ঢাকা     মঙ্গলবার   ২১ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

শুভ চেয়েছিলেন সংসারের হাল ধরতে, এখন পরিবারের বোঝা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ৩০ এপ্রিল ২০২৪  
শুভ চেয়েছিলেন সংসারের হাল ধরতে, এখন পরিবারের বোঝা

বাবা-মায়ের সঙ্গে হাফিজুল ইসলাম শুভ

হাফিজুল ইসলাম শুভ (২১)। হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠলেও দুই চোখ জুড়ে রঙিন স্বপ্ন ছিল। তবে সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে নিমিষে। সড়ক দুর্ঘটনায় হারাতে হয়েছে একটি পা। এতে যে শুভ চেয়েছিলেন অসহায় পরিবারের হাল ধরতে, তিনি এখন পরিবারের বোঝা হয়ে বেঁচে আছেন।  

হাফিজুল ইসলাম শুভর বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের চেকরমারি এলাকায়। সেখানকার শহিদুল ইসলাম ও হালিমা খাতুন দম্পতির ছেলে তিনি। পরিবারে তার স্কুল পড়ুয়া এক বোন রয়েছে।

যে বয়স উপভোগের, নিজেকে গড়ার; সেই বয়সে চুপষে পড়েছেন শুভ। রয়েছেন লোকচক্ষুর আড়ালেও। প্রায় এক বছর ধরে পঙ্গু পরিচয়ে ঘরবন্দি তিনি। ছেলের চিকিৎসায় সব হারিয়ে নিঃস্ব পরিবার। তারপরও অপ্রত্যাশিত এ জীবন মেনে নিয়েছেন শুভ। সাহস হারাননি এখনও, স্বপ্ন দেখেছেন ঘুরে দাঁড়াবার। একটি কৃত্রিম পায়ে ভর দিয়ে সংসারে সহায় হতে চান তিনি। 

২০১৯ সালে স্থানীয় বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাস করেন শুভ। দরিদ্র পরিবারের সহায় হতে পড়ালেখা ছেড়ে ট্রাক চালকের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। রপ্ত করেন ট্রাক চালানোর কৌশলও। তবে এ পেশায় তার আর এগুনো হয়নি। এই পেশায় তার জীবনে নেমে আসে কালো মেঘ।

শুভ জানান, ঘটনাটি ২০২৩ সালের ২৬ আগস্টের। সেদিন সিমেন্ট ভর্তি ট্রাক নিয়ে ঢাকা থেকে আসছিলেন নিজ জেলায়। দিনাজপুরেরর ঘোড়াঘাট এলাকায় পৌঁছুলে ট্রাকের ত্রুটি দেখা দেয়। সড়কের পাশে ট্রাকটি দাঁড় করিয়ে যন্ত্রাংশ হাতে নিয়ে শুভ ট্রাকের নিচে শুয়ে পড়েন। ত্রুটি শনাক্ত করে সমাধানের চেষ্টা করছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই ঘটে বিপত্তি। পিছন থেকে অপর একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয় শুভর ডান পা। সেখান থেকে শুভকে প্রথমে রংপুরে এবং পরে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো হলেও স্বাভাবিক জীবন নিয়ে ফিরতে পারেনি তিনি। ডান পা কেটে ফেলতে হয় তার। 

তিনি বলেন, ‘নিয়তি মেনে নিয়েছি। কিন্তু ঘরবন্দি জীবন আর ভালো লাগে না।  অসুস্থ বাবার কষ্ট সহ্য করতে পারি না। আমার আত্মবিশ্বাস আছে, একটি কৃত্রিম পা হলে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে চলতে পারব, কিছু একটা করতে পারব। কিন্তু আমার পরিবারের পক্ষে কৃত্রিম পা কেনা সম্ভব নয়। আমি ভিক্ষাবৃত্তি করে বাঁচতে চাই না, কিছু একটা করতে চাই।’ 

শুভর মা হালিমা খাতুন বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল একমাত্র ছেলেকে পড়ালেখা শিখিয়ে ভালো অবস্থানে পৌঁছে দেবো। কিন্তু অভাব আমাদের সেই সুযোগ দেয়নি। অভাবের তাড়নায় ছেলে ট্রাকের হেল্পারি করতে গিয়ে পঙ্গু হয়ে ফিরে এসেছে। তার বয়সি ছেলেরা সুন্দর জীবন নিয়ে চলাফেরা করলেও সে ঘরবন্দি।’ 

শুভর বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলের চিকিৎসার পিছনে সব শেষ করেছি। সহায়-সম্বল সব শেষ করে মানুষের কাছে হাত পেতে যোগাড় করে প্রায় ৭ লাখ টাকা ফুরিয়েছি চিকিৎসায়। এখন শেষ সম্বল ভিটেমাটিটাই। আমি নিজেও স্ট্রোকের রোগী। জীবনের নিশ্চয়তা নেই। কাজ করতে পারি না। পুরো পরিবার খেয়ে না খেয়ে কোনমতে দিনাতিপাত করছি। ছেলেটার ভাগ্যে হয়ত এটাই ছিল। এখন এই পঙ্গু ছেলেটার একটা কৃত্রিম পা আর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে কিছুটা স্বস্তি পেতাম।’ 
 

নাঈম/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়