ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাংলাদেশকেও পানি দেওয়া বন্ধের দাবি বিজেপির

কলকাতা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৯, ২৭ এপ্রিল ২০২৫   আপডেট: ২২:৪৪, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশের সাথে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি বাতিল করার দাবি তুললেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সংসদ সদস্য নিশিকান্ত দুবে।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) বার্তা সংস্থা এএনআইর সঙ্গ কথা বলার সময় বাংলাদেশের পানি বণ্টন চুক্তি প্রত্যাহারের বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

আরো পড়ুন:

সম্প্রতি ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গেও একইভাবে পানি বণ্টন চুক্তি বাতিলের দাবি করেছেন দুবে।

ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তিতে ত্রুটি রয়েছে বলেও অভিমত দুবের।

দুবে বলেন, “গঙ্গার পানি চুক্তির সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার ভুল করেছিল। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী (নীতীশ কুমার) বরাবর এই কথা বলে আসছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তির বিরোধিতা করেছেন। এমনকি আসামের মুখ্যমন্ত্রী (হিমন্ত বিশ্ব শর্মা) ব্রহ্মপুত্রের পানি বাংলাদেশে যাওয়ার বিরোধিতা করেছেন।”

তিনি বলেন,  “সাপের দলকে আমরা কত দিন পানি দেব? এবার থেঁতলে মারার সময় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ওপর গোটা দেশের মানুষের ভরসা রয়েছে। তাই এই কাজটাও খুব তাড়াতাড়ি হবে।”

দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিশিকান্ত দুবে। 

পাকিস্তানের জঙ্গিসংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে বাংলাদেশের ইউনূস সরকারের যোগ রয়েছে বলে দাবি করে নিশিকান্ত বলেন, “লস্কর-ই-তৈয়বা লাগাতার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। তাই জঙ্গি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্ত সুরক্ষিত করা প্রয়োজন।” 

এর আগে শনিবারই সোশ্যাল মিডিয়াতে নিশিকান্ত লিখেছিলেন, “বাংলাদেশিরা বড্ড ছটপট করছে। ওদের গঙ্গার পানি দেওয়া বন্ধ করার সময় এসেছে। আমাদের দেওয়া পানি খেয়ে বাঁচবে, আর পাকিস্তানের গুণগান করবে!”

বিজেপি সাংসদ সদস্যের এই টুইট সামনে আসার পরেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়। যদিও রবিবার ফের একবার এই একই ইস্যুতে বাংলাদেশকে নিশানা করেন তিনি।

গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে বিজেপি নেতা এমন বক্তব্য দিলেও ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এ নিয়ে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি হয়, যার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ১২ ডিসেম্বর। এই অবস্থায় দুই দেশ চুক্তি নবায়ন নিয়ে কথা বলছে।

দুই বা ততোধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আন্তর্জাতিক নদীর পানিবণ্টন নিয়ে জাতিসংঘের ১৯৯৭ সালের কনভেশন রয়েছে, যার নাম দ্য কনভেনশন অন দ্য ল অব নন-ন্যাভিগেশনাল ইউজেস অব ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারকোর্সেস-১৯৯৭। দ্বিপক্ষীয় বা আঞ্চলিক পানি চুক্তির ক্ষেত্রেও এই কনভেনশনটিকে ভিত্তি হিসেবে ধরার কথা বলা আছে। কিন্তু বাংলাদেশ বা ভারত- কেউই এই আইনটিতে স্বাক্ষর করেনি। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হয়নি, দুই দেশের সমঝোতার ভিত্তিতে হয়েছে।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিন্ন বড় নদীর সংখ্যা ৫৪টি। এসব নদী প্রায় প্রতিটির ক্ষেত্রে উজানে বাঁধ দিয়ে রেখেছে ভারত। শুধু গঙ্গা নদীর উজানেই তারা এ পর্যন্ত প্রায় ৩৬টি ব্যারাজ ও বাঁধ তৈরি করেছে, ফলে গঙ্গার বাংলাদেশ অংশে পদ্মার বেশিরভাগটাই এখন মৃতপ্রায়, তার বুকে জেগেছে বড় বড় চর।

ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে, দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী করার দাবি রয়েছে। পানির ওপর ভাটির দেশের অধিকার সমুন্নত রাখার আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নতুন চুক্তি করার তাগিদ রয়েছে। 

ঢাকা/শাহেদ/রাসেল

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়