ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২০ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ৭ ১৪৩১

সুন্দরবনে বাঘের মুখ থেকে জীবিত উদ্ধারের লোমহর্ষক ঘটনা

কলকাতা ব্যুরো || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ২১:৫৫, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সুন্দরবনে বাঘের মুখ থেকে জীবিত উদ্ধারের লোমহর্ষক ঘটনা

লাটি দিয়ে বারবার বাড়ি দেওয়ার পর বাঘটি লোকটিকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। সোমবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কুলতলি ব্লকের মৈপীঠ-বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের ঘটনা।

সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের টাইগার রিজার্ভ এলাকায় এক বনকর্মী বাঘের মুখে থেকে বেঁচে ফিরেছেন। একেবারে হামলে পড়ে লোকটির শরীর খাবলে নিচ্ছিল বাঘটি। তবে শেষরক্ষা হলেও সেই ঘটনা নিয়ে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়।

সোমবারেরই (১০ ফেব্রুয়ারি) ঘটনা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কুলতলি ব্লকের মৈপীঠ-বৈকুণ্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নগেনাবাদে সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রামে বাঘের হামলার এই ঘটনা ঘটে। অবশ্য তখন বনকর্মীদের ক্যামেরা চালু ছিল। 

ফুটেজে দেখা যায়, বনকর্মীরা সংখ্যায় ৮ থেকে ১০ জন ছিলেন। তাদের গায়ে ছিল কালো টি-শার্ট। এসময় হঠাৎ করে বাঘটি তাদের দিকে আসার পরই চিৎকার শোনা যায়। ওই সময়ে বাঘটি বনকর্মীদের একজনের ওপর হামলে পড়ে। 

আরো পড়ুন:

তখন অন্যারা বাঘটিকে পিটিয়ে তাদের সহকর্মীকে ছিনিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে বাঘটি বনকর্মীকে ছেড়ে বনের গহীনে দৌড়ে চলে যায়।

বাঘের হামলায় আহত বনকর্মীকে উদ্ধার করে প্রথমে কাছের একটি হাসপাতালে নেওয়া  হয়। ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (ডিএফও) নিশা গোশ্বামী বলেন, স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কলকাতার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। 

তিনি আরো বলেন, ওই বনকর্মীর শরীরে বাঘের কাঁমড়ের একাধিক চিহ্ন রয়েছে। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল। 

সোমবার সকালে মৈপীঠ কোস্টাল থানার নগেনাবাদ এলাকায় একটি বাগানে লুকিয়ে থাকতে দেখা যায় বাঘটিকে। সেই মতো তাকে তাড়াতে যায় বনকর্মীদের একটি দল। সঙ্গে ছিলেন এলাকার বাসিন্দারাও। তখনই বাঘটি ওই বনকর্মীকে প্রথমে থাবা মারে এবং তার হাতে কামড় বসায়। সোমবার সকালে লোকালয়ে চলে এসে সুন্দরবনের বাঘ। এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।

মৈপীঠ-বৈকুণ্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নগেনাবাদ ৯ নম্বর মুলার জেটি ঘাটের কাছে রবিবার বিকালে স্থানীয় রাজকুমার সাফুঁই নামে এক যুবক বসেছিলেন। ঠিক তখনই তার নজরে আসে যে জেটিঘাট-সংলগ্ন শ্মশান ঘাটের কাছে একটি বাঘ ঘোরাঘুরি করছে। সে অবস্থায় বাঘ বাঘ চিৎকার করে ওই যুবক সাইকেল ফেলে দৌড়ে বাড়িতে চলে যান।

মূহূর্তের মধ্যে গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে বাঘ ঢোকার খবর। এরপর ওই যুবকের কাকা শম্ভু সাফুঁই  লাঠি সোটাসহ এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাম লাগোয়া ম্যানগ্রোভের ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে এসে দেখেন বাঘের টাটকা পায়ের ছাপ। যদিও বাঘ তাদের নজরে আসেনি। ততক্ষণে বাঘটি লোকজনের ঝোঁপঝাড়ে মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। এরপর সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম থেকে সেই বাঘ ঢোকার খবর জানানো হয় বনদপ্তরের রায়দিঘি রেঞ্জের অন্তর্গত নলগোড়া বিট অফিসে। সেই সঙ্গে জানানো হয় স্থানীয় মৈপীঠ উপকূল থানায়। বাঘ ঢোকার খবর পেয়ে দ্রুত নৌকায় জাল নিয়ে পৌঁছান বনকর্মীরা।

জেটি ঘাটে চলে আসেন পুলিশ কর্মীরাও। এরপর যাতে বাঘটি কোনোভাবে রাতে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়তে না পারে, সে জন্যই গ্রামের দিক বরাবর নাইলনের জাল লাগিয়ে দেওয়া হয়। যদিও বাঘটি গ্রামের দিকে জালের কাছে চলে এসেছিল বলে দাবি গ্রামবাসীদের। বাঘটি আবার রাতের অন্ধকারে নিজের জঙ্গলে ফিরে যেতে পারে, সে জন্য জঙ্গলের দিকটা যেমন খুলে রাখা হয়েছিল, তেমনি গ্রামের দিকে নদী বাঁধের ওপর রাতে প্রহরার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সোমবার সকাল হলে আবার গ্রামে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে বাঘের অবস্থান জানার কাজ শুরু করে বনকর্মীরা। আর তখনই ঘটে দুর্ঘটনা।

ঢাকা/কংসবিনক/রাসেল

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়