প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যুতে ছাত্রের আবেগঘন স্ট্যাটাস
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
শিক্ষার্থীদের জীবনে শিক্ষক হচ্ছেন আশীর্বাদ। শিক্ষকের সুচিন্তিত নির্দেশনা আর উদার সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা পৌঁছে অভীষ্ট লক্ষে। তাদের কল্যাণধর্মী, স্নেহচ্ছায়ায় শিক্ষার্থীর জীবন বিকশিত হয়। সেই শিক্ষক যখন না ফেরার দেশে চলে যান, তখন তার শিক্ষার্থীদের কাছে সেটি হয় সবচেয়ে বেদনার।
এমনি একজন শিক্ষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শাহীন মাহবুবা কবীরের প্রয়াণে শোকে স্তব্ধ তার ছাত্র প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস। শাহীন মাহবুবা ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরীর বড় মেয়ে।
প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস পোস্ট করেছেন তিনি।
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) রাত ৭টা ৩০ মিনিটে ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া পোস্টে এম এম ইমরুল কায়েস লেখেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শাহীন মাহবুবা কবীর; আমাদের প্রিয় শাহীন ম্যাডাম মারা গেলেন গতকাল। তিনি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরীর বড় মেয়ে।’
‘ম্যাডামের ক্লাসে পড়ানোর স্টাইল, ছাত্র-শিক্ষকের ইন্টারেকশন এবং বিষয়বস্তুর গভীরতা আমার কাছে অসাধারণ মনে হতো। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পরেও আমার সঙ্গে ম্যাডামের যোগাযোগ ছিল নিরন্তর, প্রতিনিয়ত। একজন শিক্ষক যে কীভাবে একেবারে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠতে পারে, ম্যাডাম ছিল আমার জীবনে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সমসাময়িক সাহিত্য, রাজনীতি, সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের আলাপ হতো বেশ।’
‘শাহীন ম্যাডাম গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে দুরারোগ্য ক্যানসারে ভুগছিলেন। সিঙ্গাপুরে বসবাসরত তার ছেলের বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। আমার সঙ্গে নিয়মিতই কথা হতো। ম্যাডাম যে এত অদ্ভুত সুন্দর রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতেন- এটা জানা ছিল না। গান রেকর্ড করে প্রতিনিয়তই আমাকে পাঠাতেন। প্রথম দিকে চিকিৎসায় ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার ক্রমশ উন্নতি হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন জানতে পারলাম, চিকিৎসক বলে দিয়েছে ওনার সময় আর বেশি নেই। শেষ দিনগুলো দেশে কাটাতে তড়িঘড়ি করেই ফিরে এলেন।’
‘দেশে ফেরার পর একদিন মাত্র আমার সঙ্গে শাহীন ম্যাডামের কথা হয়েছে। ওনার বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই আমার বিদেশ সফরের কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়। ভেবেছিলাম দেশে ফিরেই ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করবো। জাহাঙ্গীরনগরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। আমাদের দু’জনের একটি বিশেষ অনুবাদ করারও কথা ছিল। কোন কিছুই আর হলো না, হবে না আর কোনদিনও। তার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া কঠিন। বিদেশের মাটিতে বসেও প্রতি মুহূর্তে অনুভব করছি স্বজন হারানোর বেদনা।’
‘প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক শাহীন মাহবুবা কবীরের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।’
পোস্টের সাথে শিক্ষকের নিজ কণ্ঠে গাওয়া একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত যোগ করে স্মৃতিচারণ করেন এম এম ইমরুল কায়েস।
পারভেজ/এনএইচ