ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

পাইলট প্রকল্পে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বন্ধে বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের আহ্বান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ৮ জুন ২০২৩   আপডেট: ২১:৩৪, ৮ জুন ২০২৩
পাইলট প্রকল্পে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বন্ধে বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের আহ্বান

পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ বাংলাদেশকে দ্রুত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ। সংস্থাটির মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুস এ আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার মানবাধিকার পরিষদের ওয়েবসাইটে দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

টম অ্যান্ড্রুসের দাবি, মিয়ানমারের রাখাইনে এখনো রোহিঙ্গাদের জীবন ও চলাচলের স্বাধীনতা ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশ ‘বিভ্রান্তিমূলক’ এবং ‘বলপ্রয়োগের’ মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে বাধ্য করছে।

আরো পড়ুন:

জাতিসংঘের বিশেষ দূত বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে স্থায়ীভাবে ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক নয়। যেই সিনিয়র জেনারেল মিন হং হ্লায়েং রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনিই এখন নিষ্ঠুর এক সামরিক জান্তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যারা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও অন্যান্য মৌলিক অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করে চলছে।’

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,  বাংলাদেশের কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তারিখ উল্লেখ না করলেও প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ১৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন। চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হবে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, প্রথম দফার প্রত্যাবাসন শিগগিরই হতে পারে। যারা বাংলাদেশ সরকারের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে, তাদেরকে গ্রেপ্তারের হুমকি, কাগজপত্র জব্দ ও নানা ধরনের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

টম অ্যান্ড্রুস বলেন, ‘আরও খবর পাওয়া গেছে যে, শরণার্থীরা ফিরে যেতে রাজি হলে তাদের বিপুল অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতির দেওয়া হয়েছে। এমনও অভিযোগ এসেছে যে, রোহিঙ্গাদের প্রতিদিনের খাবারের বরাদ্দ যখন কমছে, তখন তাদের অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়া রোহিঙ্গাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রতিশ্রুত অর্থ কোথা থেকে আসবে সেটা স্পষ্ট নয়।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের নিজেদের গ্রামে ফিরতে দেওয়া হবে না। ২০১৭ সালের গণহত্যার সময় যে হামলা চালানো হয়েছিল, তখন অনেক গ্রাম গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মংডুর অভ্যর্থনা ও অন্তর্বর্তীকালীন শিবিরে রাখা হবে। এর পরে তাদের নতুন করে তৈরি ১৫টি গ্রামে নেওয়া হবে। সেখানে তাদের অবাধে চলাফেরা করতে দেওয়া হবে না।  

গত মার্চে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের সামরিক জান্তার দুটি প্রতিনিধি দলকে (এসএসি) কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের ব্যবস্থা করেছিল। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কয়েকজন রোহিঙ্গাকে জোর করে পরিচয় যাচাইয়ের জন্য এসএসির সঙ্গে বসতে বাধ্য করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সম্মিলিতভাবে রোহিঙ্গাদের রাখাইন সফরের আয়োজন করেছিল। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, প্রত্যাবাসনের আয়োজন নিয়ে ‘সাধারণভাবে সন্তুষ্টি’ প্রকাশ করেছে রোহিঙ্গারা। কিন্তু বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে, রাখাইনে ঘুরে এসে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে।

টম অ্যান্ড্রুস বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে রোহিঙ্গারা ব্যাপকতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে নৃশংস অপরাধের শিকারে পরিণত হতে পারে বিধায় আন্তর্জাতিক আইনে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন হবে। তাই, আমি বাংলাদেশকে দ্রুত এই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্প স্থগিতের অনুরোধ করছি।’

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়