ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

একজন প্রতারক সবসময়ই প্রতারক!

মোহাম্মদ আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২১, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একজন প্রতারক সবসময়ই প্রতারক!

প্রতীকী ছবি

মোহাম্মদ আসিফ : পূর্বের সম্পর্কগুলোতে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতার মাত্রা হয়তো খুবই খারাপ ছিল। বিশ্বাস শব্দটা আপনার সঙ্গে হয়তো একেবারেই যেত না। আর সেই হিসেবে ‘একজন প্রতারক আজীবনই প্রতারক’ এমন প্রবাদ এর চক্করে ঘুরপাক খাওয়াটা আপনার জন্য অস্বাভাবিক কিছু না। আর আপনার ভাগ্য যদি খারাপ হয়ে থাকে তাহলে এই প্রবাদ এর তকমা আপনার গায়ে আজীবন এর জন্য লেগে যেতে পারে!

কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে এই প্রবাদ প্রচলনের পেছনের কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সেক্সুয়ালবিহেভিওর শীর্ষক এক জার্নাল আর্কাইভসে বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িত ৪৮৪ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর পরিচালিত এক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এই পরীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা এই অংশগ্রহণকারীদের তাদের সম্পর্কের বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের কথা বা সঙ্গী ব্যতীত অন্যজনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের কথা জিজ্ঞাসা করার পাশাপাশি তাদের বিগত সম্পর্কগুলোতে তাদের সঙ্গীর বিশ্বাসযোগ্যতার ব্যাপারে কতটা নির্ভার ছিলেন সেটিও জিজ্ঞাসা করেন।

গবেষণার ফলাফল ছিল বিস্ময়কর! ফলাফলে জানা যায় যে, যারা তাদের প্রথম সম্পর্কেই বিশ্বাস ভঙ্গ করেছিলেন তারা তাদের পরবর্তী সম্পর্কগুলোতেও বিশ্বাস ভঙ্গের ব্যাপারে অন্যদের তুলনায় বিশেষ করে যারা তাদের সম্পর্কে প্রতারণা করেননি তাদের থেকে ৩ গুণ অধিকতর সম্ভাবনাপূর্ণ ছিলেন!

যারা জানত যে তাদের আগের সঙ্গীরা তাদের পূর্বের সম্পর্কে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তারা তাদের পরের সম্পর্কগুলোতে তাদের সঙ্গীর সঙ্গে সেই একি কাজ করার ব্যাপারে দুই গুণ বেশি সম্ভাবনা ছিল।

সম্পর্কে সন্দেহের মাত্রাও অপরিবর্তিত থাকত। কেননা যখন সঙ্গী জানতে পারত যে, তার বর্তমান সঙ্গী আগের সম্পর্কে প্রতারণা করেছে তখন সে তার পরবর্তী সব সম্পর্কেই প্রতারণা করে যাবে। এবং তখন তাদের সম্পর্কের ব্যাপারগুলোতে সন্দেহের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৪ গুণ বেশি থাকে।

এটির কারণ হিসেবে বলা যায়, ‘যখন আমরা মিথ্যা বলি তখন আমাদের ব্রেন সেটির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যায়।

ন্যাচার নিউরোসায়েন্স শীর্ষক এক গবেষণা গ্রন্থে প্রকাশিত এক স্টাডিতে বলা হয়, ‘যখন ছোট মিথ্যা বলা হয় তখন সেটি আমাদের মস্তিষ্কের এর নেতিবাচক অনুভূতিগুলোকে বা সেই তথ্যকে কম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গ্রহণ করে এবং যার ফলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের মিথ্যা কথা বলার সম্ভাবনা জাগায়।’

অন্য কথায়, শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে যেয়ে আমরা যে ছোট ছোট মিথ্যা কথা বলি সেগুলো একসময় বড় ধরনের কোনো মিথ্যার জন্ম দিয়ে থাকে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের জোড়ায় জোড়ায় ভাগ করা হয়। এক গ্রুপকে কয়েন ভর্তি একটি পাত্র দেখানো হয় এবং অপর গ্রুপকে ওই একই পাত্রের একটি ঘোলা ছবি দেখানো হয়। যাদেরকে কয়েন ভর্তি পাত্র দেওয়া হয়েছিল তাদেরকে তাদের সঙ্গীদেরকে পাত্রে কি পরিমাণ কয়েন আছে তা অনুধাবনে সাহায্য করতে বলা হয়েছিল।

এক গ্রুপকে বলা হয়েছিল যদি তাদের সঙ্গীরা পাত্রে থাকা কয়েন এর পরিমাণ বলতে পারে তাহলে তাদেরকে আর্থিক পুরষ্কার দেওয়া হবে। যা মূলত তাদেরকে মিথ্যা বলা এবং অতিরঞ্জন করার দিকে অনুধাবিত করার পরিকল্পনা ছিল।

গবেষকরা দেখেন, ‘মস্তিস্কের অ্যামিগডালা নামক অংশটি (যেটি মানুষের অনুভূতির অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে) যখন অংশগ্রহণকারী মিথ্যা বলল তখন সাড়া দিল। কিন্তু বারবার মিথ্যা বলার পর সেটির সাড়া দেওয়ার মাত্রা কমে আসতে থাকে।’

যখন কোনো ব্যক্তি তার সঙ্গীর সঙ্গে প্রতারণা করবে তখনও এমন বিষয় ঘটবে। প্রথমবার যখন সে প্রতারণার আশ্রয় নিবে তখন সে বিব্রত বোধ করবে। কোনোভাবে যদি সে আবারো প্রতারণার আশ্রয় নেয় তখন বিষয়টা তার কাছে কম বিব্রতকর মনে হবে। এক সময় এটি আপনার মস্তিস্কের অ্যামিগডালার ওপর নির্ভর করবে। সেটি আপনাকে যেমন অনুভূত করাবে আপনি তেমনটিই অনুভব করবেন।

এলিট ডেইলিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রিন্সটন নিউরো সায়েন্সের একজন গবেষক এবং এই গবেষণার একজন সহকারী গবেষক নেইলগ্যারেট বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় এবং অন্যদের মতামতের ভিত্তিতে যে জিনিসটি আমরা উদঘাটন করেছি সেটি হল প্রতারণার প্রতি আমাদের মানবিক অনুভূতি কেমন এবং আসলে আমরা কেমন অনুভব করি তার ব্যাখ্যা। সেই সঙ্গে এই প্রতারণার চর্চা আমাদের সেই অনুভূতিকে হ্রাস করে দেয় এবং আরো বেশি প্রতারণা করার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘যারা প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে যান প্রাথমিকভাবে তাদের কাছে বিষয়টা খারাপ লাগলেও বার বার একই জিনিস চর্চার ফলে তারা বিষয়টিকে অভ্যাস বানিয়ে নিয়েছে এবং এখন তারা প্রতারণা করতে ন্যুনতম দ্বিধাবোধ করে না।’

তিনি আরো যোগ করে বলেন, ‘হতে পারে তারা প্রতারণার শুরু থেকেই কখনো এটির ব্যাপারে খারাপ কিছু অনুভব করেনি বা তাদের কাছে বিষয়টি খারাপ লাগেনি। তাই তাদেরকে এটি আলাদা করে অভ্যস্ত করা লাগেনি তারা প্রথম থেকেই প্রতারণা করে খুশি।’

তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়