ঢাকা     মঙ্গলবার   ২১ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাব চান প্রধানমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ২২:৩৭, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাব চান প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করে, কিন্তু তারা নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে দেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো উল্লেখ করে তিনি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে এর জবাব চেয়েছেন।   

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের আগে দেওয়া বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। এখানে আন্দোলন করার সময়ে একজন মহিলা প্রফেসর বলছেন, আমি ভার্সিটির প্রফেসর। পুলিশ যেভাবে তাকে ধরে হাতমোড়া দিয়ে মাটিতে ফেলে হাঁটু দিয়ে চেপে তাকে অ্যারেস্ট করেছে! সেখানে ছাত্র-শিক্ষকদের হাতে লাঠিও ছিল না, আগুনও ছিল না। তারা কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে মারমুখীও ছিল না। তারপরও আমেরিকার পুলিশ যে আক্রমণ করেছে, এতে সেই দেশে মানবাধিকার যে কতটুকু আছে, সেটি প্রশ্ন? কথা বলার স্বাধীনতা কতটুকু আছে, সেটি প্রশ্ন? অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকার কতটুকু আছে, সেটি আমাদের প্রশ্ন?

‘বাংলাদেশের ওপর মানবাধিকারের রিপোর্ট লেখে, কিন্তু নিজেদের চেহারাটা আয়নায় দেখে না। তারা যেভাবে আচরণ করে, আমাদের পুলিশ তো সেভাবে করেনি। ধৈর্যের পরিচয় দিতে গিয়ে উল্টো পুলিশ বিএনপির হাতে মার খেয়েছে। উল্টো তারা পুলিশকে যেভাবে মাটিতে ফেলে পিটিয়েছে, এভাবে আমেরিকায় যদি একটা পুলিশের গায়ে কোনো দলের লোক হাত দিতো, তারা কী করত?’

আমেরিকায় বাঙালি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাঙালি পরপর কতজন মারা গেছে। সেদিনও দুজন বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। তারা সেখানে গেছে জীবিকার জন্য। তাদেরকে এভাবে কেন হত্যা করা হবে? তারা তো কোনো অপরাধ করেনি। ছোট বাচ্চা ছেলেরা পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রেহাই পায় না।

‘ছোট একটা শিশু, সে প্রেসিডেন্টকে কী বলেছে, এজন্য তাকে ঘরে ঢুকে গুলি করে মেরেছে। বাড়ির ভেতর ঢুকে সেই বাচ্চাকে গুলি করে মেরেছে। কী জবাব দেবে? আমাদের যারা মানবাধিকারের গীত গায় এবং বাংলাদেশে মানবাধিকার খুঁজে বেড়ায়, তারা এর কী জবাব দেবে? আমি জবাব চাই, সেই মানবাধিকার সংস্থা, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এবং যারা আমাদের ওপর খবরদারি করে, তাদের কাছে। আমি জবাব চাই যে, আমার বাঙালি কেন মারা যাবে?’

তিনি বলেন, ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু মায়ের কোল থেকে নিয়ে তাকে হত্যা করা, প্রফেসরদের ওপর জুলুম করা, পুলিশ মহিলা প্রফেসরকে যেভাবে মাটিতে ফেলে হাতকড়া পরিয়েছে, এর জবাব আমরা চাই। এটা তো সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘন।’

বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে এবং সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শত্রুদের মুখে ছাই দিয়েই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এগিয়েছে। 

মা ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এমন কোনো খাত নেই, যা পিছিয়ে আছে।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে কোভিড-১৯ অতিমারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করেও বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক শক্তি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে এবং ২০২৬ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর অবশ্যই ঘটবে।’ 

জনগণই আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তি, উল্লেখ বরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনে জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বিএনপি ভোট কারচুপি ও দেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের সূচনা করেছে, তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের শিক্ষা নেওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কেননা, আওয়ামী লীগ এমন একটি দল, যারা দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে এবং দলের অনেক নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। 

এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও কাজী জাফরউল্লাহ এবং সিনিয়র সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

পারভেজ/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়