ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২২, ৮ অক্টোবর ২০২৫   আপডেট: ১৪:২৫, ৮ অক্টোবর ২০২৫
ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের পক্ষে রোমের সমর্থনের কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) দায়ের করা একটি অভিযোগে তাকে ‘গণহত্যায় সহযোগিতার’ অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মেলোনি এই মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল আরএআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। আন্তর্জাতিক আদালত থেকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নিশ্চয়তা না আসায় এই পরিস্থিতি নিয়ে এটিই তার প্রথম জনসমক্ষে মন্তব্য। খবর আলজাজিরার।

আরো পড়ুন:

মেলোনি বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী গিদো ক্রোসেতো এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানিকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত বলতে তিনি এমন একটি পরিস্থিতি বোঝান, যখন আদালতকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্ভাব্য কোনো অপরাধ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়। ইতালির প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে ইতালীয় অস্ত্র ও মহাকাশ সংস্থা লিওনার্দোর প্রধান রবার্তো সিঙ্গোলানির নামও থাকতে পারে।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবর অনুসারে, ১ অক্টোবর তারিখের এই অভিযোগে আইন অধ্যাপক, আইনজীবী এবং বেশ কয়েকজন জনসাধারণ সহ প্রায় ৫০ জন স্বাক্ষর করেছেন, যারা মেলোনি এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করার অভিযোগ এনেছেন।

ইতালির নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা আদালতের মামলার লেখকরা লিখেছেন, ‘ইসরায়েলি সরকারকে সমর্থন করে, বিশেষ করে প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে, ইতালির সরকার চলমান গণহত্যা এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অত্যন্ত গুরুতর যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে সহযোগী হয়েছে।’

এএফপি আরো জানিয়েছে, মেলোনির নাম উল্লেখ করে অভিযোগের পিছনে থাকা ফিলিস্তিনি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ আদালতকে মেলোনির বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করার সম্ভাবনা মূল্যায়ন করার আহ্বান জানিয়েছে।

গত মাসে জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্তে দেখা গেছে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ গণহত্যার সমতুল্য, যা মানবাধিকার, গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক আইনের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের পূর্বের মতামতের সঙ্গে সামঞ্জ্যপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইতিমধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে খাদ্য সরবরাহে বাধা, হত্যা এবং নিপীড়ন।

তবে, নেতানিয়াহু বা গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়নি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত হামাস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। কিন্তু হামাসের যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, তারা সবাই পরবর্তীতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, “আমি মনে করি, এমন ধরনের অভিযোগের আর কোনো উদাহরণ নেই বিশ্বে বা ইতিহাসে।”

স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ইসরায়েলের কাছে ‘প্রধান সামরিক অস্ত্র’ রপ্তানি করেছে মাত্র তিনটি দেশ, যার মধ্যে একটি ছিল ইতালি। যদিও বড় ধরনের অস্ত্র, যেমন বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংক ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রায় ৯৯ শতাংশই রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি।

এসআইপিআরআই জানিয়েছে, এই সময়ে ইতালি ইসরায়েলকে যে প্রধান অস্ত্র সরবরাহ করেছিন, তার মধ্যে ছিল হালকা হেলিকপ্টার ও নৌযানের বন্দুক। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন প্রোগ্রামের আওতায় এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের কিছু যন্ত্রাংশ উৎপাদনে জড়িত দেশগুলোর মধ্যে ইতালি ছিল।

এসআইপিআরআই-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েল এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন করতে পারে এমন আশঙ্কার কারণে বিমান বা এর যন্ত্রাংশ ইসরায়েলের কাছে রপ্তানি নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে।’

ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গিদো ক্রোসেতো বলেছেন, ইতালি কেবল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আগে স্বাক্ষরিত চুক্তির অধীনে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করছে এবং ইতালি ইসরায়েলের কাছে নিশ্চয়তা চেয়েছে যে, এসব অস্ত্র গাজার সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে না। এর আগে উপ-প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি দাবি করেছিলেন যে, ইতালি ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

মেলেনির অভিযোগের স্বীকারোক্তি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন সাম্প্রতিক সপ্তাহে ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধে সহিংসতার প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ দেশটির রাস্তায় নেমেছেন। এমনকি ইতালির প্রধান শ্রম ইউনিয়নগুলোও এই বিক্ষোভে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়