ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

আমার মা ও আমলকি গাছ

অধ্যাপক ড. জিএম শফিউর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০২, ১২ মে ২০২৪  
আমার মা ও আমলকি গাছ

টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন আমার মা। আশির দশকের কথা, আম্মা যখন স্কুলে যেতেন গ্রামের রাস্তা দিয়ে, রাস্তার দু’ধারে স্কুলের ছোট বাচ্চারা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে পায়খানারত অবস্থায় থাকতো। আম্মাকে দেখে শিক্ষকের মর্যাদার কথা চিন্তা করে তারা তাৎক্ষণিক সালাম দিতো।

দেখা যেতো, সালামের সময় তাদের কারো পশ্চাতদেশ থেকে মল পড়ছে। আবার কেউ এক হাত উঁচু করে সালাম দিচ্ছে আর এক হাত দিয়ে প্যান্ট ধরে আছে। কেউ হঠাৎ সালাম মিস করলেও এক হাত ধরে প্যান্ট ধরে আধো নেংটা অবস্থায় দৌঁড়ে এসে সালাম দিয়ে যেত। গল্পটা আম্মার মুখে শোনা। এটা শিক্ষকের প্রতি ছোটদের মর্যাদার একটা গল্প।

আরেক গল্প বলছি, স্কুলে যাবার পথে আমাদের পাথরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাবু শ্যামাপদ মৈত্র স্যারের বাড়ি। বাড়ির সামনে ছিল বিশাল আমলকি গাছ। শ্যামাপদ স্যার আর আমার আব্বা রেজাউর রহমান সহকর্মী। সে হিসাবে আমার আম্মার সঙ্গে স্যারের স্ত্রীর খুবই সখ্যতা। প্রতিদিন প্রাইমারি স্কুল ছুটি শেষে আম্মা আর স্যারের স্ত্রী সেই গাছের নীচে দাঁড়িয়ে কখনো আধাঘণ্টা, কখনো একঘণ্টা, কখনো ১৫ মিনিট কি যে আলাপ করতেন, তার কোনো শেষ নেই। এটা তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। অনেকেই তা দেখে অনেক সমালোচনা করতো। কিন্তু তাদের সখ্যতার ব্যাঘাত ঘটেনি, ঘটেনি আলাপের ব্যত্যয়ও।

কিছুদিন আগে বাড়ি গিয়েছিলাম, স্কুলের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সেই আমললকি গাছের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। স্যারের সেই বাড়িটি আজ শুনশান নীরবতায় ভরা। শ্যামাপদ স্যারের স্ত্রী ও স্যার দুজনেই মারা গেছেন অনেক আগেই। ছেলেরা কেউ ভারতে, কেউ বাংলাদেশে। বিয়ে হয়ে গেছে মেয়েদের। আমার আব্বাও গত ২০২১ মৃত্যুবরণ করেছেন। আম্মা অবসর নিয়েছেন ১৬-১৭ বছর আগে।

সময়ের সঙ্গে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে অনেকেই, মুছে গেছে অনেক স্মৃতি। কালের সাক্ষী হয়ে এখনো আমাদের মাঝে বেঁচে আছে সেই আমলকি গাছ আর বেঁচে আছেন আমার শিক্ষিকা মা সাহারা বানু।

মা দিবসে আপনাদের দোয়ায় ও আল্লাহর রহমতে আমার আম্মা এবং তাদের স্মৃতিবিজারিত আমলকি গাছ দীর্ঘজীবী হোক, এই কামনা করছি।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়