আইপিএল নিয়ে কী ভাবছে করোনায় আচ্ছন্ন মুম্বাই?
একদিনে করোনাভাইরাস শনাক্তে ফের শীর্ষে ভারত। রোববার (৪ এপ্রিল) ৯৩ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। দেশটির অঙ্গরাজ্য মহারাষ্ট্রে এদিন ৫৭ হাজারের বেশি কোভিড রোগী মিলেছে, এর রাজধানী মুম্বাইয়ে অবস্থান করছে আইপিএলের আট ফ্র্যাঞ্চাইজির পাঁচ দল। ১৪তম আসর শুরু হতে এক সপ্তাহেরও কম সময় রয়েছে। এমন সময়ে করোনার উচ্চলম্ফন ভাবাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ডকে (বিসিসিআই)।
করোনাভাইরাস আতঙ্কে আচ্ছন্ন আইপিএল। শনিবার দিল্লি ক্যাপিটালসের বাঁহাতি স্পিনার অক্ষর প্যাটেল, রোববার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ওপেনার দেবদূত পাডিক্কাল, ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের একাধিক গ্রাউন্ডসম্যান, একজন ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্বাহী ও বিসিসিআই সংশ্লিষ্ট একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির একাধিক সদস্য কোভিড পজিটিভ হয়েছেন।
করোনায় জুবু-থুবু এই কঠিন পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রে আংশিক লকডাউন ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। রাত্রিকালিন কারফিউ এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পুরোপুরি লকডাউন। অথচ আগামী ১০ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত মুম্বাই লেগে হবে ১০ ম্যাচ। করোনার থাবায় যখন পুরো রাজ্য অবরুদ্ধ, তখন সেখানে ম্যাচ হওয়া নিয়ে আশঙ্কাই স্বাভাবিক। এরই মধ্যে হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ও সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন এই লেগের ম্যাচগুলো আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, তারা কঠোর ইকো সিস্টেমের ব্যবস্থা করে রেখে সবগুলো ম্যাচ নির্ধারিত ভেন্যুতেই আয়োজনে বদ্ধপরিকর। ভারতের ক্রিকেট বোর্ডও আগামী দুই মাসের টুর্নামেন্ট নিরাপদে শেষ করতে আরও বেশি কঠোর ও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে।
অবশ্য সূত্রগুলো যোগ করেছে, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আট ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে চেন্নাই সুপার কিংস, দিল্লি ক্যাপিটালস, পাঞ্জাব কিংস, রাজস্থান রয়্যালস ও কলকাতা নাইট রাইডার্স মুম্বাইয়ে অবস্থান করছে। প্রথম লেগের ম্যাচগুলো খেলতে শিগগিরই কলকাতা চেন্নাইয়ের উদ্দেশে রওনা হবে, দ্বিতীয় লেগ খেলতে ২০ এপ্রিল তারা ফিরবে মুম্বাইয়ে। বাকি চারটি দল সেখানে অবস্থান করবে তিন সপ্তাহের মতো।
কিন্তু রেড জোনে থাকা দলগুলো কতোটা নিরাপদে থাকতে পারবে, সেটাই এখন মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের বড় চ্যালেঞ্জ। তারা নির্ধারিত ম্যাচ আয়োজনে বদ্ধপরিকর হলেও ‘প্ল্যান বি’ প্রয়োগের প্রয়োজন হতে পারে যে কোনও সময়। একটি সূত্র বলছে, ‘৪৮ ঘণ্টা পর কী হয় দেখা যাক। সেই পর্যন্ত সবার উচিত হবে প্রটোকল মেনে চলা, পরীক্ষা বাড়ানো এবং জৈব সুরক্ষা বলয় না ভাঙা। সবকিছু মেনে চললে অবশ্যই ভালো কিছু হবে।’
পরিকল্পনায় ছন্দপতন হলে বেশ কিছু বিকল্প ভাবনা মনের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। হতে পারে সেটা মুম্বাই থেকে ম্যাচ স্থানান্তর। সেজন্য হায়দরাবাদকে রাখা হয়েছে অগ্রাধিকারে। এছাড়া ইন্দোরও আছে ভাবনার মধ্যে।
আরেকটি ব্যবস্থা- আরটিপিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হতে পারে, প্রতিদিন। সব ফ্র্যাঞ্চাইজি ও স্টাফদের জন্যই টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে পারে বিসিসিআই। বর্তমানে প্রতি তিন দিনে টেস্ট করা হয়। এছাড়া গ্রাউন্ড স্টাফদের জন্যও আলাদা জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি হতে পারে। এরই মধ্যে বিসিসিআইর নির্বাহী দল একটি জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে আছে। ওয়াংখেড়েতে প্রস্তুতিতে সহায়তা করতে পারে এটি।
করোনার সংক্রমণ রোধে জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকা যে কেউ সহায়তা করতে পারেন স্বপ্রণোদিত হয়ে তথ্য দিয়ে। কারও করোনা পজিটিভ হলে কিংবা উপসর্গ থাকলে অথবা কেউ যদি আক্রান্তের সংস্পর্শে যান, তাহলে দ্রুত মেডিক্যাল স্টাফকে জানিয়ে সহায়তা করতে পারেন। বোর্ড সূত্র বলেছেন, ‘প্রত্যেকে এটা করছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমাদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।’ এজন্য আলাদা কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওই সূত্র।
তবে যা-ই হোক না কেন, ৯ এপ্রিল শুরু হতে যাওয়া আইপিএল এবার দেশের বাইরে হচ্ছে না। সূত্রটি বলেছেন, ‘এখন আর আইপিএল সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজন সম্ভব নয়।’
ফাহিম/আমিনুল
আরো পড়ুন