যুক্তরাজ্যে রাতের বেলায় মসজিদে ঢুকে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা
যুক্তরাজ্যের পূর্ব সাসেক্সের পিসহ্যাভেন শহরে অবস্থিত একটি মসজিদে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভেতরে দুজন লোক থাকা অবস্থায় আগুন দেওয়ার এই ঘটনাটি ঘৃণামূলক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করছে দেশটির পুলিশ।
সিএনএন জানিয়েছে, শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ উপকূলে ব্রাইটনের কাছে পিসহেভেনের মসজিদে আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে যান জরুরিকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মসজিদের এক স্বেচ্ছাসেবক সিএনএনকে বলেন, শনিবার রাতে দুজন মুখোশধারী জোর করে মসজিদের দরজা খোলার চেষ্টা করে। এরপর তারা সিঁড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মসজিদের ব্যবস্থাপকের জানান, মসজিদের চেয়ারম্যান এবং একজন মুসল্লি ভেতরে চা খাচ্ছিলেন- দুজনেই ষাটোর্ধ্ব। ঠিক তখনই তারা বাইরে থেকে একটি বিকট শব্দ শুনতে পান এবং আগুনের শিখা প্রধান প্রবেশপথজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তারা মসজিদ থেকে বের হয়ে যান।
মসজিদের ব্যবস্থাপকের মতে, ভেতরে থাকা লোকেরা সহজেই মারা যেতে পারত। দুর্বৃত্তরা সর্বাধিক ক্ষতি করার পূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিল।
রবিবার সাসেক্স পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, এই অগ্নিকাণ্ডে কেউ আহত না হলেও, মসজিদের সামনের প্রবেশপথ এবং বাইরে পার্ক করা একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ডিটেকটিভ সুপারিনটেনডেন্ট ক্যারি বোহনা বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি এই ঘটনার জেরে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর কী প্রভাব পড়বে।”
তিনি আরো বলেন, “ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এটিকে ঘৃণামূলক অপরাধ হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে।”
প্রায় চার বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ছোট এই মসজিদটিতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন নিয়মিত নামাজ পড়তেন।
লুইস জেলার লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপি জেমস ম্যাকক্লেরি এক্স-পোস্টে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, “পিসহ্যাভেনের মসজিদে আগুন লাগার খবরটি ভয়াবহ। এটি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দারা ব্যবহার করেন এবং এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
ম্যানচেস্টার শহরে ইহুদি উপাসনালয় সিনাগগে প্রাণঘাতী হামলার কয়েক দিন পর সাসেক্সের মসজিদে আগুন লাগানোর এই ঘটনা ঘটলো।
স্থানীয় অলাভজনক সংস্থা ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ মুসলিম ফোরামের চেয়ারম্যান তারিক জং দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, তিনি ম্যানচেস্টারে উপাসকদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার পর ছুরি হামলায় দু’জনের প্রাণহানি এবং শনিবার মসজিদে সন্দেহজনক অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হতবাক।
তিনি বলেন, মানুষ কখনোই এই ভেবে উপাসনালয়ে যায় না যে, তারা আক্রান্ত হতে পারেন। তারা সেখানে প্রায়শ্চিত্ত, ক্ষমা প্রার্থনা, নিজেদের এবং পরিবার ও প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা করতে যান। সেখানে কেউ তাদের খুন, গুলিবর্ষণ, ছুরিকাঘাত কিংবা আগুন ধরিয়ে দিতে চাইতে পারেন, এমন চিন্তা কখনোই তাদের মনে আসে না।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামাসের হামলা এবং পরবর্তীতে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের পর থেকে যুক্তরাজ্যে ইহুদি-বিদ্বেষ এবং মুসলিম-বিদ্বেষ উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ