রহস্যময়ী সুন্দরী রানি নেফারতিতি
রাসেল পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম
নেফারতিতি : ২০১৫ সালে (বাঁয়ে) ও খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৪৫ সালে (ডানে)
রাসেল পারভেজ : অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য মিশরের ফারাও সাম্রাজ্যের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন রানি নেফারতিতি। মিশরীয় ভাষায় নেফারতিতি শব্দের অর্থ ‘একজন সুন্দরীর আগমন হয়েছে’। সৌন্দর্যের সঙ্গে বহু গুণে গুণান্বিত ছিলেন তিনি। যে কারণে স্বামীর পাশাপাশি তিনিও সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনা করতেন।
রানি নেফারতিতির সৌন্দর্য নিয়ে কেউ অবহেলা করলে, তা আজো মিশরীয়দের পীড়া দেয়। ইতিহাসে বর্ণিত রূপের আলোকে এবং ১৯১২ সালে পাওয়া তার একটি আবক্ষ মূর্তির আদলে তৈরি হওয়া গত শতাব্দীর কয়েকটি আবক্ষ মূর্তি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এর মধ্যে সবদিক থেকে সর্বজন গ্রহণযোগ্য মূর্তিটি রয়েছে জার্মানির ন্যুয়েস জাদুঘরে। এই মূর্তিতে রানির সৌন্দর্যের ধার আঁচ করা যায়।
কিন্তু বর্তমানে মিশরীয় কর্তৃপক্ষ রানি নেফারতিতির এমন একটি আবক্ষ মূর্তি তৈরি করে তা জনগণের সামনে হাজির করেছেন, যা নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মিশরীয়রা। প্রশ্ন উঠেছে মিশরের বর্তমান শিল্প চেতনা নিয়ে। এত বাজে হতে পারেন মিশরের ভাস্কররা!
ছবি না দেখলে বোঝা যাবে না- রানি নেফারতিতিকে কতটা বিশ্রীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মিশরের সামালুত শহরের প্রবেশপথে স্থাপন করা হয়েছে তার মূর্তি। আশ্চর্যের ব্যাপার, বর্তমান মিশরীয় ভাস্করদের তৈরি এই মূর্তিতে রানি ধরা পড়েছেন কুচ্ছিত নারী হিসেবে। কিন্তু সৌন্দর্যের কারণেই তার নাম হয়েছিল নেফারতিতি, যিনি সৌর্য-সৌন্দর্যের কারণে আজো মিশরীয়দের গর্বের প্রতীক। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা চলছে, ভর্ৎসনা করা হচ্ছে মিশরীয় কর্তৃপক্ষকে।
যে যাক, এই সুযোগে রানি নেফারতিতিকে আরো একটু জেনে নেওয়ার যায়। যদিও রানির জন্ম, মৃত্যু ও শাসনকাল নিয়ে নিরেট সত্য কোনো তথ্য আজ আর পাওয়া যায় না, কিন্তু তিনি ছিলেন- এটি অমোঘ সত্য। যে কারণে রহস্যে ঘেরা রানি নেফারতিতিকে নিয়ে আজো কৌতূহল থেকে গেছে ইতিহাসবিদদের মধ্যে।
কিন্তু ১২ বছরে শেষ হয়ে যায় নেফারতিতির ইতিহাস। রাজা আখেনাটেনের শাসনামল শুরু হওয়ার ১২ বছর পরে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তার। কী হয়েছিল তার? তিনি কি মারা গিয়েছিলেন নাকি রাজার সঙ্গে শত্রুতায় লিপ্ত হয়েছিলেন, যে কারণে রাজা তাকে খুন করে গুম করে ফেলেছিলেন। সঠিক কোনো উত্তর আজো পাওয়া যায়নি। তবে কেউ কেউ মনে করেন, পুরুষের বেশ ধরে তিনি আখেনাটেনের মৃত্যুর পরেও রাজশাসন চালিয়ে গেছেন। আবার কেউ বলেছেন, তিনি অন্য কোনো দেশে নির্বাসিত হয়েছিলেন।
সূর্য দেবতার উপাসক
রানি নেফারতিতির উদ্যোগে তাদের রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় একেশ্বরবাদ। সূর্য দেবতা ছাড়া আর কোনো দেবতার প্রার্থনা নিষিদ্ধ হয়। অ্যাটেন কাল্ট বা সূর্য সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয় তাদের প্রচেষ্টায়। এই ধর্মের কারণে রাজা চতুর্থ অ্যামেনহোটেপ তার নাম পাল্টে রাখেন আখেনাটেন। রানি নেফারতিতিও তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘নেফারনেফারুয়ানতেন-নেফারতিতি’, যার অর্থ ‘সুন্দরীরা সূর্য সম্প্রদায়ের সৌন্দর্য’।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জুলাই ২০১৫/রাসেল পারভেজ/এএন
রাইজিংবিডি.কম