ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ডেঙ্গুতে শিশুদের আক্রান্তের হার বাড়ছে 

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২  
ডেঙ্গুতে শিশুদের আক্রান্তের হার বাড়ছে 

শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটে এখন ৪৫ জন শিশু চিকিৎসাধীন আছে (ছবি: মেসবাহ য়াযাদ)

সারা দেশে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজার জন। এমনকি বাড়ছে ডেঙ্গুতে শিশুদের আক্রান্তের হারও। 

শ্যামলীতে শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটে এখন ৪৫ জন শিশু চিকিৎসাধীন আছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৭ শিশু। আইসিইউতে রয়েছে ৪ জন। বর্তমান সেপ্টেম্বর মাসের ২৩ দিনে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে দুই শিশু। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে সিট খালি না থাকায় অতিরিক্ত যেসব শিশু ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হচ্ছে, সেসব শিশুদের চিকিৎসা হচ্ছে হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডে।

ডেঙ্গুর লক্ষণ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তাহমিনা বেগম জানান, সাধারণভাবে ডেঙ্গু হলে শরীরে ১০১ থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা হতে পারে। এসময় জ্বর একটানা হতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে আবারও জ্বর আসতে পারে। জ্বরের পাশাপাশি সারা শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে র‌্যাশ হতে পারে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে শরীরের যেকোনো জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তবে এসব লক্ষণ যে সব রোগীদের থাকবে, তাও নয়। এসব লক্ষণ না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে। লক্ষণ দেখা দিলে বা ডেঙ্গু সন্দেহ হলে  দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

তিনি আরও বলেন, শিশুদের প্রতি এসময় অভিভাবকদের বেশি নজর দিতে হবে। বাসা বাড়িতে জমে থাকা স্বচ্ছ্ব পানি নিয়মিত ফেলে দিতে হবে। ভোরে এবং সন্ধ্যায় এডিস মশা কামড়ায়। তাই এসময় অবশ্যই মশারি টানাতে হবে। শিশুদের সারা শরীর ঢাকা পোশাক পরাতে হবে।  

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট সূত্রে জানা গেছে, এবছরের জানুয়ারিতে ২ জন, মার্চে ১ জন, এপ্রিলে ৬ জন, মে মাসে ৯ জন, জুনে ৫১ জন, জুলাইয়ে ১১৫, আগস্টে ১৪০ এবং সেপ্টেম্বরে এখন পর্যন্ত (২২ সেপ্টেম্বর) ১২০ জনের মতো শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সারা দেশে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। এর প্রভাব বেশি পড়ছে শিশুদের ওপর। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সাধারণত রোগী কমার কথা থাকলেও এবার এখনও কমতে শুরু করেনি। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য হাসপাতাল থেকে এখানে শিশু রোগীরা বেশি আসছে। 

এই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রওশন খন্দকার জানান, এ বছর মে মাস থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। শিশু হাসপাতালে শিশুদের জন্য আলাদা ডেঙ্গু কর্নার আছে, যেখানে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয়।

তিনি বলেন, এবারের রোগীদের ধরণ বোঝা যাচ্ছে না। হঠাৎ করেই কারো কারো পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এবারের ডেঙ্গুতে জ্বর, বমি, র‌্যাশ এসব লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে চলে আসছে। পরীক্ষা করলেই ডেঙ্গু পজিটিভ আসছে। অন্য বছরের তুলনায় এবারের লক্ষণ একটু আলাদা।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটের পরিচালক  ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশিই বলা যায়। যাদের অবস্থা ক্রিটিক্যাল, তাদের জন্য আলাদা করে ১৬ বেড বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের দেখার জন্য আলাদা একটা টিম করা হয়েছে, যেই টিমের চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন। এই টিমের চিকিৎসকরা পালা করে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। কারণ ডেঙ্গু রোগীদের অবস্থা প্রতি ঘণ্টায় পরিবর্তন হয়। তাই প্রতি ঘণ্টায় রোগীকে ফলোআপ করতে হয়। 

ডা. মো. জাহাঙ্গীর আরও বলেন, গতকাল (২৩ সেপ্টেম্বর) ৭ জন ভর্তি হয়েছিল। তার আগের দিন (২২ সেপ্টেম্বর) ভর্তি হয়েছে ১৫ জন। বর্তমানে রোগীর চাপ চলছে। রোগীর এই চাপ ঠিক কতদিন থাকবে তা বলা যাচ্ছে না। সাধারণত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই তিন মাস ডেঙ্গুর মৌসুম বলে ধরা হয়। সেপ্টেম্বরতো প্রায় শেষের দিকে, আমরা অক্টোবর পর্যন্ত একটু সতর্ক থাকবো। আশা করছি, এরপর ক্রমে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে যাবে। 

এদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে নতুন করে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ জনে। যার মধ্যে ২৯ জনই মারা গেছেন সেপ্টেম্বর মাসে।

এদিকে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে উঠে এসেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৩টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ডিএনসিসির ১৩টি ওয়ার্ড হলো- ১, ১১, ১৪, ১৬, ১৯, ২০, ২১, ২৪, ২৮, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৯ এবং ডিএসসিসি ১৪টি ওয়ার্ড হলো- ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ৩৪, ৩৮, ৩৯, ৪১, ৪২, ৪৮, ৫১। এসব এলাকার ১২ শতাংশ বাসা-বাড়িতেই এডিস মশার বিস্তার সবচেয়ে বেশি বলেও জরিপে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. রোবেদ আমীন জানান, যেসময় থেমে থেমে বৃষ্টি হবে তখনই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেবে। 

তিনি জানান, ডায়াগনসিস করে দেখা গেছে, ১০০ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৯০ জনেরই মাইল্ড হয়। তারা বাসায় বসেই চিকিৎসা নিতে পারবেন। ডেঙ্গুর ম্যানেজমেন্টের জন্য সাধারণ ফ্লুইড যথেষ্ট। যাদের ওয়ার্নিং সাইন নেই তাদের ক্ষেত্রে শুধু জ্বরের জন্য প্যারাসিটামলই যথেষ্ট। কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। যাদের অনেক জ্বর থাকে তারা যেন প্যারাসিটামলের পাশপাশি কিছু লিকুইড খায়।

ডা. রোবেদ আমীন বলেন, একজন পরিণত মানুষের জন্য প্রতিদিন ৬-৮ গ্লাস জুস, স্যালাইন, স্যুপ, ডাবের পানি খাওয়াই যথেষ্ট। শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যতটুকু ফ্লুইড লাগবে ততটুকু খাওয়াতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৫-৭ দিনে ডেঙ্গু রোগীরা ভালো হয়ে যাবে। তারপরও কারও ওয়ার্নিং সাইন থাকলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। রাজধানীসহ দেশের সব হাসপাতালেই ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

ঢাকা/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়