পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ উপদূতাবাস ও ভিসা সেন্টারের সামনে দিনভর বিক্ষোভ
কলকাতা ব্যুরো || রাইজিংবিডি.কম
কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাস থেকে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ির বাংলাদেশ ভিসা সেন্টার, দিনভর উত্তাল হয়ে রইলো একাধিক উগ্রহিন্দুত্ববাদী সংগঠনের একের পর এক বিক্ষোভে। এক পর্যায়ে জাতীয় কংগ্রেসও এই বিক্ষোভে শামিল হয়।
শিলিগুড়িতে ভিসা সেন্টারের সামনে রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এসময় পুলিশের সাথে বারে বারে ধস্তাস্বস্তিতে জড়িয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
বাংলাদেশে দিপু দাসের হত্যাকাণ্ড ও হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও হিন্দু জাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে জমায়েত করে। এরপর প্রতিবাদ মিছিল বার করেন তারা। শহরটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে আচমকা মিছিলটি পৌঁছায় বাংলাদেশ ভিসা সেন্টারের সামনে। ভিড়ের মধ্যে কয়েকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভিসা সেন্টারের বাংলাদেশের পতাকা সম্মিলিত ফ্লেক্স টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলেন।
তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ ভিসা সেন্টার ঘিরে ফেলে। এদিন উগ্র হিন্দুত্ববাদী এই দুই সংগঠনের কর্মসূচির জেরে আগে থেকেই বন্ধ করে দেয়া হয় ভিসা সেন্টার। তারপরেও সংগঠন দুটির তরফে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভিসা সেন্টারে পুলিশের উপস্থিতিতে দায়িত্বরত কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় যতদিন বাংলাদেশের হিন্দু ও হিন্দুদের মন্দিরের সুরক্ষিত না থাকবে ততদিন বাংলাদেশ ভিসা সেন্টার বন্ধ রাখার হুমকি দেওয়া হয় ভিসা সেন্টারে কর্তব্যরত কর্মীদের।
এদিকে কলকাতায় একটি বা দুটি নয়, একদিনে তিনটি বিক্ষোভ হয়েছে বাংলাদেশ উপ দূতাবাসকে কেন্দ্র করে।বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে ইতিমধ্যেই কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাস চত্বরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তার ওপর গত শনিবার থেকে একের পর সংগঠনের বিক্ষোভের জেরে দূতাবাসের প্রায় ২০০ মিটার আগেই বিক্ষোভকারীদের আটকে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ।
এদিন ভারতীয় সময় দুপুর আড়াইটায় উপ দূতাবাস চত্বরে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীদের ২০০ মিটার দূরে আটকে দেয় পুলিশ। সেখানে অবস্থান নিয়েই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে নাস্তিক মঞ্চ নামে একটি সংগঠন। দীর্ঘ ৩০ মিনিটের বেশি অবস্থান বিক্ষোভ করার পর দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রদান করে বিক্ষোভ প্রদর্শন তুলে নেয় তারা।
নাস্তিক মঞ্চ বাংলাদেশ দূতাবাস চত্বর ছেড়ে তখনও বেশিদূর যায়নি। এর মধ্যেই আবারো দূতাবাস অভিযান শুরু করে জাতীয় কংগ্রেস। দীর্ঘ প্রায় এক ঘণ্টা দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখায় তারা। এক পর্যায়ে তাদেরও ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল পুলিশি নিরাপত্তায় দূতাবাসে কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। লিখিত ডেপুটেশন না দিলেও মৌখিকভাবে নিজেদের ক্ষোভের কথা কর্মকর্তাদের জানান তারা। এরপর কংগ্রেসের কর্মীরা একে একে দূতাবাস চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে যান।
কংগ্রেস যেত না যেতেই আবারো বিজেপি নেতা ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ উপদূতাবাস অভিযান শুরু করে হিন্দু সনাতনীরা। কলকাতার নিজাম প্যালেসে জমায়েত করে সেখান থেকে দূতাবাস পর্যন্ত পায়ে হেঁটে অভিযান করে তারা।
দূতাবাসের ২০০ মিটারের বেশি আগে এই বিক্ষোভকারীদের আটকে দিলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। এদের বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে ছিলেন একাধিক হিন্দু সাধু। প্রায় এক ঘণ্টা বিক্ষোভকারীরা কলকাতার বেকবাগান মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে। পরে তীব্র পুলিশি বাধার মুখে হিন্দু সনাতনীদের এই বিক্ষোভকারীরা দূতাবাসে কোনরকম লিখিত বা মৌখিক স্মারকলিপি না দিয়েই তাদের অবস্থান বিক্ষোভ প্রত্যাহার করেন।
এর আগে গত রবিবার দীপু দাস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্যব্যাপী ছোট-বড় অন্তত ৭০টি বিক্ষোভ মিছিল করেছে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী বাম দল সিপিআইএম। বিক্ষোভ হয়েছে দিল্লি, কলকাতা ও ত্রিপুরার বাংলাদেশ দূতাবাসে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ