ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘লকডাউনে দিন মজুরদের রেশনিং কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে’

জে.খান স্বপন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৩ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘লকডাউনে দিন মজুরদের রেশনিং কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে’

ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। দলের চেয়ে দেশ। কিন্তু দশের প্রয়োজনে, দেশের কল্যাণে ব্যক্তির কর্মকা- যখন দল ছাপিয়ে সর্বজনে আলোচিত হয় তখন তাকেই বলে যোগ্য নেতৃত্ব। ডা. মনীষা চক্রবর্তী ইতোমধ্যেই অনন্য নেতৃত্বগুণে সাধারণ মানুষের কাছে ‘গরিবের বন্ধু’ পরিচিতি পেয়েছেন। করোনাভাইরাস উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে তার নেতৃত্বে বরিশালের গণমানুষের জন্য একের পর এক ব্যতিক্রমী আয়োজন প্রশংসিত হচ্ছে। করোনা ছড়িয়ে পড়ার শুরুতেই ‘ঝুঁকিতে বাংলাদেশ: বরিশালের প্রস্তুতির ঘাটতি ও আমাদের কর্মসূচি’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলন করে তার দল। নগরীর মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে দরিদ্রদের মধ্যে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লাভস বিতরণ করে তারা। এরপর বরিশাল লকডাউন ঘোষণা করলে ‘এক মুঠো চাল’ কর্মসূচি হাতে নেয় মনীষার দল। একই কর্মসূচির আওতায় শুরু করে ‘মানবতার বাজার’। পাশাপাশি মনীষার দল চালু করে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। সুরক্ষিত অটোরিকশার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে কাজ করছে এই অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। এভাবেই এই দুঃসময়ে বরিশালবাসীর আশার আলো হয়ে পাশে আছেন ডা. মনীষা চক্রবর্তী এবং তার দল। কীভাবে এতো দ্রুত পরিকল্পনা করে তিনি মানুষের পাশে দাঁড়ালেন? এ সময় সাধারণ মানুষের জন্য তিনি কী ভাবছেন? সর্বদলীয় বৈঠকের পরিকল্পনা ইত্যাদি জানতে রাইজিংবিডি মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তীর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির জেলা প্রতিনিধি জে. খান স্বপন।

জে. খান স্বপন: আমি যতটুকু জানি, আপনি বা আপনার দল বেশ আগে থেকেই বরিশালে করোনা নিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করেছেন। যখন অন্যরা বিষয়টি বুঝতেই পারেনি। আপনারা ঠিক কখন বিষয়টি বুঝতে পারলেন?

ডা. মনীষা চক্রবর্তী: করোনাভাইরাসের উৎপত্তি স্থল চীন। এরপরই বিশে^র বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়গুলো কিন্তু গত বছরের শেষ দিক থেকেই মিডিয়ায় আসছিল। কিন্তু তখন সরকারের ভূমিকা ছিলো নীরব। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের যোগাযোগের মাধ্যমে যখন এই ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে তখনও এই দেশের সরকার বিমান চলাচল অব্যাহত রেখেছে। যার ফলে বর্তমানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বাংলাদেশে গত মার্চে এই ভাইরাস শনাক্ত হলেও আমরা কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মানুষের মাঝে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। এর পাশাপাশি সরকারের এমন উদাসিন আচারণের প্রতিবাদ জানিয়ে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেছি।

জে. খান স্বপন: দাবিগুলো কী কী?

ডা. মনীষা চক্রবর্তী: বরিশাল বিভাগীয় শহর হলেও আমরা দেখতে পাচ্ছি; বিশে^র মানুষ উদ্বিগ্ন হলেও এই প্রাণঘাতী ভাইরাস নিয়ে বরিশালের প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দিক থেকে দৃশ্যমান উদ্যোগ ছিলো না। যখন একের পর এক মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তখন তারা নড়েচড়ে বসেছেন। অথচ আগেভাগে তাদের প্রস্তুতি থাকলে এমন হতো না। যেমন করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিভাগীয় শহর বরিশালে কমপক্ষে ১০০০ বেডের হাসপাতাল, জেলা পর্যায়ে ৫০০ বেড ও উপজেলা পর্যায়ে ২০০ বেডের হাসপাতাল তৈরি করা উচিৎ ছিল। সাথে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ১০০ ভাগ সুরক্ষা সমগ্রী প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এখন পর্যন্ত সরকার এগুলো নিশ্চিত করতে পারেনি বলে এই বিভাগে এখন অসংখ্য চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এর পাশাপাশি আমরা বলেছি, প্রতিদিন কমপক্ষে ১ হাজার মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে।

জে. খান স্বপন: সরকার ঘোষিত লকডাউন সফল হচ্ছে না। কী করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

ডা. মনীষা চক্রবর্তী: লকডাউন ঘোষণার আগে গরিব, কর্মজীবী মানুষকে নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা করা উচিৎ ছিলো। লকডাউনে দৈনিক মজুরীতে খেটে খাওয়া মানুষকে রেশনিং কর্মসূচির আওতায় আনা খুব জরুরি। তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সহযোগিতা নিশ্চিত করে লকডাউন আরো কার্যকর করতে হবে। লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে সহযোগিতা দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এ কারণে বাড়ি বাড়ি নিজেদেরই যেতে হবে। কৃষকদের সুদে নয়, নগদ অর্থ সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

জে. খান স্বপন: এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে আপনার দলের কর্মসূচি কী?

ডা. মনীষা চক্রবর্তী: বরিশালে আমরা গত ৪ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম সেমিনার আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমাদের কার্যক্রম শুরু করি। এরপর এ পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষাধিক প্রচারপত্র ও ১০ হাজার স্টিকার, মাইকিং ইত্যাদির মাধ্যমে বরিশালবাসীকে সচেতন করার আহ্বান জানাতে থাকি। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে এ পর্যন্ত ১০ সহ¯্রাধিক বোতল হ্যান্ডওয়াশ ও জীবাণুনাশক তৈরি করে বিলি করেছি। রোগীসেবা নিশ্চিত করতে আমরা ১০টি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করেছি। আমরা ‘এক মুঠো চাল’ কর্মসূচির আওতায় গরিব পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছি। আমাদের এই কার্যক্রমটি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে। প্রতিদিন ভোরে এবং সন্ধ্যার পরে আমাদের স্বেচ্ছাসেবী দল যথাযথ সুরক্ষা পোশাক পরে এলাকাগুলোতে দুস্থ মানুষদের ঘরে ঘরে গিয়ে প্রয়োজনীয় খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। ‘মানবতার বাজার’ চালু করে প্রতিদিন দুইশ পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছি। তবে করোনাভাইরাসের আপদকাল দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। এ কারণে এই কার্যক্রম আরো দীর্ঘস্থায়ী করতে আমরা সবার সহযোগিতা চাচ্ছি। ইতোমধ্যে জনগণ আমাদের সহযোগিতা করছে। আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।

জে. খান স্বপন: আপনারা বরিশালে সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন। কেমন সাড়া পেলেন?

ডা. মনীষা চক্রবর্তী: আমরা মনে করি, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ। তাই বাসদের উদ্যোগে ২০টি সংগঠনের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে গত ২০ এপ্রিল। বিএনপি, ওয়ার্কাস পার্টি, জাসদ, উদীচী, বাংলাদেশ কবিতা পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ ২০টি রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই কমিটির সদস্য। এই কমিটি ত্রাণ সরবরাহের সমন্বয়, মেডিকেল সার্ভিস দেওয়া, সচেতনতা তৈরি, এলাকায় এলাকায় দক্ষ ভলান্টিয়ার টিম প্রস্তুত করাসহ সরকারি উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় করে ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে বরিশালে করোনা প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করবে।

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়