ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

করোনার টিকা নেওয়ার পর ইনজেকশনের স্থানে যে কারণে ডলবেন না

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৬:১৭, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
করোনার টিকা নেওয়ার পর ইনজেকশনের স্থানে যে কারণে ডলবেন না

কোভিড মহামারিতে জনজীবনকে স্বাভাবিক করতে করোনার টিকাকে প্রধান চাবিকাঠি বিবেচনা করা হচ্ছে। গবেষণা বলছে, করোনার টিকা নিলে মারাত্মক সংক্রমণের ঝুঁকি কমে আসে। হয়তো একারণে হাসপাতালে চিকিৎসা ও মৃত্যুর হার কমে গেছে।

টিকাতে করোনার সংক্রমণ (কোভিড-১৯) থেকে ১০০ শতাংশ সুরক্ষা পাওয়া যাবে এমনটা বলা হচ্ছে না, কিন্তু আশাবাদী হতে পারেন যে এটি সংক্রমণকে দুর্বল করে দেবে। অনেকেই টিকা নেওয়ার পর ইনজেকশনের স্থানে ডলতে থাকেন বা ম্যাসেজ করেন। কিন্তু এমনটা করা উচিত নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। টিকা গ্রহণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে চাইলে কিছু করণীয় ও বর্জনীয় মেনে চলা প্রয়োজন।

টিকা নেওয়ার আগে ও পরে কিছু বিষয়ে সচেতন থাকলে শরীর বাড়তি চাপে ভুগে না, যার ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতির সম্ভাবনা হ্রাস পায়।টিকা গ্রহণের পূর্বে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে, প্রচুর ঘুমাতে হবে, নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে ও পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে টিকা গ্রহণের পরেও সতর্কতার প্রয়োজন আছে, যেমন- ২ দিন পর্যন্ত শ্রমসাধ্য কাজ বা শরীরচর্চা থেকে বিরত থাকতে হবে, প্রচুর পানি পান করতে হবে, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে হবে বা ঘুমাতে হবে এবং মনকে প্রফুল্ল রাখতে হবে।

টিকার তিনটি প্রচলিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো- টিকা গ্রহণের স্থানে ব্যথা, মাথাব্যথা ও শরীর ব্যথা। অনেকেই আরাম পেতে টিকা নেওয়ার পর ইনজেকশনের স্থানে ডলতে থাকেন বা ম্যাসেজ করেন। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এটা করতে নিষেধ করেছেন। এমনকি বেশি ভারও বহন করা যাবে না। কেবল করোনার টিকা নয়, যেকোনো টিকার ক্ষেত্রে পরামর্শটি প্রযোজ্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ইনজেকশনের স্থানে ডলা বা ম্যাসেজ করা যাবে না কেন? এখানে এ সম্পর্কে বলা হবে, তার আগে আরেকটি প্রশ্নের উত্তর জানা যাক।

* টিকা গ্রহণের স্থানে ব্যথা হয় কেন?

টিকার সবচেয়ে প্রচলিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্ভবত ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা হওয়া। এছাড়া শক্ত অনুভূত হতে পারে, ফুলে যেতে পারে ও লাল দেখাতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াটি মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে। এমনও তীব্র হতে পারে যে, যে বাহুতে টিকা নেওয়া হয়েছে তা নড়াচড়া করা কঠিন হতে পারে। ইনজেকশনের স্থানে ব্যথাকে টিকার স্থানীয় প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করা হয়। যখন কেউ টিকা নেন, তার শরীর এটাকে ইনজুরি মনে করে। ইনজুরি তথা কাটাছেঁড়া/রক্তক্ষরণে ইমিউন কোষগুলো ওই স্থানে ছুটে আসে ও রক্তনালী শিথিল হয়। ইনজেকশনের স্থানেও এমনটা ঘটে থাকে। এটা হলো হলো, শরীরকে রক্ষার একটা প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার আরেকটি অংশ হিসেবে ইমিউন কোষগুলো প্রদাহ সৃষ্টি করে। এসব প্রতিক্রিয়ায় ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা অনুভূত হয়। টিকাগ্রহীতারা প্রথমে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করে থাকেন। এরপর জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, র‍্যাশ, দুর্বলতা ও অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগে থাকেন। কারো কারো ইনজেকশনের স্থানে ব্যথার আরেকটি কারণ হলো, টিকার তরলের সংস্পর্শে মাংসপেশির প্রতিক্রিয়া।

* টিকা নেওয়ার পর ইনজেকশনের স্থানে ডললে বা ম্যাসেজ করলে মারাত্মক কিছু ঘটে?

ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে কখনো কখনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াটি এতটাই তীব্র হতে পারে যে ওই বাহু নড়াচড়া করানো কঠিন হয়ে যেতে পারে। এসময় ওখানে ঘষলে বা ম্যাসেজ করলে খুবই সহায়ক মনে হতে পারে বা স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও চিকিৎসকেরা টিকা গ্রহণের স্থানে ডলতে বা ম্যাসেজ করতে নিষেধ করেছেন। এমনকি আলতোভাবে ডললেও তা খারাপ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। এখনো পর্যন্ত এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে, করোনার টিকা প্রয়োগের পর ইনজেকশনের স্থানে ডললে ভয়ানক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানান যে, এতে টিকার কার্যকারিতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

অধিকাংশ করোনার টিকাই ইন্ট্রামাস্কুলার রুটে ইনজেক্ট করা হয়। একারণে ইনজেকশনের স্থানে ডললে বা ম্যাসেজ করলে ঝুঁকিটা একটু বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্ট্রামাস্কুলার রুটে টিকা প্রয়োগ করার পর ওখানে ডললে টিকার কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। ডললে হয়তো আরাম পাবেন, কিন্তু এতে ত্বকের গভীরস্থ সাবকিউটেনিয়াস টিস্যুর মধ্য দিয়ে টিকা বের হয়ে আসতে পারে। এর ফলে টিকার কার্যকারিতা যে হ্রাস পাবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। এছাড়া টিকা নেওয়ার পর ইনজেকশনের স্থানে ডললে, চাপ দিলে বা ম্যাসেজ করলে ব্যথা, ফোলা, অনমনীয়তা বা লালতা আরো বেড়ে গিয়ে অসহনীয় পর্যায়ে চলে যেতে পারে।

* টিকা নেওয়ার আগে ইনজেকশনের স্থানে ডললে উপকার পাওয়া যায়?

আপনি সম্প্রতি করোনার টিকা অথবা পূর্বে অন্যকোনো টিকা নিয়ে থাকলে লক্ষ্য করে থাকবেন যে ক্লিনিশিয়ান বা ভ্যাকসিনেটর ইনজেকশন প্রয়োগের আগে ত্বকে ম্যাসেজ করেছেন। বিশ্বব্যাপী এর চর্চা ব্যাপক। কারণ এতে বাহুর মাংসপেশি নরম ও শিথিল হয় এবং আরো কার্যকরভাবে টিকা ডেলিভারি হয়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এরকম চর্চাতে কিছু টিকার শোষণ বিলম্বিত হতে পারে- এ বিষয়ে সুনিশ্চিত হতে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে।

* ব্যথা কমাতে কী করবেন?

করোনার টিকা বা অন্যকোনো টিকা- যেটাই ত্বকে ইনজেক্ট করা হোক না কেন, অনেকটা নিশ্চিত যে টিকা প্রয়োগের স্থানে ব্যথা হবে, অনমনীয় হবে, ফুলে যাবে বা লাল হবে। চিকিৎসকেরা এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে উদ্বেগজনক নয় বলেছেন। তারা স্বস্তি পেতে প্যারাসিটামল সেবন করা যাবে মত দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেস (এনএইচএস) প্যারাসিটামলের ব্যবহারকে নিরাপদ বলেছে। তবে পেইনকিলার ছাড়াই ব্যথা কমাতে পারলে সবচেয়ে ভালো।টিকা গ্রহণ জনিত বাহুর ব্যথা বা ফোলা কমাতে বরফের সেঁক দিতে পারেন। ব্যথার তীব্রতা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট বাহুকে কর্মমুখর করবেন না। সাধারণত ৩-৫ দিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াটি দূর হয়ে যায়।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়