ঢাকা     বুধবার   ০১ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

দেশীয় প্রকৌশলীদের হাতে সচল ডেমু ট্রেন চলবে আজ

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ৯ অক্টোবর ২০২২   আপডেট: ০৮:৩৭, ৯ অক্টোবর ২০২২
দেশীয় প্রকৌশলীদের হাতে সচল ডেমু ট্রেন চলবে আজ

ফাইল ফটো

দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে চীনা প্রযুক্তিতে নির্মিত ডেমু ট্রেন। এসব ট্রেন সচল করতে এগিয়ে আসেন দেশীয় প্রকৌশলীরা। সেই চেষ্টায় সফলও হয়েছেন তারা। দেশীয় প্রকৌশলীদের হাতে সচল হওয়া একটি ডেমু ট্রেন রোববার (৯ অক্টোবর) থেকে রংপুর-পার্বতীপুর রুটে চলাচল শুরু করবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. শরিফুল আলম জানিয়েছেন, আজ বেলা ১১টায় দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত থেকে রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন দেশীয় প্রযুক্তিতে সচলকৃত ডেমু ট্রেনের পার্বতীপুর-রংপুর রুটে বাণিজ্যিক যাত্রী চলাচলের উদ্বোধন করবেন।

জানা গেছে, প্রতিদিন বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে ট্রেনটি সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে রংপুর পৌঁছাবে। আর সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে রংপুর থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে পার্বতীপুর পৌঁছাবে।

চলাচলকারী ট্রেনটির কর্মদক্ষতা সন্তোষজনক হলে এবং পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর, পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া এবং কাউনিয়া থেকে কুড়িগ্রাম রুটেও চলাচল করা হবে বলে জানা গেছে। 

রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চীন থেকে ২০১৩ সালে ৬৪৫ কোটি টাকা ব্যায়ে ২০টি ডেমু ট্রেন আনা হয়। এক ধরনের সফটওয়্যারের মাধ্যমে এসব ট্রেন পরিচালিত হতো। এসব ট্রেনের ২০ বছর মেয়াদ ধরা হলেও আমদানির মাত্র ৪-৫ বছরের মধ্যে এগুলো বিকল হতে শুরু করে। মাত্র ৯ বছরের মাথায় ২০টি ট্রেনই বিকল হয়ে পড়ে।

জানা গেছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর অচল এক সেট ডেমু ট্রেন দেশীয় প্রকৌশলীদের প্রচেষ্টায় সচল হওয়ার পর পরীক্ষামূলক ট্রায়াল দেওয়া হয়। এরপর বাণিজ্যিকভাবে চলাচল করার জন্য পার্বতীপুর রেলওয়ে ইনচার্জ (কেলোকা) প্রকৌশলী কাফিউল ইসলামের কাছে হন্তান্তর করা হয়। এরপর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডেমু ট্রেন পুনরায় যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা ও বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এই ডেমু ট্রেনগুলো সচল করেন। আসাদুজ্জামান ডেমু ট্রেন নিয়ে কাজ শুরুর আড়াই মাসের মধ্যে কী ধরনের প্রযুক্তিতে এগুলো চালাতে হবে, তা বের করেন। ব্যয়বহুল মডিউলের বদলে বসানো হয় মাত্র দুটি কন্ট্রোলার। আর তা দিয়েই প্রথম একটি ডেমু ট্রেন সচল করা হয়।

উদ্দেশ্য ছিল ওইসব ট্রেনের মাধ্যমে কাছাকাছি দূরত্বে বেশি করে যাত্রী পরিবহন করা। চীনের তানসন ইন্টারন্যাশনাল ও ডানিয়াল টেকনিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ট্রেনগুলোর নির্মাতা। কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত ওই ট্রেনগুলো বিশেষ সফটওয়্যার দিয়ে পরিচালিত। এ প্রযুক্তি সহায়তা ডেমু ট্রেন সরবরাহকারী চীনের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে কখনও দেয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বল্প সময়ে ডেমু ট্রেনগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। স্বল্প দূরত্বের জন্য আনা হলেও দীর্ঘ দূরত্বেও চালানো হয়েছে এগুলো। মেরামতের অভাবে ট্রেনগুলো বিকল হয়ে যায়। আবার এগুলো জেলার বিভিন্ন রুটে চলাচল করলে যাত্রীসাধারণ ট্রেন ভ্রমণে সুবিধা পাবে।

পার্বতীপুর রেলওয়ে ইনচার্জ (কেলোকা) প্রকৌশলী কাফিউল ইসলাম বলেন, পার্বতীপুরের লোকোসেডে অকেজো অবস্থায় থাকা ২টি ডেমু ট্রেন গত বছরের ২৪ মার্চ মেরামতের জন্য ওয়ার্কশপে হস্তান্তর করা হয়। ঢাকা থেকে আসা প্রকৌশলী আসাদুজ্জানের নেতৃত্বে একদল প্রকৌশলী গত বছরের ২ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করেন। ইতিমধ্যে একসেট ডেমু ট্রেন মেরামত সম্পন্ন করে ২৯ বার ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রী লোড ছাড়া ২৭ বার ও যাত্রী লোড নিয়ে ২ বার পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট রেলপথে চালানো হয়েছে। সফলভাবেই এসব ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। সচল ডেমু ট্রেনটি পার্বতীপুর লেকেমেটিভ কর্তৃপক্ষের কাছে পুনরায় হস্তান্তর করা হয়।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়