ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নতুন জঙ্গি সংগঠনের অর্থ শাখার প্রধানসহ গ্রেপ্তার ৩

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৩, ৬ জুন ২০২৩   আপডেট: ১৫:০৪, ৬ জুন ২০২৩
নতুন জঙ্গি সংগঠনের অর্থ শাখার প্রধানসহ গ্রেপ্তার ৩

নতুন জঙ্গ সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফীল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিবসহ ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (৬ জুন) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈম বলেন, সোমবার (৫ জুন) রাতে র‌্যাব-১ ও ৭ এর আভিযানিক দল গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন করে একটি সিএনজি থেকে সংগঠনের শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মো. মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিব, জাকারিয়া হোসাইন ও মো. আহাদুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২২ সালের ২৩  কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে ৮ জন তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। নিখোঁজের ঘটনায় নিখোঁজ তরুণদের পরিবার কুমিল্লার কোতয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গণমাধ্যমে বহুলভাবে আলোচিত নিখোঁজের এই ঘটনা দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এর প্রেক্ষিতে র‌্যাব নিখোঁজদের উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

তিনি বলেন, নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে র‌্যাব ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায় এবং র‌্যাব জানতে পারে যে, এ সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে অক্টোবর মাস থেকে অদ্যাবধি দেশের বিভিন্ন স্থানে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৭২ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও উগ্রবাদী বই। এছাড়াও উদ্ধার করা হয় সংগঠন সস্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও কন্টেন্ট।

কমান্ডার খন্দকার আল-মঈম বলেন, বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, এই সংগঠনের আমীর আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ, সংগঠনের উপদেষ্টা শামীম মাহফুজ, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিব। ইতিপূর্বে র‌্যাব কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমের প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুন, সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও উপপ্রধান মানিক, অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মুনতাছির, দাওয়াতী ও অন্যতম অর্থসরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ, বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার ও পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেন ওরফে চম্পাইকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, সংগঠনের আমির আনিসুর রহমানের সাথে কেএনএফ এর প্রধান নাথাম বমের সুসম্পর্ক থাকায় কেএনএফ এর সাথে তাদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হয় এবং কেএনএফ ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র জঙ্গিদের পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র ও রশদ সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করতো। পরবর্তীতে র‌্যাবের অব্যাহত অভিযানের ফলে পাহাড়কে নিরাপদ না মনে করায় আমিরের নির্দেশে জঙ্গিরা পাহাড় থেকে পালিয়ে সমতলের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে যায় এবং পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।

সম্প্রতি র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন সংগঠনের কয়েকজন সদস্যসহ গাজীপুর হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরের দিকে যাচ্ছে। 

র‌্যাব জানায়, মোশারফ হোসেন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ অন্যতম শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান। সে ২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে অবস্থানকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ এক জঙ্গির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে দেশে ফিরে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে এবং পাশাপাশি গার্মেন্টস পণ্যের ব্যবসা শুরু করে। ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে সে সংগঠনের অর্থ সংগ্রহ ও সরবরাহ সংক্রান্ত কার্যক্রম এবং সমতলের যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম তত্বাবধান করত এবং আনসার আল ইসলাম থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা প্রাপ্তিপূর্বক তার কাছে জমা ছিল। সে রাজধানীর মুগদা এলাকায় থাকাকালীন হিজামা সেন্টারের আড়ালে সাংগঠনিক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল এবং ঢাকাস্থ সব শূরা কমিটির মিটিং তার তত্বাবধানে পরিচালিত হত। ইতোপূর্বে গ্রেপ্তারকৃত সংগঠনের শুরা সদস্য মায়মুনসহ অন্যান্যরা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে তার কাছে জমা রাখত।

সে সংগঠনের অর্থায়নে মুন্সীগঞ্জে গবাদি পশুর খামার স্থাপন করে এবং তথাকথিত হিজরতকৃত অধিকাংশ সদস্য তার খামারে বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করত এবং তাদের শারীরিক কসরত ও তাত্তিক জ্ঞান প্রদান করা হত বলে জানা যায়। সে সংগঠনের আমীর মাহমুদের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, অস্ত্র ও রসদ ক্রয়সহ সংগঠনের অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য অর্থ সরবরাহ করত এবং শুকনা খাবারসহ পাহাড়ে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করে পার্বত্য প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রেরণ করত। এছাড়াও স্বেচ্ছায় নিরুদ্ধেশ সদস্যদের পাহাড়ে প্রেরণের সামগ্রিক কার্যক্রম সে তত্বাবধান করত। সে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ পরিচালনা ও সাংগঠনিক কাজে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ শিবিরে গমন করেছে বলে জানা যায়। পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে সংগঠনের আমির মাহমুদের নির্দেশনায় সে সমতলের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। আত্মগোপনে থেকে সে সংগঠনের অন্যান্য আত্মগোপনকৃত সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রেখে সংগঠনের সদস্যদের সংগঠিত করার চেষ্টা করতে থাকে। 

সে ইতোপূর্বে আনসার আল ইসলামের সদস্য থাকায়  সংগঠনের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় রাখত। সে আনসার আল ইসলামের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছিল বলে জানা যায়। পাহাড় থেকে পলায়নের সময় তার কাছে সংগঠনের প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা জমা ছিল, যার মধ্য থেকে সংগঠনের বিভিন্ন কাজে ইতোমধ্যে প্রায় ৭ লাখ টাকা খরচ করেছে । সে গ্রেফতারকৃত ২ সদস্যকে নিয়ে গাজীপুর হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরের জঙ্গল এলাকায় অবস্থান করে সংগঠনের আত্মগোপনকৃত অন্যান্য সদস্যদের একত্রিত করে আমিরের নেতৃত্বে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছিল।

/মাকসুদ/এসবি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়