পাবনা মানসিক হাসপাতালে নতুন পরিচালক, মামলাও খারিজ

রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর পাবনা মানসিক হাসপাতাল নিয়ে নড়েচড়ে বেসেছে স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ২৪ ঘণ্টা পর রোগী ভর্তি শুরুর পর রোগীদের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। একইদিন বিকেলে হাসপাতালের পরিচালক পদে নতুন একজনকে পদায়ন করা হয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রতন কুমার রায় জানান, সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলা পাবনার সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক মামলাটি খারিজ করে দেন। এর ফলে রোগীদের খাবার সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বানে বাধা থাকল না।

হাসপাতালের রোগী ভর্তি বন্ধকাণ্ডের ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক পদে পরিবর্তন করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব থাকা ডা. রতন কুমার রায়কে সরিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাফকাত ওয়াহিদকে পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) পদে পদায়ন করা হয়েছে।

সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের পার-২ অধিশাখার উপ-সচিব জাকিয়া পারভীন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রতন কুমার রায় বলেন, ‘হ্যাঁ বিষয়টি আমিও শুনেছি। গতকাল থেকে হাসপাতাল নিয়ে যেসব ঘটনা ঘটছে তার পরিপ্রেক্ষিতে হয়ত আমাকে সরিয়ে তাকে পদায়ন করা হয়েছে।’ 

খাদ্য ও আর্থিক সংকটে গত রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) থেকে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত মানসিক হাসপাতাল পাবনা মানসিক হাসপাতালে ফ্রি বেডে রোগী ভর্তি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে ফ্রি বেডে চিকিৎসাধীন রোগীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ হয়। ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে হাসপাতালের বহিঃবিভাগে ফ্রি বেডে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। 

হাসপাতালের পরিসংখ্যান সূত্রে জানা গেছে, ৫০০ শষ্যার এই হাসপাতালে এখন আনুমানিক ৪৮০ জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে ১৫০ জনের মতো পেইড বেডে ভর্তি। বাকি রোগীগুলো ফ্রি বেডের।

হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রতন কুমার রায় বলেন, ‘আমরা অনেকবার বিষয়টি সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি, চিঠি দিয়েছি, কিন্তু লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা রোগী ভর্তি বন্ধ রাখি। আমরা চাই দ্রুত বিষয়টি সমাধান হোক। গতকাল রোগী ভর্তি বন্ধ করার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, ফলে আজকে থেকে আবারও রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছি। একই সঙ্গে যেহেতু ঠিকাদারের করা মামলা খারিজ করা হয়েছে, ফলে এই সংক্রান্ত আর কোনও সংকট থাকবে না বলে আশা করছি।’ 

সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ডা. শাফকাত ওয়াহিদ বলেন, ‘হয়তে সংকটময় অবস্থা দেখে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেহেতু সংকট নিয়ে আমি কিছু জানি না, তাই তেমন কিছু বলতে পারছি না। দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি কেমন সেটা দেখে ব্যবস্থা নিতে পারব।’

গত ২০২১ সালের ১৪ জুন পাবনা মানসিক হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রোজ এন্টারপ্রাইজ টেন্ডারে দ্রব্যের নাম উল্লেখ করা নিয়ে জটিলতায় পাবনা জজ কোর্টে মামলা দায়ের করেন। আদালত একই বছরের ২৯ জুন সার্বিক বিবেচনায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিবাদীর (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করলে শুরু হয় জটিলতা।