৩০০ টাকার চায়ে লাভ ৪০০ টাকা
সিনেমা কিংবা নাটকে এমন দৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবতা আর পর্দার দৃশ্য একেবারেই যে আলাদা। বাস্তবে না দেখলে তা বোঝা যায় না। পেটের দায়ে আর অভিনয়ের মধ্যে অনেক ফারাক তা বুঝিয়ে দিলো নুরী।
তখন ঘড়ির কাটায় রাত ২টা। একুশে ফেব্রুয়ারির (২০২১) প্রথম প্রহর শেষ হতে চললো। মানুষের কোলাহল তেমন নেই। হাজার খানেক মানুষের জটলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিজুড়ে। এলইডি লাইটের আলো ঢেউ তুলছে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে। সেই আলোতেই নুরীর ছোটাছুটি। বড় বোনের সঙ্গে এসেছেন চা বিক্রি করতে। মায়াবী চেহারা। মিষ্টি হাসি লেগেই আছে মুখে। কিন্তু সে সব এড়িয়ে তার চোখ সারাক্ষণ খুঁজছে চায়ের ক্রেতাকে। শীতের রাত। হিম হিম ঠান্ডা বাতাস বইছে। তাই তার চায়েরও বেশ কদর। আগ্রহ দেখাচ্ছেন তরুণরাও।
পাশ দিয়ে হেঁটে যেতেই গুনগুনিয়ে নুরী বলে ওঠে, মামা চা খাবেন। রং চা, দুধ চা দুইটায় আছে। ঠান্ডার মধ্যে ভালো লাগবে।
চা খাওয়ার ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে। জানতে চাইলাম, চা কত করে? নুরী মুচকি হেসে জানিয়ে দিলেন, রং না দুধ চা। বাসা থেকে বানিয়ে এনেছি। চা ভালো। চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়েই নুরী ছুটলেন অন্য ক্রেতার দিকে। বললাম, টাকা নিয়ে যাও। হাতের ইশারায় বললো, আসছি।
লাজুক মেয়ে নুরী ফিরে আসলো কয়েক মিনিট পরেই। বসার যে তার সময় নেই। বড্ড ব্যস্ত। রাতেই মধ্যে বিক্রি করতে হবে ফ্ল্যাক্স ভর্তি চা। তবুও কথা হলো তার সঙ্গে। সে জানালো, অন্য সময় দিনেই বেলায় পার্ক ও ক্যাম্পাসে চা বিক্রি করে। কিন্তু আজ একুশের রাত। তাই মধ্যরাতে ফ্ল্যাক্স হাতে নেমে পড়েছেন চা বিক্রিতে। বিক্রিও বেশ ভালো। ৫ টাকার চা ১০ টাকা। আর ১০ টাকার চা ২০ টাকায় বিক্রি করছে।
কথায় কথায় বললো, ৩০০ টাকার চায়ে আজ লাভ হয়েছে ৪০০ টাকা। এত লাভ বলতেই সে বলে, মামা অনেক ঝামেলা। দেখেন না কয়েকজনকে এক সঙ্গে থাকতে হয়। একটু নির্জন বা অন্ধকারে গেলে নানা ধরনের কথা শুনতে হয়।
কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইলাম, ঘর-সংসার আছে। প্রশ্ন শুনেই চিরায়িত বাঙালি নারীর মতো লজ্জায় রাঙা হয়ে যায় তার মুখ। কিন্তু হঠাৎ মিলিয়ে যায় নুরীর মুখের সব চাঞ্চল্যতা। অতি কষ্টে বলে ফেলে, গরীবের কপালে সংসার সয় না। সবাই শুধু মজা নিতে চায়। কেউ ধরে রাখতে চায় না।
ডাক পড়ে বড় বোনের। আয়, আয় পুলিশ ব্যারিগেট তুলে নিয়েছে। শহীদ মিনারের দিকে আয়। শত মানুষের ভিড়ে চায়ের ফ্ল্যাক্স হাতে মিলিয়ে যায় নুরী।
মামুন/সাইফ
আরো পড়ুন