ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘সিডর আইলা আম্পান ঠেকানোর সামর্থ্য উপকূলীয় বেড়িবাঁধের নেই’

রফিকুল ইসলাম মন্টু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ৮ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘সিডর আইলা আম্পান ঠেকানোর সামর্থ্য উপকূলীয় বেড়িবাঁধের নেই’

উপকূলীয় অঞ্চলের ভালো-মন্দ দেখভালের জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। তার সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে বেড়িবাঁধ নিয়ে সরকারের চিন্তা-ভাবনা ও কর্মসূচির কথা। গত ২১ জুন টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি অতি পুরাতন উপকূলীয় বেড়িবাঁধ যুগোপযোগী করার প্রয়েজনীয়তাও তুলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু।

রফিকুল ইসলাম মন্টু : পশ্চিম উপকূলের বাঁধের সমস্যাকে কীভাবে দেখছেন?

কবির বিন আনোয়ার : বাঁধগুলো অনেক পুরনো। এগুলোর কেবল সাধারণ জোয়ার ঠেকানোর ক্যাপাসিটি আছে। বাঁধের উচ্চতা আছে তিন মিটার থেকে সাড়ে তিন মিটার। ঘূর্ণিঝড় আম্পান বা সিডর-আইলার মতো বড় ঘূর্ণিঝড় ঠোকানোর সামর্থ্য এই বেড়িবাঁধের নেই। বাঁধ শক্তিশালী, উঁচু এবং চওড়া করা দরকার।

রফিকুল ইসলাম মন্টু : কীভাবে সেটা সম্ভব বলে মনে করেন?

কবির বিন আনোয়ার : আমরা বলেছি ন্যাচারবেজড সল্যুশন করতে হবে। প্রচুর ম্যানগ্রোভ সৃজন করতে হবে। এসব কাজের জন্য আমাদের চারটি প্রকল্পের মাধ্যমে সাতক্ষীরা থেকে শুরু করে একেবারে বাগেরহাটের শেষ পর্যন্ত কাজ হবে। স্থায়ী কাজ না হওয়া পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ চলতেই থাকেবে। জিওব্যাগ দিয়ে আমরা মেরামত কাজ অব্যাহত রেখেছি।

রফিকুল ইসলাম মন্টু :  জরুরিভিত্তিতে কী করা হচ্ছে?

কবির বিন আনোয়ার : এক বছরে আমরা চারটা ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছি। ফণী, বুলবুল, আম্পান এবং মাঝখানে আরেকটি ছোট ঘূর্ণিঝড় এসেছিল। এক বছরে চারটি ঘূর্ণিঝড়! মানে, কী অবস্থা হতে পারে তা সহজেই অমুমান করা যায়। আমরা এক স্থানে মেরামত করছি, অন্যস্থানে ভাঙছে। তবে আমাদের কাজ চলছে। আম্পানের পর যেসব স্থানে বাঁধ ধ্বসে গিয়েছিল, তার মধ্যে প্রায় সবটাই মেরামত হয়েছে। সামান্য কিছু বাকি আছে। তিনটি স্থানে সেনাবাহিনী কাজ করছে।

রফিকুল ইসলাম মন্টু : নতুন প্রকল্পের কাজ কবে শুরু হবে বলে ধারণা করছেন?

কবির বিন আনোয়ার : বর্ষায় তো কাজ শুরু হবে না। আমরা প্রস্তুতি রাখছি যাতে শুকনো মৌসুমে নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে কাজ শুরু করা যায়।

রফিকুল ইসলাম মন্টু : বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন কী সরকারের পক্ষে কঠিন?

কবির বিন আনোয়ার : কঠিন না। কিন্তু এগুলো তো একবারে অনুমোদন হয় না। প্রকল্প জমা দেওয়া হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যায়। ধাপে ধাপে প্রকল্প অনুমোদন হয়।

রফিকুল ইসলাম মন্টু :  দাবি উঠেছে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারকে দেওয়ার- আপনি কী বলেন?

কবির বিন আনোয়ার : স্থানীয় সরকার আমাদের সঙ্গে আছে। মেরামতের যে কাজগুলো চলছে, এগুলো তো স্থানীয় জনগণই করে। এতে শিক্ষক, ইমামসহ কমিউনিটির লোকজন যুক্ত থাকে। চেয়ারম্যান মেম্বার থাকে। এইসব লোকজন জড়িত হওয়া মানে তো স্থানীয় জনগণ সম্পৃক্ত হওয়া। আমাদের জেলা পানিসম্পদ কমিটি আছে। ২০১৩ সালের পানি আইন অনুযায়ী গঠিত হয়েছে এই কমিটি। এই কমিটিতে জেলা প্রশাসক সভাপতি। সেখানে অন্য ইঞ্জিনিয়ারও আছেন।  

রফিকুল ইসলাম মন্টু : মাঠের পানি কমিটিগুলো কী কার্যকর আছে?

কবির বিন আনোয়ার : আংশিক কার্যকর আছে। ইউনিয়ন পর্যন্ত কমিটি আছে। এগুলো আইন দ্বারা গঠিত কমিটি।

রফিকুল ইসলাম মন্টু : বাঁধ সুরক্ষার আইন প্রয়োগ হয়?  

কবির বিন আনোয়ার : এটা একটা মেজর সমস্যা। চিংড়ি ঘেরের মালিকেরা কোনো কিছু মানতে চায় না। আমরা জেলা পানি কমিটিকেই দায়িত্ব দিয়েছি, তারা যাতে চিংড়ি চাষিদের সঙ্গে বসে অভ্যন্তরীণ খাল যেগুলো আছে, সেগুলো থেকেই যেন পানি ওঠানামা করায়। তারা বাঁধে হাত দিতে পারবে না। এসব বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি।

 

পড়ুন এ সম্পর্কিত ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব : ** বাঁধের ফাঁদে উপকূলজীবন

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়