স্বাগতম মাহে রমজান!
মুফতি আতাউর রহমান || রাইজিংবিডি.কম
ছবি: সংগৃহীত
রহমত, নাজাত ও মাগফিরাতের বার্তা নিয়ে আবারো এসেছে পবিত্র রমজান। মহান আল্লাহর কাছে মুমিনের যত প্রত্যাশা তার সবই ধারণ করে রমজান। কেননা রমজান দয়া ও অনুগ্রহের মাস, রমজান মুক্তি ও ক্ষমা লাভের মাস। রমজান আত্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাস। রমজানের আগমনে খুশি হয় মুমিন। যেভাবে খুশি হতেন তাদের প্রিয় নবীজি (সা.)। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের আগমনে খুশি হতেন এবং রমজানের চাঁদকে অভিনন্দন জানাতেন। রমজানকে স্বাগত জানাতেন তার সাহাবিরাও। হজরত হাসান ইবনে আলী (রা.) চাঁদ দেখে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! এ মাসকে প্রাচুর্য ও জ্যোতির্ময় করুন, পুণ্য ও ক্ষমার মাধ্যম করুন। হে আল্লাহ! আপনি (এ মাসে) আপনার বান্দাদের মাঝে কল্যাণ বিতরণ করবেন, সুতরাং আপনার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য যা বণ্টন করবেন, তা আমাদেরও দান করুন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)
রমজানের আগমনে রাসুলুল্লাহ (সা.) সুসংবাদ দিয়ে বলেন, ‘তোমাদের কাছে বরকতময় মাস রমজান আগমন করল। আল্লাহ তোমাদের ওপর এই মাসের রোজা ফরজ করেছেন, এই মাসে জান্নাতের দরজা খোলা হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয়। শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে যা হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে সত্যিই বঞ্চিত হলো।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২১০৮)
উল্লিখিত হাদিসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) এখানে রমজানের মাহাত্ম্য, মর্যাদা, করণীয় বর্ণনা করেছেন। পাশাপাশি রমজান মাসের ব্যাপারে উদাসীনতার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। যারা আল্লাহর ইবাদত, আনুগত্য, সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে রমজানের মহামূল্যবান সময়কে কাজে লাগাবে তারা মূলত নিজেদের জন্য জান্নাতের দ্বার উন্মুক্ত করল। আর যারা তা করতে সক্ষম হলো না তারা প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত হয়ে গেল।
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর পুরস্কার একজন মুমিনের জীবনে পরম আরাধ্য। হাদিসে এসেছে, রমজানে মুমিনের আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করেন। এটা তো সন্তুষ্টির সাক্ষ্য বহন করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানব সন্তানের প্রতিটি আমলের প্রতিদান ১০ গুণ থেকে সাত শ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, তবে রোজা ছাড়া। কেননা তা শুধু আমার জন্য এবং আমিই তার পুরষ্কার দেবো।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮২৩)
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের প্রতিদান দেওয়া হয় অগণিত।’ (সুরা ঝুমার, আয়াত : ১০)
জীবনযুদ্ধে বিধ্বস্ত ও হতাশ ব্যক্তি রমজানের আগমনে খুশি হয়। কেননা রমজানে আল্লাহ তাঁর দোয়া প্রার্থনার ঘোষণা দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। রোজাদার যতক্ষণ সে ইফতার না করে, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া এবং মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা এসব দোয়াগুলো মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং এর জন্য আকাশের দ্বারগুলো খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহ বলেন, আমার মর্যাদার শপথ! আমি নিশ্চয়ই তোমার সাহায্য করব কিছু বিলম্বে হলেও। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)
কল্যাণকামী মুমিনের প্রতি মহিমান্বিত রমজানেরও একটি আহবান আছে। কোরআনের ভাষায় তা হলো, ‘তোমরা সৎকাজে প্রতিযোগিতা ক।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৪৮)
রমজান আরো আহবান জানাচ্ছে, ‘তোমরা ধাবিত হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের ন্যায়, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩)
আর যারা নেক কাজে অগ্রবর্তী হয় তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহর অঙ্গীকার হলো, ‘অগ্রবর্তীরা তো অগ্রবর্তীই। তারাই নৈকট্যপ্রাপ্ত নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে।’ (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত : ১০-১২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, (এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকে হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২)
আল্লাহ সবাইকে পবিত্র এই মাসের আহবানে সাড়া দেওয়ার এবং ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক: মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ঢাকা।
ঢাকা/লিপি