প্রিপেইড মিটার : পর্ব-৩
বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে দাম পরিশোধের শর্ত
আসাদ আল মাহমুদ : বিদ্যুতের গ্রাহক সেবায় নতুন ধারার সূচনা প্রি-পেইড মিটার। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ইতিমধ্যে ৫ লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে। তবে মিটারের দাম প্রতি মাসে পরিশোধযোগ্য বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে দেওয়ার শর্ত থাকায় অনেকই মিটার নিতে অনিহা প্রকাশ করছে।
রাজধানীর লালবাগ ও পুরান ঢাকার একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলার সময় তারা এ কথা জানান।
লালবাগের পোস্তার বাসিন্দা শাহিনা আজমী বলেন, ‘প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করায় ঠিকমতো বিদ্যুৎ বিল জমা দিতে পারিনা। তাই প্রিপেইড মিটার লাগিয়েছি। বিল বকেয়া থাকবে না। কিন্তু সমস্যা হলো- মিটারের দাম ২৫০০ টাকা। এ টাকা মাসে মাসে বিলের সঙ্গে ৪০ টাকা করে আমাকে দিতে হচ্ছে। মিটার লাগানোর আগে জানলে প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করতাম না।’
এ ব্যাপারে কথা হয় বংশালের বাসিন্দা অপূর্ব হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতি প্রিপ্রেইড মিটারের দাম ২৫০০ টাকা। প্রতি মাসে বিলের সঙ্গে কিছু টাকা কেটে নেয়। আমার বড় ভাই এ মিটার ব্যবহার করলেও আমি করবো না। কারণ, বিদ্যুৎ কোম্পানি ব্যবসা করবে আর মিটারের টাকা গ্রাহককে দিতে হবে- এটা ঠিক না। মিটারের দাম বিদ্যুৎ কোম্পানির দেওয়া উচিত। এ কারণে প্রিপেইড মিটারের ব্যাপারে আগ্রহ কমছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রাহককে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোই মিটার বসিয়ে দিচ্ছে। বাড়িতে ব্যবহারের (সিঙ্গেল ফেজ) প্রতিটি মিটারের দাম পড়ছে আড়াই হাজার টাকার মতো। এই টাকা বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে প্রতি মাসে ৪০ টাকা করে কেটে নিয়ে সমন্বয় করা হবে। আর শিল্প, বাণিজ্য ও বড় গ্রাহকের ব্যবহারের (থ্রি ফেজ) প্রতিটি মিটারের দাম পড়ছে ১২ হাজার টাকার মতো। এসব মিটারের দাম সমন্বয়ের জন্য প্রতি মাসে ২০০ টাকা নেওয়া হবে।
কোনো মিটার নষ্ট হলে বা সমস্যা করলে বিতরণ কোম্পানিই তা পরিবর্তন করে দেবে। এ জন্য আলাদা কোনো টাকা দিতে হবে না। আর তিন বছর পর্যন্ত প্রতিটি মিটারের জন্য নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) থাকবে। এরপরও প্রয়োজনে যে কোনো সেবা দেবে সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানি। কোনো গ্রাহক চাইলে বাজার থেকে নিজে মিটার কিনেও নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে মিটার কিনে সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিকে দিতে হবে। তারা বিনা খরচে সেই মিটার পরীক্ষা করে স্থাপন করে দেবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রিপেইড মিটার স্থাপনের সময় গ্রাহকের কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়া হবে না। কিন্তু সিঙ্গেল ফেজ মিটারের ক্ষেত্রে মাসিক ৪০ টাকা আর তিন ফেজ মিটারের ক্ষেত্রে মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। যা বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে আদায় করা হবে। গ্রাহক মাসের শুরুতে যখন প্রি-পেইড মিটারের জন্য কার্ড কিনবে তখনই এই ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। একারণে গ্রাহকরা নিতে অনিহা প্রকাশ করছেন।’
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘সরকার ২০২১ সাল নাগাদ গোটা বিদ্যুৎ খাতকে প্রিপেইড মিটারিং ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসবে। এর ফলে বিদ্যুৎ সম্পদের ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। বিদ্যুতের ব্যবহার ও বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমরা রেগুলার বিলিং মিটার সিস্টেমের বিপরীতে দেশে প্রিপেইড মিটার চালুর পরিকল্পনা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে প্রিপেইড মিটার স্থাপন বর্তমান বিলিং সিস্টেম থেকে গ্রাহকদের মুক্তি দিতে ব্যাপক সহায়ক হবে।’
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ নভেম্বর ২০১৭/আসাদ/হাসান/শাহনেওয়াজ
রাইজিংবিডি.কম