ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

জুলহাস-তনয় হত্যাকাণ্ড: বাদাম বিক্রেতার ছদ্মবেশেও  ছিল এক আসামি 

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০০, ৩১ আগস্ট ২০২১  
জুলহাস-তনয় হত্যাকাণ্ড: বাদাম বিক্রেতার ছদ্মবেশেও  ছিল এক আসামি 

৫ বছর আগে রাজধানীর কলাবাগানে জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে হত্যা করা হয়। সেই হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষনার দিন আজ মঙ্গলবার(৩১ আগস্ট)। ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালত আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষনা করবেন।

২০১৯ সালের ১২ মে ৮ জনকে অভিযুক্ত করে  আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মুহম্মদ মনিরুল ইসলাম। আসামিরা হলেন-সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া (চাকরিচ্যুত মেজর), আকরাম হোসেন, সাব্বিরুল হক চৌধুরী, জুনাইদ আহমদ ওরফে মওলানা জুনায়েদ আহম্মেদ ওরফে জুনায়েদ, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান, শেখ আব্দুল্লাহ ও আসাদুল্লাহ। এদের মধ্যে প্রথম চারজন শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। শেষের চারজন কারাগারে আছেন।

হত্যাকাণ্ডের সাথে সেলিম, হাসান, তারেক, কামরুল ওরফে কবিরুল ওরফে কবির ও আকিল ওরফে আলী নামে ৫ জন জড়িত থাকলেও তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় এবং গ্রেপ্তার করতে না পারায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এছাড়া শফিকুল ইসলাম ওরফে কেরামত, রশিদুন্নবি ভূইয়া ওরফে টিপু ও ইয়ামিন মিয়া ঘটনার সাথে জড়িত না থাকায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করা হয়।

চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা জুলহাস ও তনয় হত্যাকান্ডে কার কি ভূমিকা ছিল তা তুলে ধরেছেন।

মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন : তিনি আনসার আল ইসলামের ইন্টেল শাখার মাসুল। তিনি অপারেশন শাখার সদস্যদের নিয়ে ভিকটিম জুলহাস মান্নানের বাসা রেকি করেন। অপারেশন শাখার সদস্যরা হত্যাকান্ডের সময় যে কুরিয়ার সার্ভিসের আইডি কার্ড ব্যবহার করে তা তিনি তৈরি করে দেন। ঘটনার দিন তিনি ইন্টেল শাখার অপরাপর সদস্যদের সাথে জুলহাস মান্নানের বাসার আশেপাশে অবস্থান করেন। জুলহাস মান্নান বাসায় প্রবেশ করলে অপারেশন শাখার সদস্যদের সংবাদ তিনিসহ অন্যরা দেন। জুলহাস মান্নান ও তনয় হত্যাকান্ডের দায় আনসার ইসলামের সায়মন স্বীকার করেন।

আরাফাত রহমান : তিনি  আনসার আল ইসলামের অপারেশন শাখার সদস্য। ঘটনা সংঘটনে তিনি অপারেশন শাখার সদস্যদের নিয়ে জুলহাস মান্নানের বাসা রেকি করে এবং হত্যাকান্ড সংঘটনে সহায়তার জন্য পলাতক আসামি সেলিমকে কলাবাগান এলাকায় একটি বাসা ভাড়া এবং অপারেশন শাখার সদস্যদের গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া করে দেন। তাদের প্রশিক্ষণ করান এবং হত্যাকান্ড সংঘটনে সমন্বয় করেন।

শেখ আব্দুল্লাহ :  তিনি আনসার আল ইসলামের ইন্টেল শাখার সদস্য। মেজর জিয়ার নির্দেশে তিনি, আকরাম হোসেন ও হাসান, আসামি সায়মনের নেতৃত্বে জুলহাস মান্নানের গতিবিধি অনুসরণ করেন। সমকামীদের সংগঠন রূপবান এর র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করেন এবং ফেসবুক আইডি খুলে সমকামীদের তথ্য সংগ্রহসহ জুলহাস মান্নানের বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে। জুলহাস মান্নান কখন বাসা থেকে বের হয় আবার কখন বাসায় আসে সে সকল তথ্য সংগ্রহ করে সায়মনকে জানাতেন। ঘটনার দিন ঘটনাস্থলের কাছে উপস্থিত থেকে অপারেশন শাখার সদস্যদের সংবাদ দেন যে জুলহাস মান্নান বাসায় এসেছেন। যাতে করে অপারেশন শাখার সদস্যরা নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে সহযোগিতা করেন। অপারেশন শাখার সদস্যরা হত্যাকান্ড শেষে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলে তিনিসহ ইন্টেল শাখার অন্য সহযোগী আসামিরা ঘটনাস্থল এলাকা থেকে চলে যায়।

আসাদুল্লাহ : অপারেশন শাখার এ সদস্য হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল। তার গলায় মাহবুবুল আলম নামক কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী হিসেবে আইডি কার্ড ঝুলানো ছিল।

মেজর জিয়া : আনসার আল ইসলামের নীতি নির্ধারক তিনি। তার পরিকল্পনায় এবং নির্দেশে জুলহাস মান্নান ও তন্ময় হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়।

আকরাম হোসেন : ইন্টেল শাখার এ সদস্য রেকি করাসহ অপারেশন শাখার সদস্যদের নিরাপদে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। জুলহাসের বাসায় তন্ময় প্রবেশ করেছে এ সংবাদ তিনি দেন এবং তাকেও হত্যা করতে হবে বলে জানায়। তার দৈহিক বর্ণনা বলে দেয়।

সাব্বিরুল হক চৌধুরী : আনসার আল ইসলামের অপারেশন শাখার এ সদস্য হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত।

মো. সেলিম : তিনি আনসার আল ইসলামের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী এবং প্রশিক্ষক। অপারেশন শাখার সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এ মামলার ঘটনা মেজর জিয়ার নির্দেশে তার তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন হয়েছে।

হাসান : মামলার ঘটনায় তিনি রেকি করেন। জুলহাস মান্নানের খোঁজ নিতে তিনি সমকামী সংগঠনের র‌্যালীর কাছাকাছি বাদাম বিক্রেতার বেশে অবস্থান করে। ঘটনার দিন তিনি জুলহাস মান্নানের বাসার আশেপাশেই অবস্থান করেন।

তারেক : তিনি এ মামলার ঘটনায় রেকি করেন।  জুলহাস মান্নানের খোঁজ খবর নেয়াসহ তার বাসা সনাক্ত করেন এবং মেজর জিয়ার নিকট রিপোর্ট করেন।

কামরুল ওরফে কবিরুল : তিনি আনসার আল ইসলামের অপারেশন শাখার একজন সদস্য। তিনি এ হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত।

আকিল ওরফে আলী : তিনিও হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডের বাড়িতে প্রবেশ করে ইউএসএইড কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু থিয়েটারকর্মী মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

ওই ঘটনায় কলাবাগান থানায় জুলহাজের বড় ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন হত্যা মামলা এবং সংশ্লিষ্ট থানার এসআই মোহাম্মদ শামীম অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

ঢাকা/মামুন/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়