মো. জাহিদ হাসানের দুটি কবিতা
মো. জাহিদ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

নারী কিসে আটকায়
রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর জাস্টিন ট্রুডোর ভেঙেছে সংসার
এই ইস্যুতে মিডিয়ায় তুমুল হৈচৈ, ফেসবুকেও তোলপাড়
টাকাওয়ালা বিল গেটস, সক্ষম হাকিমী ঋত্বিক, ভদ্র তাহসান
সবার বউ গেল! এ নিয়েই মাঠে ঘাটে তর্ক বিতর্ক তুঙ্গে
‘নারী কিসে আটকায়’ কোটি টাকার এ প্রশ্ন ভাইরাল দেশটায়।
নারী যে কিসে সহজেই আটকায় আর কিসে পড়ে খটকায়
জগতের কোনো পুরুষের পক্ষে বোঝা অসম্ভব ছাড়া এক স্রষ্টায়!
কিছু নারী সত্যিকার অর্থেই প্রেমের টানে ছাড়ে বাপের জমিদারী
কর্মহীন পুরুষের সাথে সহজে আটকে পাড়ি দেয় জীবন তরী।
নারী স্বামীর সংসারে এসে চোখের পানি রাখে না বেঁধে
অযৌক্তিক আবদার না মানলে হু হু করে ওঠে কেঁদে।
স্বামীর সাথে স্ত্রীর অহেতুক ঘ্যানঘ্যান সংসারে বড় বাঁধা
স্ত্রী অযৌক্তিক কথার রানী হলেও মানতে হয় ‘প্রেমের রাধা’!
ক্যাম্পাসে চরিত্রহীন ছেলেদের কথার ফাঁদে নারী আটকায়
প্রেমের প্রস্তাবে ভদ্র কেউ এলে, হাবা বলে নারী তাকে চটকায়!
সংসারের হাল ধরতে পুরুষ বিদেশ যেতে দেয় সাত সমুদ্র পাড়ি
যৌবনে কিছু নারী পরকীয়ায় আটকিয়ে গোপনে খোলে শাড়ি!
যুগ যুগ ধরে নারীরা পরে স্বর্ণ হীরার অলঙ্কার আর শাড়ি।
পুরুষের যোগাতে হয় রসদ-কড়ি নারীকে রেখে নিজ বাড়ি
শাহজাহান গড়েছে তাজমহল মমতাজ ছিল বলে প্রিয় নারী
প্রেমে ব্যর্থ নারী বিয়ের পিঁড়িতে বসেনি? এ নিয়ে চলে আড়ি।
পুরুষের অন্তরে না থাকুক প্রেম, মুখে রাখিলে মধুর হাঁড়ি
বরশির খাদ্যে মাছের ফাঁদের মতো ভ্রান্তিতে আটকায় নারী
কুচকুচে বেকার সঙ্গীতে হলে কসরত ঠিকঠাক তাও আটকায়
স্টার জলসার মোহেও আটকায় নারী, না পেলেও গহনা শাড়ি।
নারীর ছলে পড়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পুরুষও মতিভ্রমে আটকায়
কখনও বিলাসিতা মেটাতে পুরুষ নৈতিকতার ঘাড় মটকায়।
নারীর অযৌক্তিক আবদারে স্বামীদের মন এমন হয়েছে ভাই
সংসারে স্ত্রীদের আটকাতে গিয়ে স্বামীদের মন শান্তিতে নাই।
বাজারের পণ্যের মতো স্বামীকে যে নারী, প্রেমের পাল্লায় মাপে
ওরা পুরুষকে বাজে উপস্থাপন করতে সমাজে অবলা সাজে।
ভদ্র শালীন নারী কখনো হিসাব কষে না সংসারের বাঁকে
যতই অশান্তি হোক সন্তানের মুখ চেয়ে সংসারে আটকে থাকে।
সরল মনের নারীরা ভালোবাসা সন্তান সংসারে আটকায়
উচ্চ শিক্ষিত কিছু কুটিল রমণীর মন শয়তানে মটকায়।
ওরা জানে না জীবনের সুখ কোথায়! তাইতো পড়ে খটকায়
ওদের জন্যই এ প্রসঙ্গ ভাইরাল দেশটায় ‘নারী কিসে আটকায়’।
যুগের একাল-সেকাল
আগে ছনের ছাউনি বাঁধা ঘরে যারা বাস করিত গাঁয়
তাদের বুকের পাঁজরের ভেতরটা পরিপূর্ণ ছিল মায়া মমতায়
আগে কেউ অসুস্থ হলে, কি হবে ভেবে পাড়ায় পড়ে যেত সাড়া
মরলেও অনুভূতি জাগে না, মনে এমন বিষ ছড়িয়ে দিল কারা?
আগে শত বঞ্চনা শাসনে দাদীরা দিত বিবাহিত জীবন পাড়ি
এখন দায়িত্ব ও যত্নে উনিশ-বিশ হলে যায় সংসার ছাড়ি।
আগে ঝগড়াঝাটি হলে পরে মিলে যেত বুকেতে মিশায়ে বুক
এখন স্বার্থের দ্বন্দ্বে শত্রুতা হলে জীবন নাশ করে খোঁজে সুখ।
সময় পেলে কাছে ডেকে প্রায়ই শিক্ষামূলক গল্প শোনাত দাদু
নৈতিকতার গল্প শুনে মনে হতো কথায় আছে শিক্ষনীয় যাদু।
মুরব্বিরা বলতো, পড়াশোনা না করলে জীবন পড়বে গিয়ে খাঁদে
বুঝবে জীবনের সোনালী সময় চলে যাওয়ার কদিন বাদে।
বাঁকা রাস্তায় পথ চললে বড়রা শাসন করতে ধরতো টেনে কান
আজ পথ হারিয়ে ভাঙ্গের নেশায় বুঁদ হলেও নেই শাসনের টান।
এখন জ্ঞান অর্জনে কষ্ট করে পড়তে হয় না বাড়তি কোনো বই
মোবাইলে ফেসবুক খুললে যত্রতত্র কনটেন্ট মনোযোগ অথৈ।
আগে প্রতিবেশী ক্ষুধার্থ থাকলে নিজের হাঁড়ির ভাত দিত দিয়ে
এখন সুযোগ পেলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে চায় সব কেড়ে নিয়ে।
সুখ দুঃখে পরস্পর খোঁজ নিতে সবাই যেত আন্তরিকভাবে মিশে
যুগের পরিবর্তনে কেন মানুষ এমন হলো পাই না কোনো দিশে।
নাগর প্রেমের বাঁধন ছিঁড়লে মেয়েরা নয়ন ভেজাত জলে,
এখন আগের মতো জাগে না অনুভূতি মনে প্রেম চলে কৃত্রিম ছলে।
আগে থৈথৈ জল ছিল নদীর ওপারে যাইতাম লয়ে ঘাটের তরী
এখন বর্ষাকালেও জল হয় না, বাওয়া হয় না ডিঙি মন ভরি।
আগে বখাটে সন্ত্রাসীদের নেতারা ভালো বাসিত না মোটে
এখন ওদের দলে টানতে রাজনৈতিকরা চুমো দিতে চায় ঠোঁটে।
আগে মেয়ে বিয়ে দিতে পাত্র ঘুষখোর হলে রাখত অনেক দূরে
এখন উপরি ইনকাম হলে কাছে টানে মায়া মহব্বতের সুরে।
আগে বাড়িতে ফকির এলে বসতে দিত পিঁড়ি
এখন দরজায় মাথা ঠেকিয়ে কাঁদলেও চায় না কেহ ফিরি।
শিশু কালে বাবা স্কুলে সাথে যেত হাতে থাকত বই
যুগের সেই হালচাল আর নৈতিকতা হারিয়ে গেল কই?
আগে দেশের মানুষ গরিব থাকলেও ভালো ছিল স্বভাব
রাষ্ট্র এখন উন্নত হলেও মানুষের মাঝে নৈতিকতার অভাব।
আগের মানুষের মনে ছিল ভালবাসার আলো
যুগের হালচাল পরিবর্তনে শিক্ষিত হলেও মন হয়েছে কালো।
সময়ের বিবর্তনে আন্তরিকতা কি হারিয়ে গেছে মাটির গহ্বরে?
মানুষে মানুষে রোবোটিক আচরণ দেখে ভাসি চোখের জলে।
হালচাল দেখে ভাবি শিশুকালে ফিরব, সময়ের উল্টো স্রোত বয়ে
এটা কি আর হয়! সময় কি মোরে নিতে পারবে ছোট্টকালে লয়ে?
তারা//
আরো পড়ুন