ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

পা হারালেও জীবন হারাতে চান না আকবর

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ২৫ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৭:২২, ২৫ আগস্ট ২০২১

ক্রিকেট খুব ভালোবাসতেন। খেলতেনও ভালো। সেই ক্রিকেটই কাল হলো জীবনে। বছর কয়েক আগে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে একদিন শক্ত করে টেপ প্যাঁচানো টেনিস বল এসে আঘাত করে বাম পায়ের ওপরের দিকে, মাংসে। টেনিস বলের সমান জায়গা কালো হয়ে যায়। সেদিন রাতে পায়ের ব্যথায় ঘুমাতে না পারায় বাবা ব্যথার ওষুধ এনে দেন। দুইদিন সেই ওষুধ খাওয়ার পর পায়ের ব্যথা কমে যায়।

পায়ের ব্যথার কথা ভুলেই গিয়েছিলেন আকবর। সংসারে বাবা-মা-ছোট একটা ভাই আর এক বোন। বাবা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী। থাকেন মিরপুর-১ এর সিটি কলোনি বস্তিতে।  সরকারি জায়গায় নিজেদের মতো করে বানানো দুই রুমের বাসা।  যেকোনো সময় এই বস্তি থেকে তুলে দিতে পারে।  বাবার সামান্য আয়ে চলছিল না সংসার।

আরো পড়ুন:

বড় ছেলে হিসাবে আকবর সংসারে অবদান রাখতে চায়। তাই মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার ফুটপাতে বুড়িগঙ্গার ওই পাড়ের কালিগঞ্জ থেকে শার্ট এনে বিক্রি করেন।  লাভও খারাপ হচ্ছিলো না।  বাবার চাকরির টাকা আর আকবরের শার্টের ব্যবসার টাকা মিলে মোটামুটি ভালোই চলছিলো।

২০২০ সালের রোজার ঈদের কয়েকদিন আগের ঘটনা।  কাপড় বিক্রি করার সময় হঠাৎ করেই তীব্র ব্যথা শুরু হয় আকবরের বাম পায়ে।  বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে দোকান বন্ধ করে বাসায় ফিরে যান।  সারারাত পায়ের ব্যথায় ঘুমাতে পারে না। পরদিন বাবা আর ছোট ভাই তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার ওষুধ দেন। কয়েকটা টেস্ট করতে বলেন। 

টেস্টের পর রিপোর্ট দেখে ডাক্তার গম্ভীর হয়ে যান। তেমন কিছু বলেন না।  কেবল আকবরের বাবাকে আলাদা করে ডেকে জানান, তার ছেলের খারাপ অসুখ হয়েছে।  একটা ওষুধ লিখে দেন এবং দুই-এক দিনের মধ্যে ক্যানসার হাসপাতালের একজন ডাক্তারকে দেখাতে বলেন।  ডাক্তারের নামও লিখে দেন। আকবরের বাবার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে। 

পরদিনই ছেলেকে নিয়ে ক্যানসার হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখান।  আগের করা সব রিপোর্ট এবং আকবরের পায়ের অবস্থা দেখে ডাক্তার জানান, কয়েক বছর আগে পায়ের বল লাগা জায়গাটার মাংস শক্ত হয়ে সেটা টিউমারে রুপ নিয়েছে। যাকে বলে ক্যানসার। চিকিৎসা হিসেবে আপাতত ৬টা কেমো খেরাপি দিতে বলেন।

তরতাজা ২৪ বছরের ছেলের এই অসুখের কথা শুনে বাবা সহ্য করতে পারেননি। বাসায় ফিরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাস খানেকের মধ্যে আকবরের বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর সারাজীবনের সঞ্চয় লাখ খানেক টাকা হাতে পায় আকবর এবং তার পরিবার। সেই টাকা এবং বিভিন্নজনের কাছ থেকে পাওয়া সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে অনিয়মিতভাবে চলে আকবরের কেমো থেরাপি।

মাসে দুটো করে কেমো দেওয়ার কথা থাকলেও ৬টা কেমো দিতে সময় লাগে প্রায় এক বছর। কেমো দেওয়া শেষ হয়, আকবরের টাকাও শেষ হয়। কিন্তু তার পায়ের ব্যথা আর শেষ হয় না। অসহ্য ব্যথা নিয়ে কাটে আকবরের দিনরাত। একদিন ক্যানসার হাসপাতালের আরেক ডাক্তার তার কাগজপত্র দেখে জানান, ৩-৪ লাখ টাকা হলে তার একটা স্থায়ী চিকিৎসা করা যাবে। কিন্তু কোথায় পাবে আকবর অতগুলো টাকা! বিকল্প প্রস্তাবও দের ওই ডাক্তার।

আকবরের পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেন।  এছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলেও জানান সেই ডাক্তার।  তিনি জানান, ধীরে ধীরে পা থেকে দ্রুত আকবরের সারা গায়ে ছড়িয়ে পড়ছে ক্যানসারের ভাইরাস।  যা করার দ্রুত করতে হবে।  বাধ্য হয়ে বাঁচার আশায় আকবর তার শরীর থেকে বাম পা কেটে ফেলার সম্মতি দেন ডাক্তারকে।  তার সম্মতি পেয়ে ডাক্তার চলতি বছরের মার্চ মাসে আকবরের পা কেটে ফেলেন।

আকবরের পা কেটে ফেলার পর কাটা পায়ের একখণ্ড মাংস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় ল্যাবরেটরিতে।  এক সপ্তাহ পর সেই পরীক্ষার ফল পাওয়া যায়।  আকবরের কপাল খারাপ। তার শরীরে এরপরও রয়ে গেছে ক্যানসারের জীবাণু। এখন আকবরের একমাত্র চিকিৎসা কেমো থেরাপি।  ডাক্তার বলেছেন, খুব দ্রুত ১১টি কেমো থেরাপি দিতে। 

সেই কেমো ক্যানসার হাসপাতালে দিতে হলেও প্রতি কেমোতে (হাসপাতালে থাকা-খাওয়া, ওষুধ কেনা) খরচ পড়বে ১৫-১৭ হাজার টাকা করে।  মাসে দিতে হবে দুটো কেমো।  একটা কেমো দিতে সময় লাগবে ১০-১২ দিন। কিন্তু কোথায় পাবে টাকা। ডাক্তার বলার পরও প্রায় ৫ মাস হয়ে গেলো। এখনও আকবর শুরু করতে পারেনি কেমো দেওয়া। সবগুলো (১১টি) কেমো নিয়মিত দিতে গেলে সব খরচ মিলিয়ে মোট লাগবে প্রায় ২ লাখ টাকা। আকবরকে সহযোগিতার জন্য যোগাযোগের নম্বর ০১৭১৩০৯১৯৭১ (বিকাশ)।

মেয়া/এসবি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়