ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সেবাপ্রার্থীদের মুখোমুখি ভূমি সচিব, দিলেন নানা সমাধান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ২১:৪৬, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২
সেবাপ্রার্থীদের মুখোমুখি ভূমি সচিব, দিলেন নানা সমাধান

ভূমিসেবাপ্রার্থীদের মুখোমুখি হয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান। জনগণের বিভিন্ন প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দেওয়ার পাশাপাশি একাধিক সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধানও দিয়েছেন তিনি।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব তথা দেশের শীর্ষ ভূমি কর্মকর্তার প্রথমবারের মতো নাগরিকদের সঙ্গে এমন উন্মুক্ত ফোরামে সরাসরি অংশগ্রহণ সরকারি নাগরিক সেবায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন সেবাপ্রার্থীরা।  

বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে প্রায় সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ভূমি সচিব মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ (www.facebook.com/minland.gov.bd) থেকে ‘মিট দ্য সেক্রেটারি’ শীর্ষক ফেসবুক লাইভে ভূমিসেবাপ্রত্যাশীদের মুখোমুখি হন।

দর্শক-শ্রোতারা কমেন্ট/চ্যাটের মাধ্যমে ভূমি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশ্ন করেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২ হাজারের বেশি বিভিন্ন ধরনের ভূমি সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন করা হয়েছে লাইভে।

নাগরিক ভূমিসেবা আরও স্মার্ট করে মাল্টি-চ্যানেলভিত্তিক নাগরিক সেবার (কাস্টমার সার্ভিস) ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ফেসবুক লাইভ এসব বহুমুখী উদ্যোগের অন্যতম অংশ। পরবর্তীতে ভূমিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং দক্ষ ভূমি কর্মকর্তারা পর্যায়ক্রমে মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক থেকে নিয়মিত লাইভে অংশ নিয়ে নাগরিকদের ভূমি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর দেবেন বলে জানা গেছে।

প্রশ্নোত্তর পর্বের আগে সচিব ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনার ব্যাপারে সংক্ষিপ্তভাবে লাইভ ভিউয়ারদের জানান।

সার্ভেয়ার নিয়োগ নিয়ে জটিলতা দূর কবে হবে, ফেসবুক লাইভে হাসান মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘সার্ভেয়ারদের নিয়োগ নিয়ে জটিলতা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।’

মোহাম্মেদ বাবর নামক এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে সচিব জানান, জমির ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ হয় জমির ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণির ওপর। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, অন্য কোনো শ্রেণির জমির ওপর আবাসিক বাড়ি তৈরি করলে, উক্ত ভূমির এলডি ট্যাক্স আবাসিক শ্রেণিতেই গ্রহণ করা হয়, কাগজে-কলমে যে শ্রেণি আছে, সেই অনুযায়ী নয়। জেলা প্রশাসকের কাছে এর ক্ষমতা দেওয়া আছে। সচিব সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে জানান, নামজারি করার ক্ষেত্রে দলিলের সনের ওপর কোনো বিধিনিষেধ নেই। আগের যেকোনো তারিখে করা দলিলের ভিত্তিতে নামজারির আবেদন করা যাবে।

মোহাম্মদ রুহুল আমিনের সিএস মৌজা ম্যাপ গ্রহণ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, land.gov.bd পোর্টালে আবেদন করে কিংবা ১৬১২২ নম্বরে কল করে ডাক বিভাগের মাধ্যমে ঘরে বসেই মৌজা ম্যাপের স্ক্যান কপি পাওয়া যাবে।

ম্যাপ সম্পর্কিত অপর এক প্রশ্নকর্তার জিজ্ঞাসার পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি সচিব জানান, ম্যাপ ডিজিটাইজেশনের কাজ চলছে। আগামী মার্চ মাসে ২০ হাজার ডিজিটাইজ মৌজা ম্যাপ অনলাইনে আপলোড করে দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সব ম্যাপ আপলোড করা হবে। তখন ফি’র বিনিময়ে এই ম্যাপ পাওয়া যাবে।

কুয়েত প্রবাসী মো. ফারুক ভূমি অফিসের কর্মরত ব্যক্তিকে টাকা দিয়েও খতিয়ান সংশোধনে ভূমি অফিসের হয়রানির অভিযোগ জানান। এর জবাবে সচিব বলেন, ভূমি অফিসের কোনো গণকর্মচারীর সঙ্গে কোনো ধরনের সেবার জন্য আর্থিক লেনদেন করা যাবে না। অনলাইনে নিজে কিংবা নিকট আত্মীয়স্বজন (অথবা ডিজিটাল সার্ভিস প্রোভাইডারের) সাহায্যে আবেদন করে খুব সহজেই অনলাইনে খতিয়ান সংশোধন করার আবেদন করার যাবে। এসিল্যান্ড খুব দ্রুত সংশোধন করে দেবে। প্রয়োজনে ১৬১২২ নম্বরে কল করার পরামর্শ দেন ভূমি সচিব।

কোনো খতিয়ানে ভাই-বোনের সম্পদভিত্তিক অসামঞ্জস্যতা সংশ্লিষ্ট মো. নেওয়াজ শরীফের প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, বোনদের বঞ্চিত করে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরির শাস্তি হিসেবে খসড়াকৃত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে জেল-জরিমানার বিধান আছে। তবে, এই বিল সংসদে আইন আকারে পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত এর প্রতিকার হচ্ছে এসিল্যান্ডের কাছে রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করা। ভুয়া ওয়ারিশ সনদের ওপর হওয়া রেকর্ড সংশোধনের জন্য এসিল্যান্ডের কাছে প্রমাণসহ আবেদন করলে এসিল্যান্ড তদন্ত করে তা সংশোধন করে দেবে।

ভূমি সচিব সবাইকে ওয়ারিশ সম্পত্তি হস্তান্তরের হিসাব করার জন্য ‘উত্তরাধিকার’ অ্যাপ এবং উত্তরাধিকার সনদের জন্য 'প্রত্যয়ন' অনলাইন সার্টিফিকেট সিস্টেম ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

পাপ্পু ইসলামের পাতা ছেঁড়া এসএ খতিয়ান সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে ভূমি সচিব জানান, মাস্টারকপিহীন হাতে লেখা এসএ খতিয়ানের বেশিরভাগ নষ্ট হয়েছে। তবে, জেলা জজ আদালতের রেকর্ড রুমে খতিয়ানের একটি কপি থাকে। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসব খতিয়ান কপি করে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পেপার রিকনস্ট্রাকশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কপি করে সবার জন্য উন্মুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে শিগগিরই। 

সৌদি প্রবাসী মো. কামরুল ইসলাম এনআইডি এবং দলিলাদিতে থাকা নামে পার্থক্য থাকায় ওয়ারিশদের মধ্যে জমি বণ্টনের সমস্যার বিষয়ে জানতে চান। এ বিষয়ে সচিব বলেন, এনআইডির সঙ্গে যদি নামের কিছুটা ব্যতিক্রম থাকে বা ভুল থাকে এমন ক্ষেত্রে করণিক ভুল সংশোধন সংশ্লিষ্ট ২৯ জুলাই ২০২১ সালে জারি করা পরিপত্রে বিষয়টি গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে।

সচিব আরও জানান, কাগজপত্র ঠিক থাকলে নামপত্তনের জন্য সব ওয়ারিশদের ভূমি অফিসে আসার প্রয়োজন নেই। ওয়ারিশ কায়েম সনদ নিয়ে অনলাইনে ই-নামজারির আবেদন করলেই নামপত্তনের জন্য যথেষ্ট হবে।

নঈমুদ্দীন/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়