দেশীয় পোশাক শিল্পের হালচাল
২০০৯ সালে দেশীয় পোশাকের সৃজনশীল দশটি প্রতিষ্ঠান- নিপুণ, কে ক্রাফট, অঞ্জনস, রঙ বাংলাদেশ, বাংলার মেলা, সাদাকালো, বিবিয়ানা, দেশাল, নগরদোলা ও সৃষ্টি'র যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর বসুন্ধরায় চালু হয় ‘দেশী দশ’। গত শনিবার (২০ আগস্ট) বসুন্ধরা সিটির লেভেল-৭ এ কেক কেটে ১৩ বছর পূর্তি উৎসবের আয়োজন করা হয়।
১৩ বছর পূর্তি উৎসবে বসুন্ধরা সিটির দেশী দশ প্রাঙ্গনে উপস্থিত ছিলেন অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেত্রী শাহনাজ খুশী, নাট্যকার বৃন্দাবন দাস, পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন, হাওয়া ছবির অভিনেত্রী নাজিফা তুষি এবং অভিনেতা শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, সোহেল মণ্ডল, নাসির উদ্দিন খান, রিজভী রিজু প্রমুখ। এদের সঙ্গে যোগ দেন জলের গানের শিল্পী কনক আদিত্য।
দেশীয় পোশাক শিল্প বিষয়ে এ সময় কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে আলাপকালে তারা দীর্ঘ বছর তাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সকল গ্রাহক ও শুভানুধ্যায়ীদের। উদ্যোক্তারা বলেন, অতীতের মতো আগামীতেও ক্রেতারা দেশীয় পোশাক শিল্পের সঙ্গে থাকবেন।
কেমন চলছে, দেশী ফ্যাশন হাউজগুলোর ব্যবসা? জানতে চাইলে রঙ বাংলাদেশ’র প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো তাদের স্বকীয়তা নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে নিজস্ব পরিচয় গড়ে তুলেছে ক্রেতা সাধারণের মধ্যে। যদিও দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারী নীতি নির্ধারকদের আইন এই শিল্পে মোটেই সহায়ক হয়নি। সেকারণে বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্বেও দেশীয় ফ্যাশন শিল্প প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। এরমধ্যে করোনা মহামারির কারণে এই শিল্প বিশাল বিপর্যয়ে পড়ে। যদিও করোনা পরবর্তী জীবনযাপন স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর ব্যবসাও এখন তুলনামূলক ভালো।’
ঈদ, বৈশাখ বা পূজা ছাড়া অন্য সময়ে ব্যবসা কেমন চলছে? এ প্রসঙ্গে দেশাল’র পরিচালক কনক আদিত্য বলেন, ‘এটা সত্যি যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ঈদ, বৈশাখ, পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবের উপর নির্ভর করে। দেশীয় পোশাক শিল্পও এর ব্যতিক্রম নয়। এসময়গুলো ছাড়া বাকি সময়গুলোতে উৎসবপ্রিয় বাঙালি এখন ফাল্গুন, একুশ, স্বাধীনতা, বিজয়দিবসের পাশাপাশি বাবা দিবস, মা দিবস, ভালোবাসা দিবস, বন্ধু দিবসসহ নানান উৎসব পালন করে। এছাড়াও এখন বেশিরভাগ দেশীয় পোশাক প্রতিষ্ঠান উৎসবর্ধমী ছাড়াও নিত্যজীবনের প্রয়োজনীয় পোশাক ও সামগ্রী তৈরী করে থাকে। যা অন্য সময়গুলোতে সাধারণ চলমানতায় সহায়ক হয়।’
দাম বা মানের দিক দিয়ে বিদেশি বা আমদানি করা কাপড়ের সঙ্গে দেশি কাপড়ের অসম প্রতিযোগিতা করতে হয় কি না- জানতে চাইলে কে ক্রাফট’র খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশীয় ফ্যাশনহাউজকে বিদেশি- মূলত: প্রতিবেশী দেশগুলোর পোশাকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হচ্ছে। বিদেশি এইসব কাপড় ট্যাক্স -ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে, আইনের নানান ফাঁকফোকর গলে অনেক সহজে আমাদের দেশে চলে আসে। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি গণমাধ্যমের প্রভাবে জনমানুষের মনে খুব সহজে এসব পোশাক এক ধরনের ক্রেজ তৈরি করে। আমাদের দেশে পাশ্চাত্য বিশ্বের বিপুল পরিমাণ পোশাক তৈরি হয়। সেসব পোশাকগুলোর বাড়তি, বাতিল হওয়া রিজেক্টেড অংশ আমাদের মার্কেটে আসে। এ সকল পোশাক অনলাইনে বিক্রির ক্ষেত্রে মানসম্মত নিয়মনীতি ও জবাবদিহিতা না থাকাও দেশীয় পোশাক শিল্পকে এসব পোশাকের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’
অনলাইন যারা পোশাক ব্যবসা করছেন বা করতে চাচ্ছেন, সেসব উদ্যোক্তাদের জন্য কোনো পরামর্শ আছে কি? এর জবাবে সাদাকালো’র আজহারুল হক আজাদ বলেন, ‘অনলাইনে ব্যবসা করার জন্যে মানসম্মত নিয়মনীতির প্রয়োজন সবার আগে। বেশকিছু অনলাইন বিক্রেতার প্রতারণার কারণে এই মাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুন্ন করেছে ক্রেতাসাধারণের কাছে। সেই বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে যথাযথ কাস্টোমার সার্ভিস প্রদান করে। মানসম্মত পোশাক, যথাযথ দাম, ভালো সার্ভিস প্রদান করতে পারলে এই অনলাইন ব্যবসাও সহজ হবে।’
নিত্য উপহার’র প্রধান নির্বাহী বাহার রহমান বলেন, 'টি-শার্টের বাজার যখন বিদেশি টি-শার্টের দখলে, তখন আমরা চেষ্টা করেছি বিভিন্ন রঙ ও ডিজাইনের টিশার্ট বাজারে আনতে। সে চেষ্টায় নিত্য উপহার সফল হয়েছে। আমাদের তৈরি বিভিন্ন রঙ ও ডিজাইনের দেশীয় টি-শার্ট তরুণ সমাজ ভালোবেসে গ্রহণ করেছেন। দেশীয় অনেক শিল্পীরা সেসময় থেকে এখন পর্যন্ত ডিজাইন, পরামর্শ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করে আসছেন। ভবিষ্যতেও সবার ভালোবাসা আর সহযোগিতা পাবো আশা করছি।’
মেয়া//ফিরোজ
আরো পড়ুন