তার বয়স শেষের দিকে চলে এসেছে। ফলে সে অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে সার্টিফিকেট পুড়িয়েছে।’

‘অন্যদিকে, বাংলাদেশে অনেকেই বেকার রয়েছেন। এখন অন্যরা যদি মনে করে, আমারও চাকরির বয়স চলে গেছে, সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলি; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেই, তখন কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব সমাজ ও রাষ্ট্রে পড়বে।’

‘মুক্তা কাজটি করতে পারতো তার মতো করে। কিন্তু বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা জনগণের সামনে আনা ঠিক হয়নি। এটা একটা ভুল বার্তা সমাজের জন্য।’ বলেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

একজন আইনজীবী হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে কাজটি ঠিক হয়নি উল্লেখ করে আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘একটি অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। এটার অন্য কোনো সল্যুশন হতে পারতো। এখন যদি দশজন এসে বলে আমরা সার্টিফিকেট পুড়ে ফেলব চাকরি দেন। সেটা কি সম্ভব? বাংলাদেশে অনেকেই স্ট্রাগল করে পড়াশোনা করে। একজন মুক্তাকে দিয়ে যদি আপনি অন্য মুক্তাকে চাকরি দিতে না পারেন তবে বৈষম্য তৈরি করা হলো।’

‘আমরা প্রায়ই দেখি মানুষ সুইসাইড করতে লাইভে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা এক ধরনের ব্ল্যাকমেইল। আমি কোনো না কোনোভাবে দুর্বল, প্রেশার নিতে পারি না, তখন আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কাজে লাগিয়ে অনেক সময় অজান্তেই সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলি। ফলে তিনি যেটি করেছেন ঠিক হয়নি। সার্টিফিকেট পোড়ানোর পর চাকরি হয়ে গেল- সমাজের শিক্ষিত বেকারের কাছে এতে ভালো বার্তা গেল না।’ 

*আরও পড়ুন: সার্টিফিকেট পোড়ানো ‍মুক্তাকে ৩৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি দিলেন পলক

শিক্ষিত মানুষ অথচ সার্টিফিকেট নেই। এ অবস্থায় কি চাকরি দেয়া যায়? এ প্রসঙ্গে আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘আমাদের দেশের স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ ক্ষমতাবলে চাকরি দিতে পারে।’

উল্লেখ্য, এর আগে, সরকারি চাকরির বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ার হতাশায় ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ফেসবুক লাইভে’ সব একাডেমিক সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলেন বাদশা মিয়া নামের এক যুবক। তিনি এখন পুরোদমে একজন কৃষক। নীলফামারীর ডিমলার ওই যুবক প্রায় ২০টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দেয়ার পরও চাকরি পাননি।

তারা//

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়