ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ২৫ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস

শাহ মতিন টিপু : আধুনিক কালে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটলেও বন্ধ হয়নি নারী নির্যাতন। দেশে যে আইন আছে নেই তার সঠিক ব্যবহারও। প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে নারী।

আজ 'ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর দ্য এলিমিনেশন অব ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন' বা আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস।

২৫ নভেম্বর এই দিবস পালনের ঘোষণা  হয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। নারী নির্যাতন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই দিবসটি পালনের উদ্যোগ। অবশ্য দিনটিকে বিভিন্ন নারী সংগঠন ১৯৮১ সাল থেকে পালন করে আসছে।

নারী নির্যাতনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রূপ হচ্ছে স্বামীর হাতে স্ত্রী নির্যাতন। স্ত্রীদের নির্যাতনতো চলছেই, এমনকি এখনও ঘটছে স্ত্রীকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার মত ঘটনা। নারীর ক্রোড়ে থাকা সন্তানটির কথাও ভাবেন না অনেক বিবেকবর্জিত স্বামী।

ধর্ষণের যে মারাত্মক ক্ষতিকর দিকটি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে দেখা যায়, তা হচ্ছে কথিত সম্মান রক্ষার জন্য নারী হত্যা। কখনো কখনো ধর্ষিত নারী’র বাবা, ভাই, স্বামী বা অন্যান্য নিকটাত্মীয় পারিবারিক সম্মান রক্ষার জন্য ধর্ষিতাকে হত্যা করে। এক্ষেত্রে নারী দুই বার নির্যাতনের শিকার হয়। একবার অপরিচিতজনের কাছে নিজের সম্ভ্রম হারায়। এরপর পরিচিত জনদের হাতে জীবন বিসর্জন দেয়। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর এ ধরনের কথিত সম্মান রক্ষার বলির শিকার হয় প্রায় ৫ হাজার নারী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (বিবিএস) বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, পারিবারিক নির্যাতন বাড়ছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে গত অক্টোবর মাসে পারিবারিক নির্যাতনে ২৮ জন নারীকে হত্যা করা হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মোট ৩০৫টি পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২০৭ জন নারীকে স্বামী হত্যা করে। নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে ৩৯ জন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৯২ জন। তার মধ্যে ১৬৭ জন স্বামীর হাতে মারা গেছেন। ২৮ জন নির্যাতিত হয়েছেন। এর মধ্যে মামলা হয়েছে মাত্র ১১৭।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি দেশের ৫৬টি জেলা থেকে নির্যাতনের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট তৈরি করে। রিপোর্টের ২০১৬ ও ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলছে। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০১৬ সালে অক্টোবর মাস পর্যন্ত নারী নির্যাতনের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮২৫টি; যা ২০১৭ সালের একই সময়ে ৫৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ১৯৬টি।

আমাদের দেশে ক্ষুধা, দারিদ্র, অশিক্ষা, বেকার সমস্যা এই সকল সাধারণ সমস্যার পাশাপাশি নারীদের আরো কিছু মারাত্মক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় শুধুমাত্র তারা নারী বলেই। এ নির্যাতনের কোন শেষ নেই। এসিড সন্ত্রাস, ইভটিজিং , পারিবারিক সন্ত্রাস, যৌতুক, ধর্ষণ, গণ ধর্ষণ,  ফতোয়া, গৃহ পরিচারিকা নির্যাতন, সন্ত্রাস এরকম আরো অনেক ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হয় নারীদের।

পাশাপাশি নারী নির্যাতনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে সাইবার ক্রাইম। প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে দেশে কী সংখ্যক নারী সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই এখনও। ইন্টারনেটে সামাজিক সাইটেও নারী নির্যাতনের আরেকটি রূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে ইদানিং। ধর্ষণের চিত্র মুঠোফোনে ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বারবার ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন নারী।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ নভেম্বর ২০১৭/ টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়