২৪৭৪টি ফ্ল্যাটের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী 

সরকারি কর্মচারীদের নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত কর‌ার ল‌ক্ষ্যে উ‌দ্বোধন হ‌লো গণপূর্ত অধিদপ্তর ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপ‌ক্ষের নি‌র্মিত ২ হাজার ৪৭৪ ফ্ল্যাট।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হ‌য়ে এসব ফ্ল‌্যা‌টের শুভ উ‌দ্বোধন ঘোষণা ক‌রেন। প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে বরাদ্দ প্রাপকদের কাছে এসব ফ্ল্যাটের বরাদ্দপত্র হস্তান্তর করা হয়।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ নি‌র্মাণ ক‌রে ২ হাজার ৪৭৪ ফ্ল্যাট। তাছাড়াও উদ্বোধন করা অন‌্যান‌্য প্রকল্পের মধ্যে র‌য়ে‌ছে আজিমপুর, মতিঝিল ও মালিবাগ সরকারি কলোনিতে বহুতল ভবন নির্মাণ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য তেজগাঁওয়ে আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য মীরপুরে আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প।

গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত ঢাকার মিরপুর, আজিমপুর, মতিঝিল ও মালিবাগে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বসবাসের জন্য নির্মিত ২ হাজার ৪৭৪টি অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ফ্ল্যাট উদ্বোধন করা হয়। যার মধ্যে ২৮৮টি ফ্ল্যাট গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের এবং ৫৮টি ফ্ল্যাট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বসবাসের জন্য নির্ধারিত রয়েছে।

তাছাড়াও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ১৪৮ কোটি ৭৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ঢাকার মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে ১৪তলা বিশিষ্ট পাঁচটি ভবনে মোট ৫৩৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ২ একর জমির উপর নির্মিত এসব অত্যাধুনিক ভবনে মাসিক, সাপ্তাহিক এমনকি দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া পরিশোধের মাধ্যমে বস্তিবাসীরা বসবাসের সুযোগ পাবে। ইতোমধ্যে ৩০০টি ফ্ল্যাট বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে।

ঢাকার মিরপুর ৬নং সেকশনে ১৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে চারটি ভবনে ২৮৮টি ফ্ল্যাট গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বসবাসের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ১ জানুয়ারি ২০১৬ সালে আরম্ভ হয়ে ৩০ জুন ২০২১ সালে সমাপ্ত হয়।

ঢাকার মালিবাগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৪৫৬টি ফ্ল্যাটের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১০ আগস্ট ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে। এ প্রকল্পের আওতায় ২১২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত চারতলা ভবনে এসব ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়। এসব ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ১০০০ এবং ৮০০ বর্গফুট। এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় ৩ তলা বিশিষ্ট একটি মসজিদ ও একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বসবাসের জন্য ৪৪ কোটি ৭২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে দুটি ভবনে নির্মাণ করা হয়েছে ৫৮টি ফ্ল্যাট। সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে শুরু হয়ে জুন ২০২১ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। নবনির্মিত এসব ফ্ল্যাটের মধ্যে ১৮০০ বর্গফুট আয়তনের ৭টি, ১৫০০ বর্গফুট আয়তনের ৭টি এবং ৮০০ বর্গফুট আয়তনের ৪৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক কার ওয়াশিং সিস্টেম।

আজ উদ্বোধনকৃত প্রকল্পের মধ্যে খরচ ও আয়তন বিবেচনায় বৃহত্তম প্রকল্প ঢাকাস্থ আজিমপুর সরকারি কলোনির ভেতরে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় ৯৯০ কোটি ৩০ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৩.৬২ একর জমিতে ১৭টি ভবনে মোট ১ হাজার ২৯২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। ১০০০ বর্গফুট এবং ৮০০ বর্গফুট আয়তনের এসব ফ্ল্যাটে রয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা। এসব ভবনে রয়েছে সুপরিসর কমন স্পেসসহ একাধিক লিফট। প্রকল্প এলাকায় একটি ছয় তলা বিশিষ্ট কমন ফ্যাসিলিটিজ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

মতিঝিল সরকারি কলোনিতে (হাসপাতাল জোন স্টোর কম্পাউন্ড) বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২৫৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচটি ভবনে নির্মাণ করা হয়েছে ৩৮০টি ফ্ল্যাট। ২০তলা বিশিষ্ট এসব ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে চারটি করে ইউনিট এবং প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ১০০০ বর্গফুট এবং ৮০০ বর্গফুট।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিত বস্তিবাসীদের জন্য ভাড়াভিত্তিক ৩০০টি ফ্ল্যাটের বরাদ্দ মঙ্গলবার প্রাপকদের কাছে বরাদ্দপত্র হস্তান্তর করা হয়।

একই সময় মাদারীপুর জেলা সদরের যে সকল সরকারি অফিসের নিজস্ব জমি ও অফিস ভবন নেই, সেই সব অফিসের জন্য ৭০.১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১০তলা বিশিষ্ট সমন্বিত অফিস ভবনের উদ্বোধন করা হয়।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপির সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, সংসদ সদস্যরা, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতার, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হায়দারসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।