ঢাকা     শনিবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১২ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বেলারুশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া: জেলেনস্কি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৩:২৯, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
বেলারুশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া: জেলেনস্কি

ইউক্রেনের আবাসিক এলাকায় হামলা চালাতে ও কিয়েভের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে রাশিয়া তার মিত্র বেলরুশের ভূখণ্ড ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। 

শনিবার (২৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। 

আরো পড়ুন:

শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে জেলেনস্কি বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি যে, রাশিয়ানরা প্রতিবেশী বেলারুশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে আমাদের প্রতিরক্ষামূলক ইন্টারসেপ্টর অবস্থানগুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বেলারুশকে এর জন্য মূল্য দিতে হতে পারে।”

এর আগে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দাবি করেন, মস্কো সম্ভবত পূর্ব বেলারুশের একটি সাবেক বিমানঘাঁটিতে তাদের নতুন পারমাণবিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। এটিকে ইউরোপে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার রাশিয়ার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হচ্ছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, “এটি দুর্ভাগ্যজনক যে, বেলারুশ রাশিয়ার আগ্রাসী উচ্চাকাঙ্ক্ষার স্বার্থে নিজের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিচ্ছে।”

জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো লক্ষ্য করেছে যে, বেলারুশ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলোতে, এমনকি আবাসিক ভবনের উপরেও রুশ বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য সরঞ্জাম মোতায়েন করছে।

তিনি বলেন, “সাধারণ পাঁচ তলা অ্যাপার্টমেন্টের ছাদে অ্যান্টেনা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে, যা ‘শাহেদ’ (রুশ ড্রোন) গুলোকে আমাদের পশ্চিম অঞ্চলের লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এটি মানুষের জীবনের প্রতি চরম অবজ্ঞা এবং মিনস্কের উচিত এই খেলা বন্ধ করা।”

রাশিয়া এবং বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

রাশিয়া এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলার জন্য বেলারুশের ভূখণ্ড ব্যবহার করেছিল। বেলারুশ রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি এই যুদ্ধে কোনো সেনা পাঠাবেন না।

এদিকে, ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুই মার্কিন গবেষকের উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে- রাশিয়া পূর্ব বেলারুশে তাদের নতুন পারমাণবিক হাইপারসোনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ওরেশনিক’ মোতায়েন করছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দাবি, ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করা অসম্ভব। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর পাল্লা প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার (৩ হাজার ৪০০ মাইল)।

ক্যালিফোর্নিয়ার মিডলবারি ইনস্টিটিউটের গবেষক জেফরি লুইস এবং ভার্জিনিয়ার সিএনএ গবেষণা ও বিশ্লেষণ সংস্থার ডেকার এভেলেথ বলেছেন, তারা ৯০ শতাংশ নিশ্চিত যে- মিনস্ক থেকে প্রায় ৩০৭ কিলোমিটার পূর্বে ক্রিচেভ শহরের একটি সাবেক রুশ বিমানঘাঁটিতে ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপক স্থাপনা করা হবে।

মার্কিন গবেষকরা বলছেন, উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, আগস্টের শুরুতে সেখানে একটি দ্রুত নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়, যার বৈশিষ্ট্যগুলো রুশ কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এভেলেথ জানান, ১৯ নভেম্বরের একটি ছবিতে নিরাপত্তা বেষ্টনী ঘেরা ‘মিলিটারি-গ্রেড রেল ট্রান্সফার পয়েন্ট’ দেখা গেছে, যা একটি বড় প্রমাণ যে- ক্ষেপণাস্ত্র, উৎক্ষেপণ সিস্টেম ও অন্যান্য উপাদান ট্রেনের মাধ্যমে ঘটনাস্থলে পৌছে দেওয়া যেতে পারে।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, গবেষকদের মূল্যায়ন মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে ব্যাপকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

রাশিয়া এবং বেলারুশ এখনও রয়টার্সের প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

তবে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো চলতি মাসের শুরুতে স্বীকার করেন যে, তার দেশে এ ধরনের অস্ত্র মোতায়েন করা হচ্ছে এবং প্রায় ১০টি ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র সেখানে থাকবে। বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ভিক্টর ক্রেনিন একে পশ্চিমা বিশ্বের ‘আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের’ জবাব হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বেলারুশে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের খবরে মন্তব্যের অনুরোধের জবাবে হোয়াইট হাউজ তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।

আজ শনিবার ভোরে রাশিয়া ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে করে ইউক্রেনের রাজধানীতে আবারো বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী।

আগামীকাল রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির, যেখানে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে।

ঢাকা/ফিরোজ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়