ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আমাদের আইন আছে, কিন্তু পালনের বাধ্যবাধকতা নেই: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪১, ১৮ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১৮:৫১, ১৮ আগস্ট ২০২৫
আমাদের আইন আছে, কিন্তু পালনের বাধ্যবাধকতা নেই: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেছেন, “দেশে আইন থাকলেও তা পালনের বাধ্যবাধকতা নেই। এটাই সরকারের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।”

সোমবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক কর্মশালায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। কর্মশালার আয়োজক স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ। সহযোগিতা করে বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ)। ‘মাতৃদুগ্ধপানকে অগ্রাধিকার দিন, টেকসই সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলুন’ এ প্রতিপাদ্যে এবারের মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে।

নুরজাহান বেগম বলেন, “আমাদের সরকারের দিক থেকে আমি মনে করি, সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো অনেকগুলো আইন আছে। যেমন সিগারেটের আইন, কঠিনভাবেই আছে। কিন্তু এ আইনের তোয়াক্কা কি কেউ করে? আমার নাকের ডগা দিয়েই তো সিগারেট খাচ্ছে। আমার ঘরেই তো সিগারেট খাচ্ছে। হাসপাতালেই তো সিগারেট খাচ্ছে। কে কাকে ধরছে? অদ্ভুত একটা দেশ আমাদের। আমাদের আইন আছে, কিন্তু আইন পালনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।”

কর্মশালার উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা নবজাতকের যত্নে পিতৃত্বকালীন ছুটির প্রস্তাব করেন। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, “পিতৃত্বকালীন ছুটি থাকলে মায়ের কতটা সুবিধা হবে, সেটা জানা নেই। পিতৃত্বকালীন ছুটি এখানে দরকার আছে। যদি দিতেই হয়, তাহলে সেখানে শর্ত থাকা উচিত, পিতা কত ঘণ্টা বাচ্চার সেবা করেছেন, মায়ের সেবা করেছেন। সব লিখিতভাবে দিতে পারলে তিনি এই ছুটির বিষয়ে রাজি আছেন। না হলে নেই।”

একজন মা যখন মা হতে যান-এ প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই পরিচর্যা শুরু হয়ে যায় বলে উল্লেখ করেন নুরজাহান বেগম। তিনি বলেন, “শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য আগে থেকেই মাকে প্রস্তুতি নিতে হয়। কিন্তু এই জ্ঞান একজন মাকে কে দেবেন? আবার দেশে হাসপাতালের ক্ষমতা যেখানে আড়াই হাজার, সেখানে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। কাজেই চিকিৎসকদেরও দোষ দেওয়া যায় না।”

নবজাতককে মায়ের দুধ নিশ্চিতের জন্য প্রচার প্রয়োজন, সে জন্য দেশের গণমাধ্যমগুলোকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “কীভাবে প্রচার চালালে মানুষ সচেতন হয়, সেটা গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাবনায় রাখা প্রয়োজন। মসজিদ ও মন্দিরভিত্তিক প্রচারও কাজে আসতে পারে।”

কর্মশালায় বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন বিবিএফের চেয়ারপারসন অধ্যাপক এস কে রায়। তিনি বলেন, “জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের শালদুধ নিশ্চিত করা গেলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫১ হাজার শিশুমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।”

দেশে শিশুর মাতৃদুগ্ধপানের বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় তুলে ধরেন বিবিএফের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সেক্রেটারি জেনেরাল অধ্যাপক সারিয়া তাসনিম। আলোচনায় তিনি জানান, ২০১৭ সালের পর ২০২২ সাল পর্যন্ত শিশুদের মায়ের দুধপানের হার প্রায় ৮ শতাংশ কমে গেছে। ক্রমহ্রাসমান এই হার নিয়ন্ত্রণে সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বিকল্প নেই।

শিশুর মাতৃদুগ্ধ নিশ্চিতের বিষয়টি সামাজিকভাবে উত্থাপনের আহ্বান জানান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, “মায়ের দুধ নিশ্চিতের ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে গিয়েছি। এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে আমাদের মানসিক দৃঢ়তার অভাব রয়েছে। সব শিশু যাতে মায়ের দুধ পায়, সেটা সামাজিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।”

কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সারোয়ার বারী। তিনি বলেন, “আমরা যদি সত্যিকারভাবে একটি মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই, তাহলে অবশ্যই শিশুর জন্য মায়ের দুধ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, মায়ের দুধ শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে উপকারী। কিন্তু শিশুর মায়ের দুধপানের ক্রমহ্রাসমান হার উদ্বেগজনক।”

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের যুগ্ম সচিব সৈয়দা নওশীন পর্ণিনী। ধন্যবাদ জানান একই বিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম আহসানুল আজিজ।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়