রাজধানীতে দুই মরদেহ নিয়ে চাঞ্চল্য, স্বজনদের অভিযোগ ‘হত্যা’
প্রতীকী ছবি
রাজধানীর মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলের পার্কিংয়ে একটি প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে দুই বন্ধুর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, এটি একটি পরিকল্পিত ‘হত্যা’।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
রমনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম ফারুক রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “নিহত দুজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। আপাতত এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা করা হবে।”
স্বজনেরা বলছেন এটি পরিকল্পিত হত্যা, তাহলে কিভাবে অপমৃত্যু মামলা হয়-এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, “আমরা ময়নাতদন্ত করছি। সেরকম কিছু পাওয়া গেলে পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ কারণে এখনো কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।”
পুলিশ ও স্বজনদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (১০ আগস্ট) রাতে জাকির তার বন্ধু মিজানুর এবং গাড়ির মালিক জোবায়েদ আল মাহমুদ সৌরভের সঙ্গে ঢাকায় আসেন।তাদের উদ্দেশ্য ছিল সৌরভের এক আত্মীয়কে ইতালি যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়া। সে কাজ শেষে তারা মৌচাকের ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে যান। যেখানে তাদের গ্রামের এক রোগী ভর্তি ছিল। পরদিন সকালে সেই রোগীকে নিয়ে গ্রামে ফেরার কথা ছিল।”
সৌরভ গণমাধ্যমকে জানান, শনিবার ভোরে তিনি বাসায় ফিরে যান, জাকির ও মিজানুর গাড়িতেই ছিলেন। পরের দিন (রবিবার) সকাল থেকে জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন।এরপর সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুরে রমনা থানা পুলিশ তাকে ফোন করে জানায় যে হাসপাতালের পার্কিংয়ে তার গাড়ির ভেতর থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
জাকিরের বাবা মো. আবু তাহেরের অভিযোগ করেন বলেন, “প্রায় দুই বছর আগে জাকিরকে বিদেশে পাঠানোর জন্য এক দালালের মাধ্যমে প্রায় ২৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। এই টাকা পল্টনের একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির ফজলু নামের এক ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা জাকিরকে আমেরিকা পাঠাতে ব্যর্থ হয় এবং পরে তাকে শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হয়। সেই টাকা ফেরত চেয়ে জাকির দীর্ঘদিন ধরে ফজলু এবং তার সঙ্গীদের পেছনে ঘুরছিলেন। কয়েকদিন আগে তারা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চলতি মাসের ১০ তারিখের সময়সীমা দেয়। কিন্তু ঠিক সেই দিনই জাকিরকে হত্যা করা হয়। টাকা সংক্রান্ত বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।”
ঢাকা মেডিকেল মর্গের সামনে নিহত মিজানুরের ভাগিনা মো. রিয়াদ বলেন, “মামা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি তার বন্ধু জাকিরের সঙ্গে প্রায়ই ঢাকা আসতেন এবং গাড়ি চালানো শিখতেন। তারা কেবল একজন রোগীকে নিয়ে গ্রামে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন।”
রমনা থানা পুলিশ নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠিয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদনে উপপরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন উল্লেখ করেন, নিহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা ও ফোসকা দেখা গেছে এবং মুখ লালচে ও ফোলা ছিল। তবে প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদনে মৃত্যুর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
ঢাকা/এমআর/এসবি