স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠন জরুরি
তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি অনেকে সন্দেহের চোখে দেখছেন: কামাল আহমেদ
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ। ফাইল ছবি
সাংবাদিক সুরক্ষা অধ্যাদেশ এবং একটি স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠনের ওপর জোর দিয়েছেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ।
তিনি বলেন, “কোনো আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতিকে অনেকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্য এটি কোনো সমন্বিত পদক্ষেপ ছিল কি না। তবে সাংবাদিক সুরক্ষা অধ্যাদেশ এবং একটি স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠন করা গেলে এ ধরনের ঘটনার তদন্ত ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় তা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে।”
রবিবার (৪ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে ‘ব্রেভ নিউ বাংলাদেশ: রিফর্ম রোডম্যাপ ফর প্রেস ফ্রিডম’ শীর্ষক এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের ওপর বেশির ভাগ হামলার পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি এবং মব ভায়োলেন্স কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেছেন কামাল আহমেদ।
তিনি বলেন, “গণমাধ্যমের সেলফ সেন্সরশিপ ও সাংবাদিকদের ওপর বেশির ভাগ হামলার পেছনে এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি এবং কথিত মব ভায়োলেন্স কাজ করছে। সরকারের এগুলো কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণের কথা থাকলেও তা দেখা যাচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বিদ্যমান বৈরি পরিবেশের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। সাংবাদিকদের ওপর মৌখিক ও শারীরিক হামলা এখনো হচ্ছে। অনেকে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ কারাবন্দি হয়েছেন, তবে তা তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য। তারা একই সঙ্গে সাংবাদিক, আবার রাজনৈতিক কর্মী।”
“সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ন্যায্য পারিশ্রমিক ও নীতিগত সহায়তা জরুরি। সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম উভয়ে আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যা তাদের আপস করতে বাধ্য করছে,” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গণমাধ্যমের বিনিয়োগ বৈধ উৎস থেকে এসেছে কি না, তা জানানোর কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না উল্লেখ করে কামাল আহমেদ বলেন, “ফলে অনেক ক্ষেত্রে কালো টাকা ব্যবহৃত হয়েছে।পরিণতিতে সংবাদমাধ্যম হয়ে উঠেছে একেকটি গোষ্ঠীর হাতিয়ার, যার মাধ্যমে তারা তাদের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যকে প্রশ্নের বাইরে রাখতে বা সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে।”
তিনি বলেন, “রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজের দপ্তর থেকে পাওয়া আর্থিক বিবরণীতে দেখা গেছে, দেশে দেড় ডজনের বেশি সংবাদমাধ্যম লাভজনক। এটা প্রমাণ করে, গণমাধ্যমকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা মোটেও অযৌক্তিক নয় এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।”
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন টাইমস মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, বিজেসির চেয়ারম্যান রেজয়ানুল হক রাজা প্রমুখ।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে যৌথভাবে সেমিনারটি আয়োজন করে ইউনেসকো ঢাকা অফিস, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সুইডেন দূতাবাস।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ