ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আইনি ও রাজনৈতিক সমীকরণে থমকে আছে রাজাকারের তালিকা তৈরি

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ২৬ মার্চ ২০২১   আপডেট: ০৯:০৩, ২৬ মার্চ ২০২১
আইনি ও রাজনৈতিক সমীকরণে থমকে আছে রাজাকারের তালিকা তৈরি

প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে রাজাকার, আলবদর, আলশামসের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির পরিকল্পনা করেছে সরকার। চলতি বছর তালিকা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়। তবে যাবতীয় প্রক্রিয়া থমকে আছে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন না-হওয়ায়।

২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঘটা করে ১০ হাজারেরও বেশি রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তালিকা প্রকাশের পর বিষয়টি সমালোচিত হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেসময় বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের স্বাধীনতা দিবসের আগেই নতুন করে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হবে। সেসময় পেরিয়ে গেলেও দেখা দেয় নতুন সংকট। কেননা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন অনুযায়ী এ ধরনের তালিকা প্রকাশের এক্তিয়ার সরকারের নেই। এরপর জামুকা আইন সংশোধন করে তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এমপির নেতৃত্বে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি রাজাকারের তালিকা সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু ও প্রকাশের বিষয়টি নির্ধারণ করবে জানানো হয়। উল্লেখ্য এই কমিটিই জামুকা আইন সংশোধনের সুপারিশ করে।

জামুকা আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী মন্ত্রিসভা অনুমোদন করলেও আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং নিয়ে সেটি সংসদে উত্থাপনের কথা ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বরের আগে। কিন্তু তা হয়নি। এ কারণেই রাজাকারের তালিকা তৈরির সব ধরনের উদ্যোগ থমকে রয়েছে।

তবে মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশন। এই অধিবেশনে এ সংক্রান্ত আইনের সংশোধনী খসড়া পাস করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, আমাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে (২৬ মার্চের আগে) বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। চলতি বছরের বিজয় দিবসের আগে (১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে) রাজাকারদের তালিকাও প্রকাশ করা হবে। যে আইনি জটিলতায় এই কাজ থেমে আছে তা দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে এ সংক্রান্ত সংশোধিত আইন উপস্থাপন করা হবে। আইন পাস হলেই এর কার্যক্রম গতি পাবে। তবে, তথ্য সংগ্রহে সরকারের একাধিক সংস্থা কাজ করছে।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, রাজাকারদের নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করা আমি বলবো, বর্তমান সরকারের একটি দায়বদ্ধতা। এ কাজে সতর্কতা জরুরি। আগামীতে ১০ হাজার রাজাকারের তালিকা প্রকাশ না হোক, অন্তত ধাপে ধাপে গেজেটভুক্ত রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যদের তালিকা প্রকাশ করা হোক।

২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের নাম প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই তালিকায় অনেক শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতার নামও প্রকাশ পায়। বিষয়টি সর্বমহলে ব্যাপক সমালোচিত হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐ তালিকা স্থগিত করার নির্দেশ দেন। এরপরই তালিকাটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা এখন খুবই জটিল রাজনৈতিক বিষয়। এখন বেশির ভাগ রাজাকার বেঁচে নেই। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের সন্তান ও আত্মীয়স্বজন রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দালালি করেছে, তাদের একটি গেজেট করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে ট্রাইব্যুনালে তাদের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলাও হয়। পাশাপাশি এমন অনেকেই ছিলেন, যারা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, আবার মুক্তিযোদ্ধাদেরও তথ্য দিতেন। পারস্পরিক বিরোধের কারণে সেসময় অনেক আওয়ামী লীগ নেতার নামেও থানায় দালাল আইনে মামলা হয়। সেসব ব্যক্তির নাম ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘রাজাকারের তালিকায়’ চলে আসে। ১৯৭০ সালের উপনির্বাচনে যেসব ব্যক্তিকে এমপিএ বা এমএনএ নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিল, তাদেরও সেখানে রাজাকার বলে উল্লেখ করা হয়। 


 

হাসান/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়