ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রাজধানীতে লকডাউনের প্রথম দিন 

জাহাঙ্গীর আলম বকুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৮, ৫ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ০১:৩৭, ৬ এপ্রিল ২০২১
রাজধানীতে লকডাউনের প্রথম দিন 

করোনা সংক্রমণরোধে সারা দেশে লকডাউনের প্রথম দিন আজ সোমবার (৫ এপ্রিল)। এদিন ঢাকাশহরের সড়কে গণপরিবহন চলতে দেখা যায়নি। তবে ব্যক্তিগত যানবাহন, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করেছে। 

রাজধানীতে মার্কেট, শপিংমল, প্রধান সড়কের পাশের দোকান ও ফুটপাত বন্ধ থাকলেও মহল্লার অলিগলির মধ্যে দোকান, ফুটপাত যথারীতি খোলা ছিল। সেখানে চায়ের দোকানে বসে মানুষকে গল্প করতেও দেখা গেছে।

ঢাকার একপ্রান্ত শনির আখড়ার রাগেরবাগ থেকে অপরপ্রাপ্ত গাবতীয় পর্যন্ত মোটরসাইকেলে আসতে অন্যদিন সময় লাগে সোয়া ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা। আজ ৩০-৩৫ মিনিটের মধ্যে আসা সম্ভব হয়েছে। এপথ অতিক্রমকালে ‘স্টাফ বাস’ লিফলেট লাগানো পাঁচটি বাস সড়কে দেখা গেছে। কিছু সংখ্যক ট্রাক বা মিনি ট্রাকও চলাচল করছে। তবে গণপরিবহন দেখা যায়নি।

হানিফ ফ্লাইওভার এবং নিউমার্কেট থেকে গাবতলী পর্যন্ত মিরপুর রোডে বিপুল সংখ্যক প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা, মোটর সাইকেল, রিকশা চলাচল করছে। সোবহানবাগ, গণভবনের পাশের থানা গেটে পুলিশকে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে।

নিউমার্কেট, ঢাকা কলেজের সামনে, কলাবাগান, শ্যামলী, কল্যাণপুরের প্রধান সড়কের পাশের কোনো মার্কেট বা দোকান বন্ধ ছিল। ফুটপাতে হকার বা ভ্রাম্যমাণ দোকান বসেনি।

আসাদ গেটের তালুকদার ফিলিং স্টেশনে দেখা গেছে, স্টেশন খোলা থাকলেও অন্যদিনের মতো কর্মব্যস্ততা নেই। সেখানকার এক কর্মকর্তা জানান, সকালে কিছু প্রাইভেটকার, মোটর সাইকেল তেল নিতে আসে। দুপুরের দিকে কিছুক্ষণ পরপর দু-একটি মোটরসাইকেল আসছে। তাদের বিক্রি নেই বললেই চলে।

লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকে লেনদেন আড়াই ঘণ্টা। সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর শনির আখড়ার ডাচ বাংলা ব্যাংকের শাখায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে স্বাভাবিক কাজ চলছে। আধাঘণ্টায় তারা ১২৯ জন গ্রাহকের বিভিন্ন সেবা দিয়েছে। ব্যাংকের ভেতরে নির্দিষ্ট সংখ্যক গ্রাহককে ঢোকানো হচ্ছে। তারা কাজ শেষ করে বের হলে গেটে অপেক্ষমাণদের ঢোকানো হচ্ছে। অধিকাংশই ডেস্কে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢাকার কদমতলী থানার মেরাজনগর বাজার সংলগ্ন খোকন ভাইযের গ্যারেজে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশই ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে গেছে। গ্যারেজের তত্ত্বাবধায়ক জানান, রাতে গ্যারেজে ২১টি যাত্রীবাহী ইজিবাইক ও ১৪টি মোটরসাইকেল ছিল। সকাল সোয়া ১০টায় সেখানে ছিল মাত্র ৪টি মোটরসাইকেল এবং ৭টি ইজিবাইক।

মেরাজনগর বাজার থেকে জিয়া স্মরণী রোড ধরে শনির আখড়ার দূরত্ব দেড় কিলোমিটার। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই পথটুকু যেতে সময় লাগে প্রায় আধাঘণ্টা। কারণ সড়কের ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ দোকান এবং যানজট লেগে থাকে। আজ সময় লেগেছে ১০/১২ মিনিট। সড়কের ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ দোকান ছিল এবং ইজিবাইক, অটোরিকশা, ভ্যান, রিকশা সবই ছিল। তবে মানুষ চলাচল কিছুটা কম এবং ট্রাক বা মিনিট্রাক ছিল না। তাই যানবাহনের জট লাগেনি।

শনির আখড়ার আয়শা মোশারফ শপিং কমপ্লেক্স, আরএস শপিংমহলসহ বড় বড় সুপার মার্কেট বন্ধ ছিল। তবে সড়কের পাশের দোকান, ফুটপাতের দোকান খোলা ছিল। ফুটপাতে যথারীতি সব পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসেছিলেন ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা। তবে ক্রেতা ছিল কম।

আয়শা মোশারফ শপিং কমপ্লেক্সের সামনে বাদাম বিক্রেতা আলকাজ হোসেন জানান, তিনি লকডাউনের বিষয়টি জানেন। তবে বাইরে এসেছেন কেন- এমন প্রশ্ন করা হলে তার পাল্টা প্রশ্ন ছিল, ‘তাহলে খাব কী?’

বেলা ১১টার দিকে রিকশা চালক মো. সোলাইমান হোসেন জানান, আজ অন্যদিনের মতো যাত্রী পাচ্ছেন না। অন্যদিন এ সময় তার ৩০০/৩৫০ টাকা আয় হয়। আজ হয়েছে মাত্র ১৩০ টাকা। যাত্রী না পাওয়ার কথা জানালেন তার পাশে থাকা ইজিবাইকের চালক লোকমান হোসেনও। তিনি জানান, অন্যদিনের তুলনায় আজ তারও অর্ধেক আয় হয়েছে।

জিয়া স্বরণী রোডের ফল বিক্রেতা মো. ইমরান জানান, সেই সকালে এসেছেন তিনি। কিন্তু বিক্রি তেমন হয়নি। তবে ফুটপাতের সবজি বিক্রেতা জানান, লকডাউনের কারণে তিনি আজ সবজি কম এনেছেন। এর  পুরোটাই বিক্রি হয়ে গেছে।

রায়েরবাগ এলাকার গলির ভেতরে দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যথারীতি খোলা ছিল। কদমতলী থানার পাশের সড়কে একটি চায়ের দোকানে তিনটি বেঞ্চে ৮/১০ জন বসে গল্প করছিলেন। একইচিত্র দেখা যায়, মিরপুরের মাজার রোডেও। সেখানে একটি ভ্যানের ওপর চারজন বসে গল্প করছিলেন। চায়ের দোকানে কয়েকজনকে জটলা করে চা খেতেও দেখা যায়।
 

/বকুল     

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়