ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফোরামের সমন্বিত আন্দোলন চলবে

একপক্ষ তালা ভেঙে সমবায় সমিতির অফিস দখল করেছে: বাদিউল কবির

বিশেষ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ২৫ জুন ২০২৫  
একপক্ষ তালা ভেঙে সমবায় সমিতির অফিস দখল করেছে: বাদিউল কবির

সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একপক্ষ আইন অমান্য করে তালা ভেঙে সমবায় সমিতির অফিস দখল করেছে বলে অভিযোগ করেছেন কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের অপর পক্ষের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর। সচিবালয়ে সমিতির ক্যান্টিন নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনার পরও সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি আদায়ের আন্দোলন ব্যাহত হবে না বলেও জানান তিনি।

বুধবার (২৫ জুন) সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

কর্মচারী ঐক্য ফোরামের অন্যতম কো-চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘একপক্ষ আইন অমান্য করে তালা ভেঙে সমবায় সমিতির অফিস দখল করেছে। এ নিয়ে কয়েকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আমাদের চলমান নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম থেমে যাবে না।’’

তিনি বলেন, ‘‘এক পক্ষ স্বাভাবিক পন্থায় দায়িত্ব গ্রহণ না করে, তারা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়ে সচিবালয়ে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় ও ভাতৃত্বপূর্ণ কর্মপরিবেশ, সেই ঐতিহ্য নষ্ট করেছেন।’’

সমবায় সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালনা কমিটির বিষয়ে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন জানিয়ে বাদিউল কবীর বলেন, ‘‘তারা উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেখানে অবস্থান করেছেন। আমি দুপক্ষকেই সংযত হতে বলি। আমার পক্ষে যারা ছিলেন তারা আমার অনুরোধ রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। তাদেরও অনেকে আমার কথা অনুসরণ করে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেটা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এটি অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।’’

এ সময় সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘‘যারা এখন সমবায় সমিতির দখল নিয়েছেন আমরা তাদের আদালতের রায়ের কপি দেই। কিন্তু তারা সেই কপি গ্রহণ করেননি। এরপর আমরা বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে জানাই। বিষয়টি সমাধান করে দেওয়ার জন্য সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনের নেতাদেরও অবহিত করি।’’

সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, ‘‘আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের কমিটির মেয়াদ থাকলেও গত ১৯ জুন সমিতির কার্যালয়ে তালা লাগায় একটি পক্ষ। এরপর দায়িত্ব হস্তান্তর ছাড়াই ক্যানটিন পরিচালনা করে তারা। এ বিষয়ে আমরা ১৯ জুন শাহবাগ থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’’

এর আগে মঙ্গলবার রাতে সচিবালয়ে সমবায় স‌মি‌তির ক্যান্টিনের নিয়ন্ত্রণ নি‌য়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত প‌রিষ‌দের দুই গ্রুপ সংঘ‌র্ষে জ‌ড়ায়। রাত সাড়ে আটটার দি‌কে এই সংঘ‌র্ষের ঘটনা ঘ‌টে। এ‌তে কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল ইসলামসহ পাঁচজন আহত হ‌য়ে‌ছেন। এ ঘটনায় নুরুল ইসলাম গ্রুপ বাদিউল গ্রুপকে, আবার বাদিউল গ্রুপ নুরুল ইসলাম গ্রুপকে দায়ী করছেন।

নুরুল ইসলাম গ্রুপের মহাসচিব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম অভিযোগ করেন, ‘‘মঙ্গলবার বিকেলে সমবায় সমিতির আগের কমিটি আদালতের রায়ের বিষয়টি আমাদের জানায়। আমরা বলেছি, এটি তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সমবায় বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের জানাক। তারা ক্যান্টিনের কার্যক্রম বন্ধ করতে বললে আমরা বন্ধ করে দেব। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে যখন ক্যা‌ন্টি‌নের বাজার এসেছিল, ট্রাক থেকে ওএমএস-এর পণ্য নামানো হচ্ছিল, তখন বাদিউলরা আমাদের ওপর হামলা করে। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দোসররাও ছিল। তারা ৩০ থেকে ৪০ জন মিলে আমাদের ওপর রড, লাঠিসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। আমাদের সভাপতি নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমিও আহত হয়েছি।’’

চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন বানচাল ও সমবায় সমিতির আর্থিক দুর্নীতি ঢাকতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে জা‌নি‌য়ে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ব‌লেন তি‌নি।

অন‌্যদি‌কে নুরুল ইসলাম গ্রু‌পের অ‌ভি‌যোগকে মিথ‌্যা ও উ‌দ্দেশ‌্যপ্রণো‌দিত উ‌ল্লেখ ক‌রে বা‌দিউল কবীর গ্রু‌পের মহাস‌চিব নিজাম উ‌দ্দিন আহ‌মেদ ব‌লেন, ‘‘গত দুই দিন ধ‌রে নুরুল ইসলাম গ্রু‌পের লোকজন স‌চিবাল‌য়ের উক্ত ক‌্যা‌ন্টিন দখ‌লে রাখার জন‌্য লা‌টি‌সোটা নি‌য়ে অবস্থান করছিল। আদাল‌তের আ‌দেশ অনুযায়ী ক‌্যা‌ন্টিন প‌রিচালনার বিষ‌য়ে মঙ্গলবার রা‌তে স‌মি‌তির লোকজন আমা‌দের সভাপ‌তিসহ নেতা‌দের ডা‌কেন। এ সময় ওই গ্রু‌পের নুরুল ইসলামসহ অন‌্যরা ছি‌লেন। এক কথায় দুকথায় হঠাৎ নুরুল ইসলাম আমাদের বাবু ভাই‌কে চেয়ার ছু‌ড়ে মা‌রেন। এসময় প‌রি‌স্থি‌তি উত্তপ্ত হ‌য়ে উঠ‌লে হাতাহা‌তির মতো ভুল বোঝাবু‌ঝি ও অনাকাঙ্খিত প‌রি‌স্থি‌তি সৃ‌ষ্টি হয়।’’

‘‘নুরুল ইসলাম পু‌রো ঘটনার জন‌্য দায়ী। তি‌নি য‌দি চেয়ার ছু‌ড়ে না মার‌তেন তাহ‌লে কো‌নো ঘটনাই ঘটতো না,’’ বলেন তিনি।

এদিকে সংঘর্ষের পর বুধবার স‌চিবাল‌য়ে ক‌্যা‌ন্টিনসহ দোকানপাট বন্ধ র‌য়ে‌ছে। এবং ক‌্যা‌ন্টিন দখ‌লে কর্মচারী‌দের দুই গ্রু‌প এখনও অনড় অবস্থা‌নে র‌য়ে‌ছেন। এ নি‌য়ে ‌যে কো‌নো সময় আরো বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘট‌তে পা‌রে ব‌লে স‌চিবাল‌য়ে আতঙ্ক বিরাজ কর‌ছে।

 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়