ঢাকা     মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

শহিদ মিনারে রং-তুলির আঁচড়ে শেষ সময়ের প্রস্তুতি

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৮:১৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
শহিদ মিনারে রং-তুলির আঁচড়ে শেষ সময়ের প্রস্তুতি

ছবি: রায়হান হোসেন

আগামীকাল একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পূর্ণ হবে এদিন। একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহর থেকে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবে পুরো জাতি।

তাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহিদ মিনারকে সাজানো হয়েছে চেতনার সাজে। আশপাশের দেয়ালগুলোতে রং-তুলির আঁচড়ে আঁকা হচ্ছে শহিদের প্রতিচ্ছবি। দেয়ালে দেয়ালে বাংলা বর্ণ, প্রভাতফেরীর গান, শহিদ মিনারের বেদিতে আঁকা হচ্ছে আলপনা।

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের চৌহদ্দীতে বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সীমানা প্রাচীর। মূলবেদিতে করা হয়েছে চুনকাম। শহিদ মিনারের পূর্ব দিকে পুলিশ কন্ট্রোল রুম। শহিদ মিনারে লাগানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন লাল গোলাকার বৃত্ত। নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য থাকছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

একুশে ফেব্রুয়ারির এক দিন আগেই শহিদ মিনার প্রাঙ্গণের পরিবেশ বদলে গেছে। চারপাশে শুধু নিরাপত্তা আর সাজ সাজ৷ ভাব। শহিদ মিনারের এই সাজসজ্জার কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কেউ আলপনা এঁকেছেন, কেউ দেয়ালিকা, আর কেউ-বা বিভিন্ন আঁকাআঁকিতে সাজিয়ে তুলেছেন আশপাশের রাস্তাগুলো। আশপাশের সব দেয়ালে ছবি ও বাণীতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভাষা আর দেশের কথা।

শহিদ মিনার এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরেছেন। সেনাবাহিনী, র‍্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি আজ থেকেই লক্ষ্য করা গেছে। গত দুই দিন ধরে দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া কাউকে শহিদ মিনার এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ২১শে ফেব্রুয়ারির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ১২টার পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী প্রথমে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। তারা বিদায় নেওয়ার পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

এদিকে, দিবসটি ঘিরে সাইবার নজরদারি থাকবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহিদ দিবসে সুনির্দিষ্ট কোনও হুমকি নেই। তবে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারসহ সারাদেশের নিরাপত্তা ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সর্বোচ্চ নজরদারি থাকবে।

এদিকে, মহান একুশে ফেব্রুয়ারির প্রস্তুতি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। আশা করছি, যথাসময়ে আমরা কার্যক্রম শেষ করতে পারব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও একুশে উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, একুশ উদযাপন আমাদের রাষ্ট্রীয় আচার ও ঐতিহ্য রক্ষার বিষয়। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রক্টরিয়াল টিম টহল দেবে। তাছাড়া ঢাবির বিএনসিসি ও স্কাউটের স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন। পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় থাকবে।

শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচি

রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। এদিন রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের কর্মসূচি শুরু হবে। এছাড়াও কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহিদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানানো হবে। শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।

একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। এদিন দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।

দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরানখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষাশহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মিশনসমূহ শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ, বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন বিষয়ক আলোচনা সভা, পুস্তক ও চিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করবে যেখানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং বাঙালি অভিবাসীদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে গণযোগাযোগ অধিদপ্তর ঢাকা মহানগরীতে ট্রাকের মাধ্যমে রাজপথে ভ্রাম্যমাণ সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং নৌযানের সাহায্যে ঢাকা শহর সংলগ্ন নৌপথে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজনসহ জেলা-উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর তিন ধরনের পোস্টার মুদ্রণ করবে যার মধ্যে প্রথমটি হবে সর্বজনীন, দ্বিতীয়টি স্কুল-কলেজের শিশু-কিশোরদের জন্য এবং তৃতীয়টি বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ ও বাংলাদেশে অবস্থিত বৈদেশিক দূতাবাসসমূহে প্রচারের জন্য।

এছাড়াও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়ক-দ্বীপসমূহ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাজনক স্থানগুলোতে বাংলাসহ অন্যান্য ভাষার বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হবে। একুশের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং ভাষা শহিদদের সঠিক নাম উচ্চারণ, শহিদ দিবসের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা, শহিদ মিনারের মর্যাদা সমুন্নত রাখা, সুশৃঙ্খলভাবে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ইত্যাদি জনসচেতনতা মূলক বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ প্রয়োজনীয় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সংবাদপত্রসমূহে ক্রোড়পত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের বিষয়টি বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়